বরই চাষ করে সফলতার মুখ দেখেন আবদুল করিম

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর | 2023-08-31 17:16:45

ইউটিউবে কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের অনুপ্রেরণামূলক প্রতিবেদন দেখে লক্ষ্মীপুরে কৃষক আবদুল করিম বরই চাষ শুরু করেছেন। চারা রোপনের ১১ মাসেই তার বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি প্রায় ৫০ হাজার টাকার বরই বিক্রিও করেছেন। তবে বরই চাষে তাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন জামাল উদ্দিন নামে এক গ্রাম্য চিকিৎসক।

এদিকে বাগানটিতে বরই কিনতে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ক্রেতারা। পরে ফেসবুকে জুড়ে দেওয়া ছবি দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হয়ে ছুটে যাচ্ছেন বরই কিনতে বাগানে। এতে কৃষক আবদুল করিমের মুখে হাসি ফুটে উঠে এবং ক্রেতাদের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধু হয়ে যান।


জানা গেছে, গেল ফাল্গুনে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের সূতার গোপটার ইজতেমা মাঠ এলাকা ৬৬ শতাংশ জমিতে তিনি বরই গাছের চারা রোপন করেন। খুলনা থেকে তিনি কুরিয়ারযোগে চারাগাছগুলো ক্রয় করে আনেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাকে চাষাবাদে সহযোগীতা করেছেন বলে জানা গেছে।

বরই চাষী আবদুল করিম সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের শহীদপুর গ্রামের মৃত রুহুল আমিনের ছেলে। তার সংসারে স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ে ফাইজা আক্তারকে এবার স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছেন।


আবদুল করিমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বাগানে প্রতিদিন ৫০০ টাকা হারে ৩ জন শ্রমিক কাজ করেন। মাঝে মাঝে ২ জন নারী শ্রমিককেও নিয়োগ দেওয়া হয়। বার্ষিক চুক্তিতে জমিটি লিজ নেওয়া হয়েছে। বাগানটিতে কাষ্মেরী ও বল সুন্দরী বরই উৎপাদন করা হয়েছে। গাছ থেকেই পাকা বরই সংগ্রহ করে বিক্রি করা হয়। এতে বরইগুলো স্বাদও বেশি হচ্ছে।

আবদুল করিম বলেন, প্রায় ১৫ বছর আমি কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। মৌসুম বেদে সবজি চাষই আমার একমাত্র কাজ ছিল। এবারও টমেটো চাষ করেছি। আল্লাহর রহমতে টমেটোতে লাভবান হয়েছি। কিন্তু এর আগে বিভিন্ন সবজি চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এতে জামাল উদ্দিন নামে একজন গ্রাম্য চিকিৎসক আমাকে বরই চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। এরআগে ইউটিউব দেখে বরই চাষের ব্যাপারে দিক নির্দেশনামূলক তথ্য জানতে বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, জামাল উদ্দিনের কথামত আমি ইউটিউবে শাইখ সিরাজের বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখা শুরু করে। শাইখ সিরাজের প্রতিবেদনগুলো দেখেই আল করে আমি জমি তৈরি করি। গেল ফাল্গুনের ২০ তারিখে ১ ফুট আকারে বরই চারা পুরো জমিতে রোপন করি। ৯ মাসের মাথায় বরইগাছগুলোতে মাশআল্লাহ ভালো ফলন দিয়েছে। গাছ থেকে পাকা বরই সংগ্রহ করেই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। অনেকেই বাগানে এসে বরই কিনে নিয়ে যান। এখন আমার এক একটি বরই গাছ ১০-১২ ফুট লম্বা।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল খালেক বলেন, আমাদের ভবানীগঞ্জ সবজি চাষে পুরো জেলাতেই সুনাম রয়েছে। এখানে যে বরই চাষ হবে তা কেউই কখনো কল্পনা করেনি। আবদুল করিমের বরই বাগানে ভালোই উৎপাদন হয়েছে। আশা করি এ বছরই তিনি তার খরচ উঠাতে পারবেন।

বরই কিনতে যাওয়া চাকরিজীবী মো. হাসান আলী বলেন, এ ধরণের একক বরই বাগান লক্ষ্মীপুরে আর কোথাও নজরে পড়েনি। বরইগুলোও ক্ষেতে দারুণ মিষ্টি। ঝুঁকি নিয়েই আবদুল করিম বরই বাগানে সফলতা দেখছেন। তার মতো অন্যরাও যদি ঝুঁকি নেয় তাহলে মেঘনা উপকূলীয় এ অঞ্চল কৃষিক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যাবে।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে প্রায় ৯৬ হেক্টর জমিতে বরই চাষ হয়। এতে সাড়ে ৯০০ মেট্টিক টন বরই উৎপাদন হয়। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ৫-৬ হেক্টর জমিতে বরই চাষ করা হয়। তবে অল্প সময়ে পর্যাপ্ত বরই উৎপাদন হয় বাগানগুলোতে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বলেন, আবদুল করিম প্রায় ১১ মাস আগে বরই চাষ শুরু করেন। তার বাগানে পর্যাপ্ত বরই উৎপাদন হয়েছে। তিনি এ বাগান থেকে ৬-৭ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে আমরা আশবাদি। আরও ২-৩টি বাগান রয়েছে। কৃষকরা এখন ফল চাষে এগিয়ে আসছে।

তিনি আরও বলেন, এ জেলায় কাষ্মেরি, বাউল ও বল সুন্দরী বরই উৎপাদন হয়। কিভাবে চারা উৎপাদন করে তা সম্প্রসারণ করতে হয় সে ব্যাপারে আমরা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়ার জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কাজ করছেন। বরই চাষে প্রচুর খরচ রয়েছে। যাদের অর্থের সমস্যা আছে, তাদেরকে ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো বলেছি। আগ্রহী কৃষকদেরকে সকল ধরণের সহযোগীতা আমাদের পক্ষ থেকে করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর