টাকা চুরি সন্দেহে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-08-30 01:58:22

রংপুরের কাউনিয়ায় টাকা চুরি সন্দেহে শামীম হোসেন (১০) ও রাসেল (৯) নামে দুই শিশুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে এক ইউপি সদস্যসহ তার দুই সহযোগী। এ ঘটনায় গুরুতর আহত শিশু রাসেলকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাউনিয়া থানার ওসি মাসুমুর রহমান। এর আগে গতকাল বুধবার উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের রাজিব মোল্লাটারী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নির্যাতনের শিকার শিশু শামীম হোসেন উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের রাজিব মোল্লাটারী গ্রামের সামসুল হকের ছেলে ও রাসেল একই ইউনিয়নের বাজেমজকুর গ্রামের মন্তাজ আলীর ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাজিব মোল্লাটারী গ্রামের আকরাম হোসেনের ঘরের সিঁধ কেটে ৭০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গতকাল বুধবার একই এলাকার শিশু শামীম হোসেন ও রাসেলকে বাড়ি থেকে ডেকে আনে আকরাম ও তার ভাই ইয়াকুব আলী। এরপর ইউপি সদস্য ইউনুস আলী দুই শিশুকে ঘরের মধ্যে হাত-পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। বিষয়টি জানাজানি হলে ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা চায় স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ইউপি সদস্য ইউনুস আলীর বাড়ি থেকে দুই শিশুকে উদ্ধার করে পরিবারের জিম্মায় দেয়।

নির্যাতনের শিকার শিশু শামীম বলে, আমাকে জোরপূর্বক মেম্বারের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেঁধে গাছের ডাল দিয়ে মারপিট করে ইউসুফ মেম্বার। তার পা ধরে বলেছিলাম আমি টাকা চুরি করি নাই। আমার কোন কথাই শুনেনি। কোমড় থেকে পা পর্যন্ত গাছের ডাল দিয়ে মারপিট করেছে।

শামীমের মা সোহাগী বেগম জানান, সংসারে অভাবের কারণে শিশু শামীম একটি পিকআপে সহকারী হিসেবে কাজ করে। চারদিন পর মঙ্গলবার রাতে নাওগাঁ থেকে বাড়িতে ফিরে খাওয়া শেষে গাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে । বুধবার সকালে লোকমুখে জানতে পারে, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইউনুস আলী বাড়ীতে তার ছেলের হাত পা বেঁধে পেটাচ্ছে। তার নিরাপরাধ ছেলেকে যারা এভাবে নির্যাতন করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।

শিশুটির মামা রাজু মিয়া বলেন, শামীমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করতে গেলে ইউনুস মেম্বারের লোকজন তাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসে সে।

নির্যাতনের শিকার আরেক শিশু রাসেলের বাবা মন্তাজ আলী বলেন, সকালে কাজে বেরিয়ে গেছিলাম। বিকেলে বাড়িতে ফিরে জানতে পারি দুটি মোটরসাইকেলে করে ৪/৫ জন লোক এসে ছেলেকে তুলে নিয়ে গেছে। পরে ইউনুস মেম্বারের বাড়িতে আটকে রেখে বেধরক মারধর করে।

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ওমর ফারুক জানান, শিশু রাসেলের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। তার দুই উরুতে চারটা সুঁই ফোটানো হয়েছে এবং বাম হাঁটুর নিচে ফোলা আছে। এছাড়া ডান পায়ের গোড়ালী ফুলে গেছে। তার এক্স-রে করার জন্য বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ইউনুস আলী বলেন, আমি মারধর করিনি। আকরাম ও ইয়াকুবের বাড়িতে শিশু দুইজনকে মারধর করেছে।

মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে আকরাম হোসেনে বলেন, প্রথমে শামীমকে নিয়ে আসা হয়। পরে তার কথামত রাসেলকে আনা হয়। তাদেরকে মেম্বারের বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মেম্বার চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারের জন্য শিশু দুইজনকে মারপিট করেছে। এসময় আমি শিশু দুটিকে সামান্য চর থাপ্পর মেরেছি।

কাউনিয়া থানার ওসি মাসুমুর রহমান বলেন, ৯৯৯ এ খবর পেয়ে টেপামধুপুরের ইউপি সদস্য ইউনুস আলীর বাড়ি থেকে শিশু দুটিকে উদ্ধার করে পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।

রংপুর জেলা পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। এ ব্যাপারে কাউনিয়া থানার ওসিকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর