রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণের রেকর্ড

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-24 06:08:06

রাজশাহীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। সব শেষ বৃহস্পতিবার উত্তরের এ জেলায় করোনা সংক্রমণের হার পাওয়া গেছে ৭৫ শতাংশ। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রমে জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্যবিভাগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ল্যাবে রাজশাহীর ৩৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ২৮৭ জনের নমুনায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে। ল্যাবটিতে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার হয়েছে ৭৮ দশমিক ২০ শতাংশ।

এ দিন রামেক হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৯৪টি। এতে ৫৮ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এখানে সংক্রমণের হার ৬১ দশমিক ৭০ শতাংশ। দুটি ল্যাবে মোট ৪৬১ নমুনার মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৪৫ জনের। ফলে গড় সংক্রমণের হার ৭৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। সংক্রমণের এই হার রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। রাজশাহীতে এত বেশি সংক্রমণের হার অতীতে আর কখনই হয়নি। সারাদেশের মধ্যে বর্তমানে রাজশাহীতেই সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের হার বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার। তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর মানুষ টিকা পেয়ে যাওয়ায় মৃত্যুহার কম, কিন্তু সংক্রমণের হার সারাদেশের চেয়ে বেশি।’


রাজশাহীর সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্যমতে, চলতি মাসের প্রথম দিনও রাজশাহীতে সংক্রমণের হার হয়েছিল মাত্র ২ দশমিক ৮২ শতাংশ। ১০ তারিখের পর সংক্রমণ হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। ১৬ জানুয়ারি সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশ। ২২ জানুয়ারি সংক্রমণের হার ৪০ শতাংশ। পরদিনই সংক্রমণের হার হয় ৫৯ শতাংশ। ২৫ জানুয়ারি সংক্রমণের হার ছিল ৬৭ শতাংশ। ২৭ জানুয়ারি সংক্রমণের হার বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৭৫ শতাংশে। রাজশাহীতে বর্তমানে করোনা পজিটিভ থাকা ২ হাজার ১৩১ জনের মধ্যে ১ হাজার ৯৬৪ জনই শহরের বাসিন্দা। জেলার ৯ উপজেলায় রোগী মাত্র ১৬৪ জন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘গ্রামের মানুষ করোনা পরীক্ষা করাচ্ছে না। সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশি ধরে নিয়েই তারা বসে থাকছে। শহরের মানুষ পরীক্ষা করাচ্ছে বলে পজিটিভ হচ্ছে। ৭৫ শতাংশ সংক্রমণ মানে কি? মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ করোনামুক্ত। তার অর্থ হল এখন রাজশাহীর ঘরে ঘরে করোনা রোগী। যার পরীক্ষা করানো হবে, তারই রিপোর্ট পজিটিভ আসবে।’

রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মো. ফারুক বলেন, ‘করোনার ডেলটা ধরনের সময়ও কিন্তু রাজশাহীতে সংক্রমণ বেড়েছিল, তবে এতটা নয়। সে সময় আবার মৃত্যুহার ছিল অনেক বেশি। এই সময়ের মধ্যে আমরা টিকা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পেরেছি। ফলে মৃত্যুহার কমেছে। করোনার এমন ঊর্দ্ধমুখী সংক্রমণেও আমরা টিকা কার্যক্রমকেই জোর দিচ্ছি।’


রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণের হার ভয়াবহ হলেও হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম। শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে ৪৯ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের একজনের বাড়ি পাবনা, অন্যজনের কুষ্টিয়া। পাবনার রোগী করোনার উপসর্গে ভুগছিলেন। তবে কুষ্টিয়ার রোগী ছিলেন করোনা পজিটিভ।

হাসপাতালটিতে ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীর কোন রোগীর মৃত্যু হয়নি। রাজশাহী জেলায় প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের পর এ পর্যন্ত করোনা পজিটিভ অবস্থায় ৩২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় দু’বছরে নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ৮৮২ জন রোগী। এদের মধ্যে ২৮ হাজার ৪২৩ জন সুস্থ হয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর