এ যেন আয়নাবাজির সঙ্গেও ধোঁকাবাজি!

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-25 22:33:18

এ যেন আয়নাবাজির সঙ্গেও ধোঁকাবাজি! আয়নাবাজি সিনেমায় চেহারার মিল রেখে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বদলে আরেকজন ভাড়ায় জেল খাটতেন। ধোঁকা দিতেন প্রশাসনকে। তেমনি ঘটনা ঘটেছে বাস্তবে, তবে মূল আসামির সঙ্গে ভাড়ায় খাটা আসামির চেহারার কোনও মিল নেই। র‌্যাবের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য।

শনিবার (২৯ জানুয়ারি) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল হাসপাতাল থেকে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগকে গ্রেফতার করে।

রোববার (৩০ জানুয়ারি) র‌্যাব মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক এডিশনাল ডিআইজি মাহফুজুর রহমান।

তিনি বলেন, র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সোহাগ ওরফে বড় সোহাগের বদলে ২০১০ সালের একটি হত্যা মামলায় মাসিক ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সাজা খাটছেন নকল সোহাগ।

মাহফুজুর রহমান বলেন, আসল সোহাগ মূলত একজন ‌ভয়ংকার কিলার। হত্যার পর থেকে সে আত্মগোপনে। সে ডুপ্লিকেট কাগজপত্র তৈরি করে তার বদলে আরেকজনকে ভাড়ায় জেলে খাটাচ্ছে। আর সোহাগ একের পর এক অপরাধ করেছে। এ মামলার এক আসামির সঙ্গে অন্য জনের চেহারায় কোনও মিল নাই। এতোদিন বিষয়টি কারো নজরেও আসে নাই। র‌্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতা থাকার কারণে এটি নজরে আসে। চেহারার মিল ছাড়াই ঘটেছে আয়নাবাজির ঘটনা।

তিনি বলেন, আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর কদমতলী থানার আউটার সার্কুলার রোডে নোয়াখালী পট্টিতে হুমায়ুন কবির ওরফে টিটুকে আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা হত্যার জন্য গুলি করে। গুলি ভিকটিম টিটু-র মাথার ডান পার্শ্বে লেগে গুরুতর জখম হয়। আহতবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবার কদমতলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলায় সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ (৩৪), মামুন (৩৩), সোহাগ ওরফে ছোট সোহাগসহ (৩০) আরও ৩/৪ জনকে আসামি করা হয়।

২০১০ সালের ২২ ডিসেম্বর সোহাগ ওরফে বড় সোহাগকে গ্রেফতার করা হয়। সে ২০১৪ সালের ১৬ মে জামিনে মুক্তি পায়। জামিনে মুক্তির পর থেকেই সে পলাতক। ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর তার অনুপস্থিতিতে আদালত রায় দেয়। সোহাগ ওরফে বড় সোহাগের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেয়।

আদালতের রায় প্রকাশের পর আসল সোহাগের ফুফাতো ভাই নকল সোহাগ তথা মো. হোসেন (৩৫) ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণপূর্বক জামিন প্রার্থনা করলে আদালত জামিন না-মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদকাসক্ত হোসেন ওরফে নকল সোহাগ মাসিক ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে জেল খাটতে থাকেন।

মাহফুজুর রহমান বলেন, ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে জনৈক সাংবাদিক উল্লিখিত টিটু হত্যা মামলায় একজনের পরিবর্তে অন্যজন জেলা খাটার বিষয়টি আদালতের নজরে নিয়ে আসলে বিজ্ঞ আদালত কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চায়। প্রতিবেদনে ২০১০ সালে ধৃত আসামি সোহাগ আর বর্তমানে হাজতে থাকা নকল সোহাগের অমিলের বিষয়টি উঠে আসে। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের রিপোর্টে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়।

এই বিষয়টি নিয়ে ২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে র‌্যাব-১০ এর অপারেশন টিম ও র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা টিম কাজ করে আসছিল। এরই মধ্যে বিশেষ দায়রা আদালত ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ প্রকৃত আসামির (সোহাগ) বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

প্রকৃত সোহাগ ঘটনা প্রকাশের বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে সুকৌশলে দেশত্যাগের চেষ্টা শুরু করে। এর জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করে পাসপোর্ট তৈরি করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা সংগ্রহ করে। দেশত্যাগের ক্ষেত্রে করোনার টিকা বাধ্যতামূলক হওয়ায় গতকাল করোনার ২য় ডোজ গ্রহণ করার জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল হাসপাতালে আসলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০ সেখানে অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত প্রকৃত আসামি সোহাগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ২টি হত্যা মামলা, ২টি অস্ত্র মামলা ও ৬টি মাদক মামলাসহ সর্বমোট ১০টি মামলা রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর