‘বিনা অপরাধে ৮০ দিন ধরে আমার বাবা জেলে’

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 03:42:08

বিনা অপরাধে আমার বাবা আজ ৮০ দিন ধরে জেল হাজতে রয়েছেন। একই মামলা দুদক এবং সিআইডি বাবার বিরুদ্ধে করেছে। অথচ এর কোনও তথ্য বা প্রমাণ নেই। এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা বলে জানান বিএনএস গ্রুপ অব কোম্পানির পরিচালক নুসরাত লায়লা বুলু।

মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এম.এন.এইচ বুলুর মেয়ে।

নুসরাত লায়লা বুলু বলেন, আমার বাবা মানি লন্ডারিংয়ে যুক্ত নয়। বিনা কারণে জেল খাটছে আমার বাবা।

নুসরাত বলেন, আমার বাবার ভাই আমির হোসেন আমির ফুডের ব্যবসার জন্য তার (আমির) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নমিনি আমার বাবাকে বানিয়েছিলেন। তারা কোনো পার্টনারশিপ ব্যবসা শুরু করেননি। তার অ্যাকাউন্টে নমিনি দরকার ছিল সেখানে তাকে নমিনি বানিয়েছে। সেখানে নমিনি হিসেবে আমার বাবার কোনো স্বাক্ষরও নেই। তার ছবি আছে আর ফর্ম যতটুকু ফিলআপ করার সেটা আছে। আমির ফ্রুডসের ব্যবসায় আমার বাবা জড়িত নয়।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জাবাবে নুসরাত বলেন, এই ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই। একই তথ্য দিয়ে বারবার মামলা করা হয়েছে।

কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিবেন কি না জানতে চাইলে বুলুর মেয়ে জানান, ব্যাংক স্টেটমেন্টে বলা হয়েছে আমার বাবা সেখানে কোনোভাবেই জড়িত নয়। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব। আমার বাবা আগে বের হোক। সে বের হলে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিএনএস গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক মোকসুদুজামান বলেন, ব্যাংক থেকে নমিনির যে একটি ফর্ম থাকে সেখানে নমিনির স্বাক্ষর নেই। একই অফিসে যেহেতু বসে অফিস থেকে একটা ছবি সংগ্রহ করে নিয়েছে। সেই ছবি দিয়েই নমিনির ফর্মে ছবি দিয়ে একাউন্ট করা হয়েছে। নমিনি করে মানুষ তার ছেলে-মেয়ে বা স্ত্রীকে যেন কোনো কারণে মৃত্যু হলে তার টাকাটা পায়। এটা চক্রান্তমূলকভাবে তার ভাই করেছে।

দুদকের সঙ্গে এটা নিয়ে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে নুসরাত বলেন, এ ব্যাপারে দুদক আমাদের সঙ্গে কোনও কথা বলতে চাচ্ছে না।

এসময় লিখিত বক্তব্যে এম.এন.এইচ. বুলুর স্ত্রী হোসনে আরা নাজ বলেন, এম.এন.এইচ. বুলু গত ১৬ নভেম্বর ২০২১ থেকে জেল-হাজতে আটক রয়েছেন। আমির ফুড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের রফতানির বিপরীতে সরকারি প্রণোদনার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৫ সালের ৮ মার্চ বনানী থানায় একটি মামলায় এম.এন.এইচ. বুলুকে ১নং আসামি আমির হোসেনের ব্যাংক হিসাবের নমিনি দেখিয়ে ৩নং আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ওই ব্যাংক হিসাবের নমিনি ফর্মে এম.এন.এইচ. বুলু’র কোনও স্বাক্ষর নেই। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আমির হোসেন। যিনি এম.এন.এইচ. বুলু’র প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা অবস্থায় বুলুর অজান্তে এমন কাজ করেন।

তিনি বলেন, বিষয়টি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের দালিলিক কাগজপত্রাদি যাচাই-বাছাই করে বুলু’র নাম এজাহর থেকে বাতিল করার জন্য অবহিত পূর্বক গত ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি আমির ফুডের সাথে বুলুর কোন সম্পৃক্তা এবং ব্যাংকের তাঁর বিরুদ্ধে কোন প্রকার অভিযোগ বা দাবি দাওয়া নাই মর্মে একটি সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। পরবর্তীতে বিজ্ঞ চিফ মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রেট আদালত নং-১ এর বিচারক ওই মামলার চার্জশিট শুনানিতে বিগত ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর বুলুর সাথে মামলার কোন সম্পৃক্তা না পেয়ে অব্যাহতি প্রদান করেন।

তারপরেও একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন ২টি সংস্থা যথাক্রমে-সিআইডি ও দুদক ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট ও ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর একই বিষয়ের উপর ভিত্তি করে দু'টো মামলা করেন। যার ফলে এখন পর্যন্ত এম.এন.এইচ. বুলু জেল হাজতে রয়েছেন।

উক্ত বিষয়ে ২০২০ সালের ২০ আগস্ট এম.এন.এইচ. বুলুর নামে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পুনরায় আরেকটি সার্টিফিকেট ইস্যু করে।

গত ১৩ জানুয়ারি ২০২২ দুদক কর্তৃক দায়েরকৃত মামলায় বিজ্ঞ মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত শোন এ্যারেস্টের আবেদন খারিজের আদেশ দেন। কিন্তু গত ১৬ জানুয়ারি দুদকের পুনঃ শুনানির আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শোন এ্যারেস্টের বিষয়ে আদেশের জন্য পুনঃশুনানির দিন ধার্য করেন।

বর্তমানে এম.এন.এইচ. বুলু শারীরিকভাবে অসুস্থ। জেল হাজতে গেল বছরের ৬ ডিসেম্বর বুলুকে শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে আনা হয়েছিল। পরবর্তীতে আবারও অবস্থার অবনতি হলে গত ২২ জানুয়ারি কারা কর্তৃপক্ষ তাকে পুনরায় হাসপাতালে প্রেরণ করে চিকিৎসা শেষে জেল হাজতে পাঠান।

তিনি বলেন, একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন সংস্থাগুলো বারবার মামলা করাতে বিএনএস গ্রুপের প্রধান কার্যালয় ও এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের উপক্রম। এছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর শত শত শ্রমিকগণ প্রায় ৩ মাস যাবৎ বেতন ভাতাদি না পেয়ে পরিবার নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর