ক্লু-লেস হত্যার রহস্য উদঘাটন করল পুলিশ

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নারায়ণগঞ্জ | 2023-08-24 11:33:10

চাল ব্যবসায়ী সেজে ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করল নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। এঘটনায় গত ২৯ জানুয়ারি আরিফুর রহমান টিপু (৩০) নামে এক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। ১ ফেব্রুয়ারি আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

জেলা পুলিশ জানায়, গত ১৬ জানুয়ারি দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্বে একটি মৃতদেহ পড়ে আছে এমন সংবাদের প্রেক্ষিতে বন্দর থানার এস আই ফয়সাল আলম সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেন। স্থানীয় লোকজন মৃত ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে মৃতের পকেটে থাকা একটি মোবাইল পেয়ে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মৃত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

নিহত ব্যক্তির নাম আকাশ (২১)। সে কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার সুজানগরের মোতালেবের ছেলে এবং খন্ডকালীন ট্রাকের হেলপার ছিল।

গ্রেফতারকৃত আসামি আরিফুর রহমান টিপু কুমিল্লার বুড়িচং থানার মৃত ফিরোজ মিয়ার ছেলে। সে পেশায় খন্ডকালীন ট্রাকচালক। আকাশ তার খন্ডকালীন হেলপার ছিল।

যেভাবে গ্রেফতার হয় খুনি

জেলা পুলিশ জানায়, নিহতের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে অভিযোগ দেন (মামলা নং- ১০, তাং- ১৭/০১/২২)। বন্দর থানা পুলিশ অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেন। যেহেতু ভিকটিমের বাড়ি কুমিল্লায় এবং সে ট্রাকের হেলপার এবং মৃতদেহ নারায়ণগঞ্জে পাওয়া গেছে তাই ঘটনাটি ট্রাক ড্রাইভার/হেলপার সংক্রান্ত কোন বিষয় হবে বলে অনুমান ছিল পুলিশের। কিন্তু ঘটনার আগে পরে কোন গাড়িতে বা কোন ড্রাইভারের সাথে ভিকটিম এসেছিল, তা জানা সম্ভব হচ্ছিল না। পরবর্তীতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খ’ সার্কেলের নির্দেশনায় এবং প্রচেষ্টায় মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই ফয়সাল ট্রাক ড্রাইভারকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। কিন্তু সে পূর্বের ঠিকানায় না থাকায় এবং খন্ডকালীন ড্রাইভার হওয়ায় কেউ তার সম্পর্কে তেমন নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে পারছিল না। শুধু সন্দেহভাজন ট্রাক ড্রাইভারের নাম এবং পেশা জানা ছিল।

পরবর্তীতে ঢাকার জুরাইনের এক চালের আড়তদারের সাথে কথা বলে চালের ব্যবসায়ী সেজে টার্গেট ড্রাইভারের সাথে ট্রাক ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে কথা বললে ড্রাইভার পুলিশের ফাঁদে পা দেয়। গত ২৯ জানুয়ারি ড্রাইভার আরিফ চাল নিয়ে জুরাইনে আসলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে গ্রেফতার করা হয়।

আসামি আরিফুর রহমান টিপু (৩০) জানায়, আকাশ তার হেলপার ছিল। কিন্তু সে হত্যাকাণ্ড সংক্রান্তে অসংলগ্ন তথ্য দিতে থাকে। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাবাদের এক পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।

আসামি আরিফুর রহমান টিপু বলেন, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে সে ও হেলপার আকাশ গাঁজা সেবন শেষে ট্রাকে পুরাতন বই ও কাগজ নিয়ে ঢাকার মাতুয়াইলের উদ্দেশ্য কুমিল্লা থেকে রওনা করেন। ১৪ জানুয়ারি শুক্রবার ভোরে সিমরাইল ট্রাক স্টান্ডে পৌঁছে দুইজন একসাথে ট্রাকের মধ্যে ঘুমায়। পরবর্তীতে পার্টি মাল আনলোড করার জন্য ফোন দিলে আসামি টিপু ঘুম থেকে ওঠে ভিকটিমকে ডাকে, আকাশ ঘুম থেকে উঠতে পারবে না বলে জানায়। আসামি রেগে গিয়ে আকাশকে গালি দেয়। প্রতি উত্তরে আকাশও গালি দিলে টিপু আকাশকে ট্রাকের সিটের সাথে গলা চেপে ধরে হত্যা করে। এই অবস্থায় মৃতদেহ সিটের পেছনে ঘুমানোর জায়গাতে শুইয়ে রেখে মাতুয়াইল গিয়ে মাল আনলোড করে। তারপর জুম্মার নামাজের পূর্বে সুযোগ বুঝে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বন্দরের এলাকায় মৃতদেহ ফেলে দিয়ে চলে যায়। আসামির তথ্য মতে হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত ট্রাক উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর