চাঁদপুরের ১১টি চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে শাক-সবজির চাষ হয়েছে। নারীরাই এসব শাক-সবজি উৎপাদনে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। চাঁদপুরে মূলত শাক-সবজি, ধান, পাট, আলু, সয়াবিন, পেঁয়াজ, রসুন, সরিষা, মরিচ চাষ হয়ে থাকে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকা, পরিবহনে সুবিধা, কৃষি বিভাগ থেকে উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তি প্রদান, কৃষি উপকরণ পেতে সহজলভ্যতা, বীজ, সার ও কীটনাশক ব্যবহারে কৃষিবিদদের পরামর্শ, ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ প্রদান ইত্যাদি কারণে বরাবরই চাষাবাদের প্রতি আগ্রহ থাকে কৃষকদের।
চরাঞ্চলগুলো হল- মতলবের চরইলিয়ট, চর কাসিম, ষষ্ঠ খণ্ড বোরোচর, চাঁদপুর সদরের রাজরাজেস্বর, জাহাজমারা, লগ্নিমারা, বাঁশগাড়ি, চিড়ারচর, ফতেজংগপুর, হাইমচরের ঈশানবালা, চরগাজীপুর, মনিপুর, মধ্যচর, মাঝিরবাজার, সাহেব বাজার ও চরভৈরবির বাবুরচর ইত্যাদি।
এবার চাঁদপুরে শাক-সবজি, আলু ও ইরি-বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। চলতি মৌসুমে শাক-সবজি চাষাবাদের জন্য ৫ হাজার ২১০ হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৮ হাজার ৬২৯ মে.টন। আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দু’লাখ ২৪ হাজার ৫শ মে.টন ও ইরি-বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আড়াই লাখ মে.টন নির্ধারণ করা হয়েছে।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শাক-সবজির জন্য এবার চাঁদপুর সদরে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৭০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ হাজার ৫১৮ মে.টন। মতলব উত্তরে চাষাবাদ ৯৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৮০৮ মে.টন। মতলব দক্ষিণে চাষাবাদ ২৭০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৬২৯ মে.টন। হাজীগঞ্জে চাষাবাদ ৬১৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৮২৩ মে.টন। শাহরাস্তিতে চাষাবাদ ৩৯৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ২৩৬ মে.টন। কচুয়ায় চাষাবাদ ৪১০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৪৯ মে.টন। ফরিদগঞ্জে চাষাবাদ ৭৮০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ২৬৩ মে.টন। হাইমচরে চাষাবাদ ৭১০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৮০৩ মে.টন।
শাক-সবজির মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, লালশাক, লাউ, কুমড়া, শিম, মুলা, গাজর, টমেটো, করলা, পালং শাক, ধনিয়া, বরবটি প্রভৃতি। চাঁদপুরের কুমারডুগি, মহামায়া , দেবপুর, মাস্টার বাজার, সুন্দরদিয়া, হাজীগঞ্জের অলিপুর এলাকায় ব্যাপক হারে ও বাণিজ্যিকভাবে কৃষকরা এসব শাক-সবজির চাষাবাদ করে থাকে ।
এবার চাঁদপুরে (২০১৮-২০১৯) আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দু’লাখ ২৪ হাজার ৫শ মে.টন নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলার আট উপজেলায় বিভিন্ন জাতের আলু চাষাবাদ করে থাকে চাঁদপুরের কৃষকরা। চলতি শীত মৌসুমে চাঁদপুরে আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১০ হাজার ৬৯০ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৫শ মে.টন।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চাঁদপুর সদরে এবার ১ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৮শ মে.টন। মতলব উত্তরে ৮শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৭শ মে.টন। মতলব দক্ষিণে ৩ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৩ হাজার ৫শ মে.টন। হাজীগঞ্জে ৯৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৯৫০ মে.টন।
শাহারাস্তিতে ২৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২৫ মে. টন। কচুয়ায় ৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ হাজার ৫শ মে.টন। ফরিদগঞ্জে ১৪০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৯৪০ মে.টন। হাইমচরে ১২৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৬২৫ মে.টন।
কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আলু উৎপাদনে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী জেলা হচ্ছে চাঁদপুর। মুন্সীগঞ্জের পরেই চাঁদপুরের স্থান। ফলে চাঁদপুরে বেসরকারিভাবে ১২টি কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। এগুলোর ধারণক্ষমতা মাত্র ৫৩ হাজার মে.টন। বাকি প্রায় ২ লাখ মে.টন আলু নিজ দায়িত্বে মাচায় বা কৃত্রিম উপায়ে সংরক্ষণ করার ফলে প্রতি বছরই কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে মার খাচ্ছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই চাঁদপুরে ব্যাপক আলু উৎপাদন হচ্ছে।
এছাড়া ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় এবার ইরি-বোরো চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা আড়াই লাখ মে. টন নির্ধারণ করা হয়েছে। হাইব্রিড, স্থানীয় ও উন্নত ফলনশীল এই ৩ জাতের ইরি-বোরোর চাষাবাদ করে থাকে চাঁদপুরের কৃষকরা। কম-বেশি সব উপজেলাতে ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়ে থাকে। তবে চাঁদপুর সেচ ও মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প, মতলব দক্ষিণ ও হাজীগঞ্জে ব্যাপক ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়। জেলার তফসিলি ব্যাংকগুলোতে কৃষি উৎপাদনের জন্যে চলতি অর্থবছর ২২৪ কোটি ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ঋণ বিতরণে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর সদরে ৫ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২১ হাজার ৭০৮ মে.টন। মতলব উত্তরে ৮ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৪ হাজার ৪২৬ মে.টন। মতলব দক্ষিণে ৪ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৯ হাজার ৯৮ মে.টন।
হাজীগঞ্জে ৯ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৯ হাজার ৮০২ মে.টন। শাহরাস্তিতে ৯ হাজার ৩৫১ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৯ হাজার ৮৯৪ মে.টন। কচুয়ায় ১২ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪৯ হাজার ৫৫০ মে.টন। ফরিদগঞ্জে ৯ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৯ হাজার ৪০১ মে.টন এবং হাইমচরে ৬২৯ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ হাজার ৩৯৬ মে.টন চাল।
চাঁদপুর কৃষি বিভাগের কৃষিবিদ আবদুল মান্নান জানান, কৃষকরা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন আলুসহ রবি ফসলের জন্য মাঠ তৈরি করেছে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে চাঁদপুরের কৃষকদের সার ও উন্নতমানের বীজ দিয়ে সহায়তা দিচ্ছে সরকার। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে।