কখনও মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া-ডেঙ্গুতে অতিষ্ঠ; কখনও আবার সংক্রামক করোনাভাইরাস। এর সঙ্গে রয়েছে বায়ু দূষণের ফলে নানান রোগ! রাজধানী ঢাকায় দিনরাত রোগ আতঙ্কে বসবাস মানুষের।
বায়ু আর শব্দ দুষণের সঙ্গেই গড়ে উঠেছে ঢাকার মিলবন্ধন। এসব নিয়েই নগরীর মানুষের বসবাস। প্রতিদিনই বাড়ছে বায়ু ও শব্দ দূষণ। নগরীর মানুষকে ক্রমান্বয়ে নিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুঝুঁকিতে। গত পাঁচ বছরে বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়েছে গড়ে ১০ থেকে ২০ ভাগ। যা ঢাকার বাতাসকে করেছে আরও বেশি বিষাক্ত। ঢাকার আকাশে প্রতিদিন উড়ছে অন্তত ২ হাজার টন ধুলা। বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় রাজধানী ঢাকার অবস্থান এখন দ্বিতীয়।
রাজধানীর হাসপাতালগুলো এখন অসুস্থ মানুষে ভরা। প্রতিদিনই হৃদরোগ আর শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাসহ নানাবিধ মারাত্বক রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছে সকল বয়স শ্রেণির মানুষ। এর অন্যতম কারণ বায়ু আর শব্দ দূষণ।
সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীতে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হল যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়- রান্নাঘরের বর্জ্য, কাগজ, প্লাস্টিক, পরিধেয় কাপড়-চোপড়সহ নানান বর্জ্য রাস্তায় ফেলে রাখে। যা পচে দূর্গন্ত তৈরি হয় এবং সেখান থেকে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। যা শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে আমাদের পেটে গিয়ে বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়। এর ফলে আমাদের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
এই নগরের দূষণ এমন ভয়াভহ আকার ধারণ করার অন্যতম দায় কল-কারখানাগুলোর। কল কারখানাগুলোর বর্জ্য মুক্তভাবে খাল, বিল, নদী-নালায় ফেলে রাখা হয়। যার কারণে নানাবিধ দূর্গন্ধ এবং জীবাণুর জন্ম নিচ্ছে হরহামেশ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অনিয়ম বর্ষাকালে আরও ভয়ংকর আকার ধারণ করে। নদী-নালায় কারখানা, হাসপাতালসহ বাসা বাড়ির বর্জ্য পানিতে ভেসে বেড়ানোর কারণে বর্ষার সিজনে রোগ বালাই নিয়েই আমাদের জীবন কাটাতে হয়।
রাজধানীর শ্যামপুর ও পোস্তগোলা এলাকায় স্টিল ও রি-রোলিং মিল থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় বিষে ভরা থাকে ওই নগরী। ফলে ওই এলাকার বাসিন্দাদের শ্বাস নেয়াটাই এখন দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু শ্যামপুর আর পোস্তগোলা না রাজধানীর সব জায়গা এখন ধুলার দখলে।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, রাস্তা খোঁড়াখুড়ি ও সংস্কারকাজ, মেগা প্রকল্প, আশেপাশের ইটভাটা, ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্প কারখানা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং ময়লা-আবর্জনা পোড়ানাসহ নানাবিধ কারণে এই বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। এরফলে বয়স্ক নাগরিকরাসহ সব বয়সের মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বায়ু দূষণের ফলে হৃদরোগ আর শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাসহ নানাবিধ সমস্যার পাশাপাশি নারীদের প্রজনন সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এছাড়া এরফলে অর্থনৈতিকভাবে সমস্যাও সৃষ্টি হয়। বায়ুদূষণের ফলে বড় ধরনের রোগ হওয়ায় চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়। আমরা জানি, আমাদের সক্ষমতার অভাব আছে। এজন্য সব জায়গায় অন্তত দিনে দুইবার পানি দিক। আমরা দেখেছি, একবার পানি দিলে অন্তত দেড় ঘণ্টা দূষণ নিম্নমুখী অবস্থানে থাকে।
এ কর্মকর্তা জানান, বায়ুদূষণের সহনীয় মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম। সেখানে গাজীপুরের বায়ুর মান প্রতি ঘনমিটারে ২৬৩ মাইক্রোগ্রাম। মাদারীপুরে এ মান ৪৯ মাইক্রোগ্রাম। মূলত মাদারীপুরে জলাশয়, নদী ও গাছপালার আধিক্যের কারণে বায়ুমান ভালো বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণ হচ্ছে গাজীপুর জেলায়। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। অন্যদিকে সবচেয়ে কম বায়ু দূষণ হচ্ছে মাদারীপুরে।
এখুনি সময় ঢাকাকে রক্ষা করা। কল কারখানাকে পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসা। তানাহলে আরও ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করছেন গবেষক ড. আহমদ কামরুজ্জামান।
পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক জিয়াউল হক আশা প্রকাশ করে বলেন, ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ ও মেগা প্রজেক্টের কাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। যার ফলে ২০২৩ সালের পর বায়ু দূষণের মাত্রা কমে আসতে পারে। ইট থেকে সরে এসে ২০২৫ সালের মধ্যে রাস্তা ছাড়া সব নির্মাণ কাছে হবে পরিবেশবান্ধব ব্লক দিয়ে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্যও লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে। দেশে এখন ৮ হাজার ইটভাটা আছে। তা আগামীতে কমে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।