হাসিখুশি ‘রুমা আপা’র মলিন চেহারা

ঢাকা, জাতীয়

মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 03:46:06

আরিফা সুলতানা রুমা। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক। ত্যাগী এই তরুণী জাতীয়তাবাদী চেতনায় উজ্জ্বীবিত হয়ে ২০০০ সাল থেকে অবদান রেখে চলেছেন বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে। সম্প্রতি পল্টন থানায় নাশকতা মামলায় গোয়েন্দা পুলিশের অধিনে ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন ৩৯ বছর বয়সী আলোচিত নেত্রী।

রাজপথের আন্দোলনে তার সরব উপস্থিতি সম্পর্কে দলের নেতাকর্মীরা সবাই অবগত। এক নামে সবাই চেনে তাকে। তিনি সবার পরিচিত ‘রুমা আপা’। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে অমায়িক ব্যবহারই যেন তার অলঙ্কার।

সদালাপী, প্রাণবন্ত, হাসিমুখে কথা বলা সেই রুমা আপার মুখটি খুব মলিন দেখা গেল। খাওয়া-দাওয়া নেই, নেই ঘুম, ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। ১৬ নভেম্বর ডিবি কার্যালয় থেকে মহানগর হাকিম আদালতে নেওয়ার পথে এভাবেই দেখা মিলল তার।

ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন এজলাসের পথে। সেখানে মলিন মুখে পুলিশ পরিবেষ্টিত অবস্থায় উপস্থিত নেতকার্মীদের দেখে এক হাতে দেখালেন- ‘ভি-চিহ্ন’। কিছুটা উজ্জ্বীবিত হওয়ার চেষ্টা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পাবনা-৩ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন ফরম তুলেছেন ছাত্রদলের এই নেত্রী। পাবনা-৩ (ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর ও চাটমোহর) নির্বাচনী আসন থেকে তিনিই প্রথম নারী সংসদ সদস্য মনোনয়ন প্রত্যাশী।

শুক্রবার (১৬ নভেম্বর) মহানগর হাকিম আদালতে নেওয়া হয় রুমাকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যাালয়ের সামনে নাশকতা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। সিএমএম আদালত এলাকা হয়ে বাসায় ফেরার পথে তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।

উদীয়মান এই তরুণ নেত্রীর গ্রামের বাড়ি পাবনার চাটমোহর উপজেলায় আফ্রাতপাড়া মহল্লায়। ১৯৭৯ সালে জন্মগ্রহণ করা এই নেত্রীর বাবা আক্কাস আলী একজন শিক্ষক। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ।

পাবনায় গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পড়ালেখার হাতেখড়ি। এরপর চাটমোহল বালিকা বিদ্যালয়, চাটমোহল ডিগ্রী কলেজ, পরবর্তীতে ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে মনোবিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করেন তিনি। সবশেষ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ ডিগ্রি নিয়ে আইন বিভাগে অধ্যয়নরত।

ইডেনে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। দীক্ষা নেন জাতীয়তাবাদের। ২০০২ ও ২০০৪ সালে তিনি পরপর দু’বার ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক নির্বাচিত হন।

কলেজ ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান পাওয়ার পর থেকে তার দলীয় কর্মকাণ্ড নজরে আসে কেন্দ্রীয় নেতাদের। তার মেধা ও যোগ্যতায় ২০০৯ সালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা করে নেন আরিফা সুলতানা। এরপর ২০১২ সালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদ লাভ করেন। ২০১৫ সালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।

দলীয় মনোনয়ন ফরম তোলার পর বার্তা২৪.কমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেন দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে তার হৃদযের স্বপ্নগুলো।

রুমা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন, ‘দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। বিশেষ করে আমার পাবনার অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করতে চাই। সবার ভালোবাসা নিয়ে সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করতে চাই।’

দল আপনাকে মনোনীত করবে এমন প্রত্যাশা কেন করছেন? এ প্রশ্নের জবাবে রুমা বলেছিলেন, ‘রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে আমার যে অবদান তা দল মূল্যায়ন করবে বলে আশাবাদী। তরুণ নেতৃত্ব হিসেবে, এমনকি নারী নেতৃত্ব হিসেবে দল মূল্যায়ন করবে বলেও আমার বিশ্বাস। কারণ তরুণরাই পারে ভালো কিছু করতে, ভালো কিছু তৈরি করতে। দেশের উন্নয়নের জন্য তরুণদের ভুমিকা, বিশেষ করে ছাত্রদল থেকে যারা আসে, তাদের যে অভিজ্ঞতা, দেশের জন্য যে মায়া ও দেশপ্রেম রয়েছে তা অন্য নেতৃত্ব দিতে পারে না। এজন্য হলেও দল তরুণদের মূল্যায়ন করবে বলে আমি আশাবাদী।’
তবে দল মনোনয়ন যাকেই দিক না কেন দলের হয়ে সমানভাবে কাজ করে যেতে চান বলেও জানিয়েছিলেন অরিফা সুলতানা রুমা।

আরিফা সুলতানা রুমাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়ায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর