‘বর্তমান তামাক কর কাঠামো অত্যন্ত জটিল যা তামাকের ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণের পথে একটি বড় বাধা। আর এজন্য এই কর কাঠামোকে সহজ করতে হবে। এটা করে যথাযথ পদ্ধতিতে তামাক-কর বৃদ্ধি করলে তামাকের ব্যবহার কমাতে তা কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।’
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) তামাক কর বৃদ্ধি বিষয়ে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের উদ্যোগে আয়োজিত ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ভার্চুয়াল এক মতবিনিময় সভায় এ অভিমত দেন বক্তারা।
ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরামের সহ-সভাপতি শফিকুল আলমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন (বিসিআইসি) এর সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের লিড পলিসি এডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশেদুল ইসলাম।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. শরিফুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের পরিচালক (গবেষণা) আবদুল্লাহ নাদভী।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে যখন ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গঠনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন, তখন এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য ‘বর্তমান শুল্ক কাঠামো সহজ’ করা এবং এ অঞ্চলের সর্বোত্তম ব্যবস্থা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারের শুল্ক আয় বৃদ্ধি করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
এ প্রসঙ্গে ফিলিপাইনের উদাহরণ টেনে বলা হয়, ফিলিপাইনে ‘সিন ট্যাক্স রিফর্ম অ্যাক্ট ২০১২’-এর মাধ্যমে তামাকে কার্যকর করারোপের সুফল পাওয়া গেছে। সেখানে এক্সাইজ ট্যাক্স চার গুণের বেশি বাড়ানোয় খুচরা মূল্য এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায় এবং এর ফলে ধূমপায়ীর হার ৬ বছরে ২৮ শতাংশ থেকে ২৩ শতাংশের নিচে নেমে আসে। প্রাপ্ত রাজস্বও বৃদ্ধি পায়।
২০২২-২৩ অর্থবছরে শতকরা হিসেবে নিম্ন স্তরের সিগারেটের দাম সর্বোচ্চ পরিমাণে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। কারণ, ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাব অনুসারে মোট যে সিগারেট বিক্রি হয় তার সবচেয়ে বড় অংশ (৭৫ শতাংশ) হলো নিম্ন স্তরের সিগারেট।
প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নের সম্ভাব্য ফলাফল হিসেবে বলা হয়, সরকার যদি তামাক কর বৃদ্ধি করে তবে সিগারেট ব্যবহারকারির অনুপাত ১৫.১% থেকে ১৪.০৩% হবে। ১৩ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক সিগারেট ব্যবহার ছেড়ে দেবেন ও ৯ লক্ষ তরুণ সিগারেট ব্যবহার শুরু করা থেকে বিরত থাকবেন। এছাড়া ৮ লক্ষ ৯০ হাজার অকাল মৃত্যু রোধ করা যাবে। আর ৯ হাজার ২ শত কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় হবে সিগারেট বিক্রয় থেকে।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, অসংক্রামক ব্যধির প্রাদুর্ভাব বিশ্বের যে সমস্ত দেশে বেশি তাদের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। উপরন্তু অসংক্রামক ব্যধির অন্যতম কারণ হিসেবে তামাক গ্রহণকে ধরা হয়। এজন্য তামাকের ব্যবহার হ্রাসের জন্য তামাকের কর বৃদ্ধি অনুষঙ্গ। ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরামের সাংবাদিকরা তাদের লেখনির মাধ্যমে তামাকের কর বৃদ্ধির জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশেদুল ইসলাম বলেন, গণমাধ্যম সবসময় জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বিষয়কে ফোকাস করে। তামাক বিরোধী কার্যক্রমে গণমাধ্যম তাই অংশীদার হিসেবেই পাশে থাকবে। এনবিআর এর সঙ্গে বিভিন্ন সভাতেও ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরাম সব সময়ই জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়কে হাইলাইট করে। আগামীতেও আমরা সক্রিয় ভাবে পাশে থাকবো।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন (বিসিআইসি) এর সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের লিড পলিসি এডভাইজার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে তামাকের কর কাঠামো জটিল। তামাক পণ্যের ধরণ, বৈশিষ্ট্য, দামের স্তর অনুসারে শুল্ক হারের ভিন্নতা রয়েছে। ফলে তামাক পণ্য সহজলভ্য থেকে যাচ্ছে তামাক ব্যবহারের হারও প্রায় অপরিবর্তিত থাকছে। প্রস্তাবিত সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের ফলে সিগারেটের কর কাঠামো সহজ হবে। মুদ্রাস্ফীতি ও বর্ধমান আয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে সময়ে সময়ে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো যাবে। আরও কার্যকরভাবে রাজস্ব প্রাক্কলন করা সম্ভব হবে।
ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরামের সহ-সভাপতি শফিকুল আলম বলেন, আমরাও দেশকে তামাকমুক্ত দেখতে চাই। এজন্য কার্যকর বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণে জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে তামাক কর বৃদ্ধির বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এর মাধ্যমে সরকারের নজরে আনা জরুরী। ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরামের সদস্যরা তামাক বিরোধী কার্যক্রমে সক্রিয় ভাবে পাশে থাকবে বলে এসময় তিনি আশ্বস্ত করেন।