বিদেশে নালিশকারী দেশদ্রোহী, রেজা কিবরিয়া রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 23:33:26

মোহাম্মদ এ আরাফাত হোসেন, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সম্প্রতি তিনি দেশে গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা, যুক্তরাষ্ট্রের র‌্যাব নিয়ে নিষেধাজ্ঞা, মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের অপতৎপরতা এবং তার দেশ নিয়ে নিজস্ব ভাবনাসহ নানা বিষয় নিয়ে একটি গণমাধ্যমে কথা বলেছেন।

মোহাম্মদ এ আরাফাত হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ কিভাবে পরিচালিত হবে তার ডোসিয়ার তৈরি করবে অন্য দেশ! সাম্রাজ্যবাদীদের দালালীর এর চেয়ে বড় উদাহারণ আর হতে পারে না। অন্য কোনো দেশ নয় বাংলাদেশ নিজে তার ডোসিয়ার তৈরি করবে।


‘ড. রেজা কিবরিয়া রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ। রাজনীতির ‘ক খ গ ঘ’ কী এখনো তিনি জানেন না।’


আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে টক্কর দেওয়ার মতো এখন বাংলাদেশে কোন শক্তি নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার অবকাঠামোর পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও উন্নতি শেখ হাসিনার হাত ধরেই হয়েছে। তাছাড়া  শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সামনে দাঁড়ানোর মতো কোনো নেতা এই মুহূর্তে বাংলাদেশে নেই। সম্রাজ্যবাদের কাছে আওয়ামী লীগ কৈফিয়ত দিতে চায় না। দালালদের কাছেও কৈফিয়ত দেবে না কখনো। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের দল। আওয়ামী লীগের ৭০ বছরের ইতিহাস এর প্রমাণ। এটা ডোসিয়ার থেকে জন্ম নেওয়া দল নয়।

 ড. রেজা কিবরিয়া

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া রাজনীতির ‘ক খ গ ঘ’ জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে ভূ-রাজনৈতিক ব্যাখা দিয়ে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, সম্প্রতি দেশের এলিট ফোর্স র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে দেশের রাজনীতিতে চলছে তর্ক-বিতর্ক; অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ। নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারগুলো এতো সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই। মানবাধিকার ইস্যুটি এখানে ‘কাভার’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আসল ব্যাপার হচ্ছে ভূ-রাজনীতি। বিদেশি কোনো নিষেধাজ্ঞা এলে ষড়যন্ত্রকারী ও দেশদ্রোহীদের পক্ষেই যায়, জনগণের পক্ষে নয়।

দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে যারা বিদেশিদের কাছে নালিশ করছেন তাদেরকে দেশদ্রোহী বলেছেন মোহাম্মদ আরাফাত।


‘বাংলাদেশ নিজেই তার সমস্যা সমাধান করবে।  অন্য কোনো দেশ নয় নিজে তার ডোসিয়ার তৈরি করবে।’


তিনি বলেন, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ভেতরে বিভিন্ন সমস্যা থাকতে পারে। মানবাধিকার, সুশাসন, গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে সংকট আছে। বাংলাদেশ নিজেই তার সকল সমস্যা সমাধান করবে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে বিদেশিদের কাছে যখন আমরা নাক গলানোর জন্য আবদার করি, এটা করতে গিয়ে যখন আমরা বলি , ভাই পদ্মা সেতু বন্ধ করে দাও, আমাদের কাছ থেকে আমদানি বন্ধ করে দাও, শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দাও- এটা কোনোভাবেই ভালো কাজ নয় এ ধরনের কাজ দেশদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে।

র‌্যাবের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ড. রেজা কিবরিয়া বেশ সক্রিয় ও সবর। এর সমালোচনা করে রাজনৈতিক গবেষক মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, আজকে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র। স্বাধীন রাষ্ট্রের বিপক্ষে বিদেশিদের কাছে কারা আপিল করতে পারেন? কেবল বাংলাদেশ বিরোধীরাই করতে পারেন। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধরা পাকিস্তানের দৃষ্টিতে কী? গাদ্দার! স্বাধীনর বাংলাদেশের বিপক্ষে যারা দাঁড়াবেন, তারা কী? তারা স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছেন? বাংলাদেশ কি গণহত্যা চালাচ্ছে? ড. রেজা কিবরিয়া রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ। রাজনীতির ‘ক খ গ ঘ’ কী এখনো তিনি জানেন না। না জানার কারণেই বিদেশিদের কাছে সহযোগিতা চাওয়ার যৌক্তিকতা খুঁজে পান তিনি। যা একবারে শিশু সুলভ তুলনা।

আমেরিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার সমস্যা আছে। এটা তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের ব্যাপার। আমরা তো আমেরিকার স্বার্থ দেখে বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করব না।  আমাদের বৈদেশিক নীতি হবে দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থে। সকলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে বাংলাদেশের জনগণের জন্যই ভালো। শেখ হাসিনা সেই বৈদেশিক নীতি নিয়েই চলছেন। আমি বলছি না, মানবাধিকারের প্রশ্নে বাংলাদেশ স্বর্গ হয়ে গেছে। সুশাসন প্রশ্নে স্বর্গ হয়ে গেছে। নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। গণতন্ত্রের উচ্চশিখরে আমরা পৌঁছে গেছি। এ সকল সমস্যার সমাধান আমাদের নিজেদেরই করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমেরিকার আড়াইশো বছরের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা। আড়াইশো বছর সুযোগ পেয়েও কেন সবকিছু ঠিক করতে পারলো না? আড়াইশো বছর পরও কেন তাদের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠছে?


দেশে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য কিছুটা সময় দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে সেই চেষ্টাই করছেন। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যাই কাজ করছেন। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। পঁচাত্তরের পনরো আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলো। আওয়ামী লীগ একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচার করে বিচারের একটা সংস্কৃতি চালু করেছে দেশে। একটি ন্যায্যাতা ও আইনের শাসনের সংস্কৃতি চালু করেছে সরকার। আওয়ামী লীগের হাত ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় না, মানবাধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।

আরাফাত বলেন, আওয়ামী লীগও সুষ্ঠু নির্বাচন্ চায়। সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়াও তো হয়। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতে গেলেই বিরোধী দলগুলো বলতে শুরু করে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি! সংকট আসলে এখানেই। দেশের একশ্রেণির মানুষের অদ্ভুত ধরনের একটা মানসিকতা আছে, সকলেই জোর করে নির্বাচনে জিততে চান!

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। কেউ দাঁড়াতেই পারবে না আওয়ামী লীগের সামনে। যারা এখন বড় বড় কথা বলছেন, তাদের তো জামানতই বাজেয়াপ্ত হবে বলে ও জানান তিনি।

‘একটা জরিপ করুক কেউ এখন- ৭০ শতাংশ মানুষ যদি শেখ হাসিনার পক্ষে ভোট দিতে না চান, তাহলে আমি কথা বলা বন্ধ করে দেব।’

তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেন সরকার এসেছিলো একটা নির্বাচন দেওয়ার জন্য। এটাই ছিলো তাদের কাজ, দেশের স্ট্রাকচার ঠিক করার কোনো বৈধতাই তাদের ছিলো না। যারা এ ধরনের কথা চিন্তা করেন গণতন্ত্রের প্রতি তাদের ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ নেই। ওয়ান ইলেভেনের সরকার কি জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসেছিলো?

বাংলাদেশের শান্তি মিশন নিয়ে সামালোচনাকারীদের জাতিসংঘই জবাব দিয়েছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, যখন মানবাধিকার সংস্থাগুলো শান্তি মিশন নিয়ে এটা-ওটা অভিযোগ করছে, বাংলাদেশকে পিস বিল্ডিং কমিশনের সভাপতি করার মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ এর কড়া জবাব দিয়েছে। তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে- কারা বাংলাদেশের সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে।

মোহাম্মদ আরাফাত মনে করেন, স্বাধীন ও সার্বভৌম বৈদেশিক নীতিতে বাংলাদেশ এগোচ্ছে। এটা সাম্রাজ্যবাদীদের পছন্দ হচ্ছে না। আর্ম-টুইস্ট করার জন্য বিশ্বের আরও কোনো কোনো দেশ বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার মতো ব্যাপার দিলে দিতে পারে। অসুবিধা নেই। কিন্তু এই আর্ম-ট্রইস্ট করার চেষ্টা করে পদ্মা সেতুতে জিততে পারেনি। এখনো পারবে না। বাংলাদেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বিজয়ী হবে।

বাকস্বাধীনতা নিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা, স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাওয়ার সঙ্গে আমিও শতভাগ একমত। আমরাও চাই- বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, উগ্রবাদের আস্ফালন থাকবে না।  এখানে ধর্ম, বর্ণ, জাত-পাত নির্ভিশেষে সকলের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করবে। জনকল্যাণমূলক একটি রাষ্ট্র হবে যেখানে মানবাধিকার ও ফ্রিডম অব স্পিচ প্রেটেকটেড থাকবে। যে যার মতো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারবে। এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

রেজা কিবরিয়া বা গণঅধিকার পরিষদকে কোনো চ্যালেঞ্জই মনে করেন না আওয়ামী লীগ।  এ নিয়ে কথা বলা অনার্থক, অপচয়ও বলেও জানান মোহাম্মদ এ আরাফাত হোসেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর