বিধিনিষেধ আসছে ফেসবুক-ইউটিউব-ওটিটিতে: বিটিআরসি

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 15:35:07

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) লাগাম টানতে যাচ্ছে ফেসবুক-ইউটিউব-ওটিটিতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ভিডিও শেয়ারিং মাধ্যম ইউটিউব ও ওভার দ্য টপ (ওটিটি)র ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা তৈরি করতে যাচ্ছে বিটিআরসি। সম্প্রতি তাদের ওয়েবসাইটে এ নীতিমালার একটি খসড়া প্রকাশ করেছে।

বিটিআরসির আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই রাকিব জানিয়েছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ডিজিটাল মাধ্যম ও ওটিটি মাধ্যমের বিষয়ে একটি প্রবিধানের খসড়া তৈরি করা হয়েছে।

প্রবিধানটির খসড়াতে বলা হয়েছে, ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যমগুলোকে বাংলাদেশে কর্মী নিয়োগ করতে হবে, সশরীর যোগাযোগের ঠিকানা থাকতে হবে, অভিযোগ নেয়া ও নির্দিষ্ট সময়ে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। এছাড়াও আদালত ও বিটিআরসি নির্দেশ দিলে নির্দিষ্ট কনটেন্ট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে নিতে হবে।

বর্তমানে বিটিআরসিকে ফেসবুক বা ইউটিউবের মতো মাধ্যমগুলো থেকে কোনো কনটেন্ট মুছতে তাদের ওপরই নির্ভর করতে হয়। এত করে লক্ষ্য করা যায় নির্দেশনার পরও যথাযথ সময়ে কনটেন্ট সরানো হয় না। সরানোর বিষয়টি পুরোটাই নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট মাধ্যমের নিজস্ব নীতিমালার ওপর। মূলত এসবের পরিপ্রেক্ষিতেই একটি প্রবিধানের খসড়া তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত।

খসড়াটি তৈরির সময় ভারত, সিঙ্গাপুর, ইংল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের নীতিমালাগুলো দেখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, খসড়াটি নিয়ে মতামত দেয়ার শেষ সময় আগামীকাল শুক্রবার।

যা যা আছে খসড়ায়

বিটিআরসি বলছে, নতুন প্রবিধানমালা সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ডিজিটাল মাধ্যম এবং সব ওভার দ্য টপ (ওটিটি) মাধ্যমের জন্য। ওটিটি বলতে ‘পাবলিক’ ইন্টারনেটের কনটেন্ট, সেবা ও অ্যাপ বোঝাবে, যা দিয়ে গ্রাহকদের সেবা দেয়া হয়।

 ‘ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন রেগুলেশন-২০২১’ শিরোনামের ১৬ পৃষ্ঠার খসড়া প্রবিধানমালা অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে হুমকির মুখে ফেলে এবং সরকারের গোপনীয়তা ভঙ্গ করে, এমন কিছু প্রচার করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধ, জাতির জনক, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে এবং ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত লাগে, এমন কিছু প্রচারে বিরত থাকতে হবে। পর্নোগ্রাফি, গোপনীয়তা লঙ্ঘনকারী এবং অবমাননা ও মানহানিকর কনটেন্ট প্রচার করা যাবে না।

খসড়ায় আরও বলা হয়, এই প্রবিধানে নিষিদ্ধ কনটেন্ট ব্যবহারকারী মুছে ফেললেও, তদন্তের জন্য ১৮০ দিন সংরক্ষণ করতে হবে।

অফিস ও কর্মকর্তা নিয়োগ

খসড়ায় বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে তিনজন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে, যারা বাংলাদেশে বসবাস করবেন। ওয়েবসাইটে ও মোবাইল ফোন অ্যাপে অভিযোগ গ্রহণকারী কর্মকর্তার নাম এবং তার সঙ্গে যোগাযোগের উপায় থাকতে হবে। এই কর্মকর্তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগ গ্রহণ করবেন এবং তা ২০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।

বাংলাদেশে বসবাসকারী একজন প্রতিপালন কর্মকর্তাও (কমপ্লায়েন্স অফিসার) নিয়োগ দিতে হবে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সমন্বয়ের জন্য একজন প্রতিনিধি থাকতে হবে।

ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বরাবর বলে আসছে, তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের বার্তা শুধু প্রেরণকারী ও গ্রহণকারী দেখতে পান (এনক্রিপ্টেড)। কিন্তু বিটিআরসির প্রবিধানের খসড়া বলছে, বিধি লঙ্ঘনকারী কোনো বার্তা আদান-প্রদান করলে আদালত ও বিটিআরসির নির্দেশ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট বার্তা প্রথম যিনি দিয়েছিলেন, তাঁকে শনাক্ত করে দিতে হবে।

প্রথম ব্যক্তি যদি দেশের বাইরে অবস্থান করেন, তবে দেশে যিনি অবস্থান করবেন, তিনি ‘প্রথম’ বলে অভিযুক্ত হবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর