প্রবাসীর স্ত্রীকে গণধর্ষণের পর হত্যা

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-29 17:38:35

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর শহরের একটি ওষুধের দোকানে প্রবাসীর স্ত্রীর ছয় টুকরা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মালিক ও তার বন্ধুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।

এর আগে, শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ডিএমপির ভাটারা থানাধীন নুরের চালা থেকে মূল আসামি জিতেশ চন্দ্র গােপ (৩০), অনজিৎ চন্দ্র গােপ (৩৮) ও অসীত গোপকে (৩৬) গ্রেফতার করা হয়।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর পৌরসভার ব্যরিস্টার আ. মতিন মার্কেটের ‘অভি মেডিকেল হল’ এর দোকান থেকে শাহনাজ পারভীন জোৎস্না (৩৫) নামের সৌদি আরব প্রবাসীর স্ত্রীর ৬ টুকরা লাশ উদ্ধার করা হয়।

এই ঘটনা সারা দেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করলে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি সিআইডির এলআইসি শাখা ছায়া তদন্ত শুরু করে। তারা বিভিন্ন উৎস হতে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত জিতেশ চন্দ্র গােপ, অনজিৎ চন্দ্র গােপ ও অসীত গােপকে গ্রেফতারের জন্য এলআইসি'র একাধিক চৌকস টিম সম্ভাব্য সকল স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। গতকাল ডিএমপি'র ভাটারা থানার নুরের চালা এলাকা হতে তাদের গ্রেফতার করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করে যে, শাহনাজ পারভীন জোৎস্না (৩৫) ২০১৩ সাল থেকে পৌর শহরের নিজ মালিকানা বাসায় ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে বসবাস করে আসছিল। তার স্বামী ছরকু মিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ সৌদি আরবে চাকরি করেন। পরিবারের সকল সদস্যদের ঔষধ পত্র জিতেশের মালিকানাধীন অভি মেডিকেল হল নামীয় ফার্মেসি হতে ক্রয় করার সুবাধে জিতেশের সাথে তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।

সিআইডি বলেন, শাহনাজ পারভীন জোৎস্না কিছুদিন যাবৎ বেশ কিছু গােপনীয় শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সমস্যার সমাধান ও সুপরামর্শের জন্য গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে জিতেশের ফার্মেসিতে গেলে ফার্মেসির ভিতরে প্রাথমিক চিকিৎসা কক্ষে তাকে বসিয়ে রেখে কাস্টমারের ভিড় কমলে তার সাথে কথা বলে সমস্যার সমাধানের জন্য সঠিক ঔষধ দেওয়া হবে বলে বসিয়ে রাখে।

রাত যত গভীর হয়, ভিকটিমের বাসায় দ্রুত ফেরার অস্থিরতা তত বেড়ে যায়। এদিকে জিতেশ চন্দ্র গােপ তার বন্ধু মুদি দোকানদার অনজিৎ গােপ ও পাশের রুপ ফার্মেসির মালিক অসীত গােপকে শাহনাজ পারভীন জোৎস্নার বিষয়ে বললে তারা ধর্ষণ করার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা মােতাবেক জিতেশ ভিকটিমকে তার চিকিৎসার কথা বলে ঘুমের ঔষধ সেবন করিয়ে দেয় এবং ভিকটিম ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ে।

এরপর ভিকটিমকে ফার্মেসির ভিতর রেখেই জিতেশ বাহিরে তালা দিয়ে চলে যায়। আশপাশের সব দোকান বন্ধ হলে এবং রাত আরও গভীর হলে তারা পুনরায় প্রবেশ করে এনার্জি ড্রিংকস পান করে। তারপর তারা ভিকটিমকে জোরপূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

ধর্ষণের বিষয়টি শাহনাজ প্রকাশ করার কথা বললে, আসামিরা তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে বলে জানায় মুক্তা ধর।

তিনি বলেন, হত্যার পরিকল্পনা মোতাবেক তারা পরস্পর যােগসাজসে ভিকটিমের পরিহিত ওড়না গলায় পেঁচিয়ে এবং বিশ্রাম কক্ষে থাকা বালিশ দিয়ে মুখে চেপে ধরে হত্যা করে। তারপর লাশটি ধারালাে ছুরি দিয়ে মাথা, দুই হাত, দুই পা এবং বুক- পেটসহ ৬টি অংশে টুকরা করে ফেলে।

এরপর দোকানে থাকা ঔষধের কার্টুন দিয়ে খণ্ডিত অংশগুলাে ঢেকে রেখে ফার্মেসি তালা দিয়ে তারা চলে যায়। পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে জোৎস্লার লাশের খণ্ডিত অংশগুলাে মাছের খামারে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বলে জানায় মুক্তা ধর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর