১৪ বছরেও পূর্ণতা পায়নি ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ | 2023-09-01 06:30:49

'রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই' শ্লোগানে যখন মুখরিত ঢাকার রাজপথ, তখন পুলিশের গুলিতে রক্তে রঞ্জিত হয় পীচ-ঢালা পথ। সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার সহ অনেকে শহীদ হন ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী ভাষা আন্দোলনে। শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের মাতৃভাষা বাংলা।

বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ আবদুল জব্বারের নামে ২০০৮ সালে তারই জন্মস্থান ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের রাওনা ইউনিয়নের পাঁচুয়াতে প্রতিষ্ঠা হয় ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পূর্ণতা পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। পর্যাপ্ত পরিমান বই, ভাষা শহীদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র, পত্রিকা না থাকায় দিন দিন কমছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। ফাঁকা পড়ে থাকে গ্রন্থাগারের টেবিল চেয়ার গুলো। ফেব্রুয়ারীতে দুরদুরান্ত থেকে আসা কিছু দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়লেও বছরের অন্যান্য সময় এখানে থাকে দর্শনার্থী শূণ্য। ১৪ বছরে ও হয়নি ভাষা শহীদ আবদুল জব্বারের নামে জব্বার নগরের গেজেট।

এখানে শহীদের ছবি ছাড়া ব্যবহৃত কোনো স্মৃতি নেই জাদুঘরের ভেতরে। জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় স্থাপিত গণগ্রন্থাগারটিতে চার হাজারের অধিক বই রয়েছে। গফরগাঁও উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে রাওনা ইউনিয়নের পাঁচুয়া গ্রামে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের পৈতৃক ভিটার পাশেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। এখানেই রয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং শহীদ জব্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সারা বছর সরব না থাকলেও ভাষার মাসে মিলনমেলায় পরিণত হয় পাঁচুয়ার শহীদ আব্দুল জব্বারের জন্মস্থান জব্বারনগরে। এখানে সরকারি পর্যায়ে উদযাপিত হয় অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা। তবে দুঃখজনক বিষয় চার হাজারেরও বেশি সংগ্রহ নিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা গ্রন্থাগার ও জাদুঘর কোলাহলশূন্য অলস হয়ে পড়ে আছে। বিশাল হলরুমে চেয়ার টেবিল ফাঁকা পড়ে আছে। মাঝে মধ্যে উঁকি দিয়ে যায় কিছু দর্শনার্থী। ছুটির দিন বাদে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই স্মৃতি গ্রন্থাগার ও জাদুঘর।

শহীদ জব্বারের জন্মভিটার পাশে ৪০ শতক জায়গার ওপর নির্মিত ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। আলমারিতে শোভা পাচ্ছে ৪ হাজার ১৩০টি বই। অনেক দামি ও দুর্লভ বই রয়েছে সেখানে। পুরো জাদুঘর গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আগে দৈনিক পত্রিকা রাখা হলেও এখন আর দৈনিক পত্রিকার পাঠকও আসে না বলে রাখা হয় না। গ্রন্থাগার দেখাশোনা ও পরিচালনার জন্য লাইব্রেরিয়ান, সহকারী লাইব্রেরিয়ান ও পিয়নসহ মোট ৫টি পদ থাকলেও এখানে কর্মরত আছেন একজন সহকারী লাইব্রেরিয়ান ও একজন কেয়ারটেকার।

লাইব্রেরিয়ান মো: কায়সারুজ্জামান জানান, অনেক মূল্যবান বইয়ের সমাহার রয়েছে গ্রন্থাগারে। নিয়মিতভাবেই গ্রন্থাগার খোলা হয়। ভাষার মাসে দর্শনার্থীরা এলেও বই পড়ার জন্য পাঠক তেমন আসে না। তাই তাদের তেমন কোনো কাজ নেই। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পাঠাগার ঘুরে দেখা গেল, বেশ কিছু দর্শনার্থী আসছেন, তারা আশপাশ ঘুরে দেখলেও গ্রন্থাগারের ভেতরে এসে বই পাঠ করছে না। জাদুঘরের সামনে, শহীদ মিনার কিংবা ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের ম্যুরালের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার ঝোঁক বেশি তাদের। পৌর এলাকার বাসিন্দা শিক্ষার্থী সালাহউদ্দিন রাহাত, রিজওয়ানসহ আরো অনেকেই গ্রন্থাগার ও জাদুঘর দেখতে এসে হতাশা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের ব্যবহৃত কোনো স্মৃতি এখানে নেই। শহীদ আব্দুল জব্বারের উত্তরসূরীরা এখানে কেউ থাকে না বলে তাদের কারো সাথে দেখা সাক্ষাতের সুযোগ নেই। আরেক শিক্ষার্থী মাহিন বলেন, উপজেলা সদর থেকে সরাসরি যানবাহন না থাকায় আসা-যাওয়া করতে পরিবহন সঙ্কটে পড়তে হয়। কলেজ শিক্ষার্থী রিজওয়ান শাবাব বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষার্থীসহ গফরগাঁওবাসীর দাবি ছিল আমাদের গর্ব, গফরগাঁওয়ের গর্ব ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের নামে গফরগাঁওয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করা হউক।

চারুশিল্পী জহিরুল ইসলাম বলেন, এখানে মাঝে মধ্যে ছবি আঁকার জন্য আসা হয়। প্রকৃতির কোলে বসে মানুষের ছবি আঁকতে ভালো লাগে। কখনো শিল্প সংশ্লিষ্ট কিছু বইপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করি।

ভাষা শহীদ আবদুল জব্বারের চাচাতো ভাই কামরুজ্জামান বলেন আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জোর দাবী জানাই।।
গফরগাঁও উপজেলা অফিসার মো: আবিদুর রহমান বলেন, এখানে নতুন যোগদান করে আমি ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেছি। বইয়ের সংখ্যা ও মানের দিক থেকে বেশ সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থাগার। কিভাবে পাঠকদের আকৃষ্ট করা যায় এ বিষয়ে কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর