বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় জাতির ভাষা শহীদদের স্মরণ

, জাতীয়

আরিফ জাওয়াদ, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 23:40:32

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি। ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু, গড়ায়ে ফেব্রুয়ারী।”

ভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল বাংলা ছাত্র সমাজ ও সাধারণেরা। কোনদিনও জাতি তাঁদের আত্মত্যাগের কথা ভুলবে না। যথাযথ মর্যাদার সহিত বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় জাতি এ বীরদের স্মরণ করছে।

“আমায় গেঁথে দাওনা মাগো, একটা পলাশ ফুলের মালা। আমি জনম জনম রাখব ধরে, ভাই হারানোর জ্বালা।” এমন ভাই হারানোর জ্বালা নিবারণে ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে শহীদ মিনারের বেদী। ভাষা আন্দোলনের ৭০ পূর্তিতে এক নতুন ইতিহাসের দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। ভাষার জন্য প্রাণ! তারই দ্যুতি ছাড়াচ্ছে বিশ্ব জুড়ে। স্বীকৃতি পেয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ঠিক পরের বছর ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথিবীর ১৮৮টি দেশে এ দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়। বর্তমানে প্রায় ১৯৩ টি দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়ে থাকে।

একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম। অন্যদিকে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে তারা কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। গত বছরের মতো এবারও কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতির কারণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সশরীরে শহীদ মিনারে আসেননি।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানান।

ভোরের আলো ফুটতে ফুটতে আবারো শহীদ মিনার বেদিতে শ্রদ্ধার পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ হতে থাকে। মহামারির কারণে কিছুটা সীমাবদ্ধতায় উদযাপিত হচ্ছে অমর একুশ। ‘অমর একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি ও সাব কমিটির’ বেঁধে দেয়া নিয়ম মেনে সংগঠনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজন আর ব্যক্তিপর্যায়ে দুজন শ্রদ্ধা জানাতে আসেন।

‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা’ - এমন টা মেনে নেয় নি বাংলার দামাল ছেলেরা। আজ থেকে ৭০ বছর আগে ১৯৫২ সালের এই দিনে ভাষার জন্য বুকের তাজা ঢেলে দিয়ে ছিনিয়ে এনেছিল মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষা বাংলা। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সফিউর এবং নাম না জানা শহীদের রক্তের বিনিময়ে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে জাতি পেয়েছে মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার।

“ভাষার জন্য যারা দিয়ে গেল প্রাণ ভুলি নি আমরা, ভুলি নি আমরা।” যত দিন বাংলা থাকবে, বাংলা ভাষা মাথা উঁচু করে থাকবে বিশ্ব পরিমণ্ডলে। সুর ছড়াতে থাকবে বাংলা ভাষার। আর জাতিও আজীবন সগর্বে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে ভাষা জন্য প্রাণ দেয়া প্রাণগুলোকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর