শিশু হত্যা করে জিনের উপর চাপানোর চেষ্টা ব্যর্থ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম,বগুড়া | 2023-08-26 13:40:02

বগুড়ার কাহালুতে সাবা মনি নামের দুই বছরের শিশু কন্যাকে হত্যা করে জিনের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সাবা মনি নামের ওই শিশুকে হত্যার ৬দিন পর তারা চাচা রেজওয়ানের নামে থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কাহালু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমবার হোসেন মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান,নিহত শিশুর বাবা কাহালু থানার দামাই গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় বাদীর চাচাতো ভাই রেজওয়ানকে আসামি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত শনিবার ( ১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাহাঙ্গীর হোসেনের দুই মেয়ে জেরিন ও সাবামনি প্রতিবেশী হাফিজারের বাড়ির পার্শ্বে বড়ই কুড়াতে যায়। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও দুই বোন বাড়ি না ফেরায় খোজাখুজি শুরু করে । এক সময় বড়ই গাছের নীচে সাবামনিকে মৃত এবং জেরিনকে সজ্ঞাহীন অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদেরকে উদ্ধারের পর রেজওয়ান ও তার পরিবারের লোকজন সাবামনির মৃত্যুর জন্য জিনকে দায়ী করে এলাকায় প্রচার চালায়। এছাড়াও জেরিন ও তার মা রুজি বেগমকে সঙ্গে করে রেজওয়ানের পরিবারের লোকজন বগুড়া শহরের কামারগাড়ি এলাকায় আল আমিন নামের এক জিন ছাড়ানো ফকিরের কাছে নিয়ে আসেন। আল আমিন জেরিনকে দেখে জানায় বদ জিন তাকে ধরেছে। জেরিনকে সুস্থ করতে হলে বদ জিনকে ধরে বোতলে বন্দী করতে হবে। এজন্য টাকা দিতে হবে সাড়ে ৫হাজার। জেরিনের মা'র কাছে টাকা না থাকায় সেখান থেকে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এদিকে রেজওয়ান ও তার পরিবারের লোকজন জিনের হাতে সাবামনির মৃত্যু হয়েছে প্রচার করে তড়িঘড়ি করে মরদেহ দাফন সম্পন্ন করে। শিশুটির বাবা- মা ফকিরের কথা শুনে জিন তার সন্তানকে মেরে ফেলেছে বিশ্বাস করে চুপচাপ থাকেন।

এদিকে গত বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জেরিন কিছুটা সুস্থ হয়ে জানায় তাদের চাচা রেজওয়ান সাবামনির মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় জেরিন চিৎকার করলে তার মাথাতেও লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। জেরিন সুস্থ হওয়ার পর থেকে রেজওয়ান আত্মগোপন করেন। পরে নিহত সাবা মনির বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন থানায় মামলা দায়ের করেন।

এদিকে আল আমিন নামের জিন ছাড়ানো ফকির বলেন, শহরের কামারগাড়ি এলাকায় লাখো দাওয়া এক দোয়া নামে তার চেম্বার রয়েছে। জেরিন নামের ওই শিশুকে গত শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর নিয়ে আসা হয়। তার অবস্থা এবং পরিবারের লোকজনের মুখে বর্ননা শুনে মনে হয়ে কোন এক বদ জিন ধরে থাকায় শিশুটির জ্ঞান ফিরছে না। শিশুটিকে সুস্থ করতে হলে বদ জিনকে বোতল বন্দী করতে হবে। এজন্য পারিশ্রমিক হিসেবে সাড়ে ৫ হাজার টাকা দাবি করি। তারা টাকা দিতে না পারায় জিনকে বন্দী করা যায় নি।

কাহালু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমবার হোসেন বলেন বাদীর অভিযোগটি হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। নিহত শিশুর মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করার ব্যবস্থা নিতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের অনুমতি পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর