এবার কৃষি জমিতে নজর পড়েছে পাথরখেকুদের

সিলেট, জাতীয়

নূর আহমদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 02:06:56

 

বিন্নি (বিরইন) ও কালিজিরা ধানের বাম্পার ফলন হয় যেখানে, সেই সোনালী ফসলের জমিতে এবার নজর পড়েছে পাথরখেকুদের। উচ্ছেদ আতংক এখন তাড়িয়ে বেড়ায় কৃষকদের। এরই মধ্যে গর্ত খূড়ে অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলনের ফলে বিলিন হয়ে গেছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী শতাধিক একরের শাহ আরফিন টিলা। এবার সমতল কৃষি ভুমিও রক্ষা পাচ্ছে না।

স্থানীয়দের মতে, সেখানকার মাটি খুবই উর্বর। এ মাটিতে শুধুমাত্র এই ধান নয়,হরেক রকম ফসলই ফলে। কালের বিবর্তনে সেখানে পড়েছে মানুষরূপী পাথরখেকুদের নগ্ন আচড়। পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে নির্বিচারে বিনষ্ট করা হচ্ছে শাহ আরেফীন টিলার আশপাশের কৃষি জমি। কখনো ভয় দেখিয়ে আবার কাউকে ম্যানেজ করে এসব কৃষি জমি হাতিয়ে নিচ্ছে শাহ আরফিন টিলায় গড়ে উঠা পাথরখেকু সিন্ডিকেট।

সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সামনে চলছে এমন ধ্বংসযজ্ঞ। তাদের যেন কিছু করার নেই। টিলার আশপাশের কৃষি জমিতে এখন সোনালী ফসল। বাতাসে দুল খাচ্ছে ধান। কৃষকরাও আনন্দ উচ্ছ্বাসে ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। তবে তারা বুঝে ফেলেছেন আগামীতে হয়তো তাদের শেষ জমিটুকুও থাকবেনা।

ছনবাড়ি গ্রামের রইছ আলী জানান, বিন্নি ধান ও কালিজিরা ধানের বাম্পার ফল হয় ঐ ভুমিতে। এখন আর সেই সুদিন নেই। শাহ আরফিন টিলার গর্তের সকল বালি এসে নষ্ট করে দিচ্ছে জমি। যে কিছু ভুমি আছে এসব ভুমিতে আগের মত ফলন হয়নি। তবে এখন ঐ জমি রক্ষা করতে পারলেই এলাকা বাঁচবে বলে জানান তিনি।

দেখা গেছে শাহ আরফিন টিলাকে ঘিরেই এখন চলছে ধবংসযজ্ঞ। এই টিলার উত্তর দিকে মতিয়ার টিলার অবস্থান। দুই টিলার মধ্যখানের ধানি জমি বিলিন হয়ে গেছে। এখন মতিয়ার টিলাও খুঁড়ে পাথর উত্তোলন চলছে। উত্তর দিকে সীমান্ত, পূর্ব দিকে চিকাডহর গ্রাম। কয়েকশ একর ধানি জমি ছিল সেখানে, তাও বিলিন হয়ে গেছে। পশ্চিম দিকে ছনবাড়ি গ্রাম। মধ্যখানে কিছু জমি রয়েছে। বর্তমান কিছু জমি চাষ চলছে। তবে সেগুলোও বেশি দিন থাকবে বলে মনে হয় না স্থানীয়দের। টিলার দক্ষিণে ঝালিয়ারপার এলাকায় ধানি জমি থেকে অবাদে পাথর উত্তোলন চলছে।

স্থানীয়রা জানায়, শাহরফিন টিলায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মুল নায়ক মোহাম্মদ আলী। অল্প জমি নিজের নামে ইজারা নিয়ে পরবর্তীতে হাইকোর্ট এর একটি নির্দেশনা দিয়ে দোহাই দিয়ে পুরো এলাকা জুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছেন। স্থানীয় জালিয়ারপারের বশর, হুশিয়ার, চিকাডহর গ্রামের আনাই, আঞ্জু, আইয়ুব আলী এবং পাড়ুয়ার গ্রামের বিলাল এই ধ্বংসযজ্ঞের অন্যতম হোতা। টিলা ধ্বংস করার পর এখন ধানি জমির উপর নজর পড়েছে তাদের।

আব্দুর রহিম নামের এক বাসিন্দা জানান, প্রশাসনিক উদ্যোগ,আইনি পদক্ষেপ এবং ব্যাপক জনসচেতনতাই পারে এই ধ্বংসলীলা বন্ধ করতে। না হয় একদিন এই ধানক্ষেত গুলোও বিনষ্ট হয়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে চিরতরে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজলো কৃষি কর্মকতা মো. জাকির হোসেন জানান, অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলনের ফলে বর্জ্য এসে পুরো ধানি জমি নষ্ট করে দিচ্ছে। কেউ কেউ বাধা দিয়ে দিচ্ছেন। তবে এভাবে অব্যাহত থাকলে দু এক বছরের মধ্যে পুরো ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাবে। এখনি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী র্কমকর্তা বিজেন ব্যানার্জী জানান, পুরো এলাকাটাই এখন হুমকির মুখে। প্রায় সময়ই পাথরের গর্তে পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছে। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। জেলা প্রশাসকও এলাকা পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

তবে বিজেন ব্যনার্জী বলেন, কৃষি জমি রক্ষায় প্রশাসন আন্তরিক রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর