‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য বিদেশিদের চাপ থাকবে’

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-28 11:16:09

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করলে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য বিদেশিদের পরোক্ষ চাপ থাকবে। তবে বিদেশিদের চাপ সরকার কিভাবে নিবে তা বলা কঠিন।

শনিবার (০৯ এপ্রিল) এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা নিয়ে এক ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

ড. আকবর আলি খান বলেন, ভালো নির্বাচনের জন্য পাকিস্তানের বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা অনুসরণ করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে, যেখানে সাবেক প্রধান বিচারপতি সরকার প্রধান হিসেবে কাজ করেন এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা নির্বাচন পরিচালনায় সম্পৃক্ত থাকেন। নির্বাচনকালীন সরকারসহ জাতীয় পর্যায়ে অমীমাংসিত বিষয়ে গণভোটের বিধান চালু করলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজতর হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে শতভাগের অধিক ভোট পেয়েও নির্বাচিত হওয়ার নজির রয়েছে। এ ধরণের ঘটনায় নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের থাকলেও তা প্রয়োগ করা হয়নি বরং জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। সেই জন্য বর্তমান কমিশনকে সাহসী হতে হবে।

তিনি বলেন, অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে জেলা জজদের রিটার্নিং কর্মকতা নিয়োগ করা যেতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থায় সরকারি দল না চাইলে নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন সহজ নয়। তবে দীর্ঘস্থায়ী গণআন্দোলনের মাধ্যমে পরিবর্তন আনা সম্ভব, সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি।

ড. আকবর আলি খান আরও বলেন, আইন অনুযায়ী নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তারা নির্বাচন পরিচালনায় সম্পৃক্ত থাকেন। রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে নির্বাহী বিভাগ ক্ষমতাসীনদের নির্দেশনার বাইরে যেতে পারেন না, এমনকি তারা ভবিষ্যৎ বেনিফিট নেওয়ার চিন্তা করে। তাই বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থায় শুধু নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। ইসির সঙ্গে চলমান সংলাপে পেশাজীবী প্রতিনিধিদের বেশিরভাগই নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার বিষয়ে নানা প্রস্তাব করেছেন। অনেকে মনে করছেন সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনকালীন সরকার কি হবে তার জন্য আইন ও সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হলে ইসি সরকারকে সেটি প্রস্তাব করবেন। কিন্তু সে বিষয়ে সর্বশেষ সংলাপের আলোকে ইসি বলেছেন ‘নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি রাজনৈতিক নেতারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ইসি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে কি না তা বোঝার জন্য আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।

নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ১০ দফা সুপারিশ করেন।

সুপারিশগুলো হল-

>> সর্বশেষ দুই নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার বিভিন্ন দিক চিহ্নিত করে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার জন্য রোডম্যাপ তৈরি করা।

>> মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে শুরু করে নির্বাচন প্রক্রিয়া সর্বস্তরে সকল প্রার্থীর জন্য সমতল ক্ষেত্র তৈরি করা।

>> নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন নির্মোহ পেশাজীবীদের সাথে আলোচনাকালে যে সকল প্রস্তাব এসেছে সেগুলো প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা।

>> জেলা প্রশাসকদের বদলে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া।

>> পূর্বের নির্বাচন ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা অথবা অন্য কোন ব্যক্তি আইন ভঙ্গ করে নির্বাচনী অপরাধ করে থাকলে তা চিহ্নত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া।

>> নির্বাচনের পূর্বে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ দূর করতে ইসিকে সরকারের সাথে আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।

>> অকারণে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি না হয় সেদিকে ইসিকে দৃষ্টি দেয়া।

>> যেসব আইনের দ্বারা নির্বাচনকালীন সময়ে গণমাধ্যম বাঁধা সম্মুখীন হতে পারে সাংবাদিকদের জন্য সে আইন শিথিল করা।

>> নারী ও সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোট পূর্ববর্তী ও পরবর্তী প্রতিহিংসা রোধের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

>> গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে বাধা তৈরি হলে প্রয়োজনে ইসিকে পদত্যাগের সৎ সাহস রাখা।

প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করে। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ছায়া সংসদের বিষয় ছিল- বর্তমান নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হবে।

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক শাকিলা জেসমিন ও সাংবাদিক কাজী জাবেল। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর