নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ পুলিশ, সেল ও কমিটি গঠন

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 21:08:47

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশ জুড়ে চলছে নির্বাচনী আমেজ। নির্বাচনের এই উৎসব মুখর আমেজ শেষ পর্যন্ত থাকবে কিনা তা নিয়ে কিছুটা হলেও সংশয় রয়েছে বিভিন্ন মহলে।

যদিও সরকারি দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে বার বার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে নির্বাচন হবে সুষ্ঠু। তবে ক্ষমতাসীনদের আশ্বাসের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছেনা বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দল। তারা বরাবরের মতো নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ করে আসছে।

ইতিমধ্যে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এছাড়া ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রশাসনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার চেয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে ইসিতে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচনের পরিবেশকে সুষ্ঠু রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোন কর্মকাণ্ডই সংগঠিত হতে তারা দেবে না বলে বিভিন্ন সময় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত  করেছে পুলিশ। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং সমন্বয় কমিটি ও সেল গঠন করেছে পুলিশ।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত এক সভায় ৬ ও ৮ সদস্যের পৃথক কমিটি ও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। এলাকা ভিত্তিক সেলের কার্যক্রম ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

কার্যক্রমগুলো হল- নির্বাচন কমিশনের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রতিপালন। নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর থেকে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান। শান্তিপূর্ণ সুশৃংখলভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনানুগ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে সার্বক্ষণিকভাবে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাকর্মচারীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান।

বিভিন্ন সংস্থা (নির্বাচন কমিশন, সিভিল প্রশাসন, নির্বাচন অফিস, গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার) ইত্যাদির সঙ্গে সমন্বয় সাধন। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজে সম্পৃক্ত সকল সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষেত্রে আইনানুগ বিধি-বিধান প্রতিপালন পেশাদারিত্ব ও যথাযথ সর্তকতা অবলম্বন এবং যথাসম্ভব দলবদ্ধভাবে অবস্থান করার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত নির্বাচন সংস্কার সংক্রান্ত তথ্য ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার ইউটিউব, ব্লগ এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভ্রান্তিমুলক পোস্ট মন্তব্য বা ছবি আপলোডকরণ মনিটরিং ও বিভ্রান্তিমুলক পোস্ট অপসারণে সংশ্লিষ্ট পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান।

গার্মেন্টস শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, ছাত্র সংক্রান্ত যেকোন বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গুরুত্ব সহকারে মোকাবেলার ক্ষেত্রে পরামর্শ প্রদান এবং নজরদারি বৃদ্ধি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা প্রদান। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত অনাকাঙ্ক্ষিত কোন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনানুগ পদ্ধতিতে সমাধানের গ্রহণের পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান।

পুলিশ সদস্যদের আচরণ কর্মকাণ্ড মনিটরিং করা যাতে সামগ্রিকভাবে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি সমুন্নত থাকে।

নির্বাচন উপলক্ষে গৃহীত নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা। অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ অন্যান্য রায়ট সামগ্রী স্টক যাচাই এবং প্রয়োজনে চাহিদাকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সমন্বয় সাধন।

সহিংসতা নৈরাজ্য অপতৎপরতার কাজে জড়িত ব্যক্তিদের ওপর নগর বিশেষ শাখা/জেলা বিশেষ শাখার নজরদারি বৃদ্ধি করাসহ আগাম তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম জোরদার করণের লক্ষ্যে পরামর্শ প্রদান করা।

সূত্র মতে, এই পর্যবেক্ষণ কমিটির প্রধান হলেন, পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী ও সেলের প্রধান এলিট ফোর্স র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ।

কমিটির সহ-সভাপতি হলেন অতিরিক্ত আইজিপি (অ্যাডমিন অ্যান্ড অপারেশনস) মোখলেসুর রহমান ও সদস্য সচিব ডিআইজি (অপারেশনস) আনোয়ার হোসেন।

এছাড়া কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, অতিরিক্ত আইজিপি (ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) মইনুর রহমান চৌধুরী, অতিরিক্ত আইজিপি (টিঅ্যান্ডআইএম) ইকবাল বাহার ও এআইজি (অপারেশনস) সৈয়দ তরিকুল হাসান।

এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশও জারি করা হয়েছে। অফিস আদেশে গঠিত সেল সদস্যদের দেশের পৃথক পৃথক এলাকার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

সূত্রটি আরও জানায়, র্যাব মহাপরিচালক ( ডিজি) বেনজীর আহমেদ ও হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম রাজশাহী মেট্রোপলিটন, রংপুর মেট্রোপলিটন, রাজশাহী রেঞ্জ ও রংপুর রেঞ্জে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করবেন।

অন্যদিকে, ঢাকা মেট্রোপলিটন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন, ঢাকা রেঞ্জ ও ময়মনসিংহ রেঞ্জের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া ও কাউন্টার টেররিজমের স্পেশাল অ্যাকশন ইউনিটের উপ-কমিশনার প্রলয় কুমার জোয়ারদারকে।

খুলনা মেট্রোপলিটন, বরিশাল মেট্রোপলিটন, খুলনা রেঞ্জ ও বরিশাল রেঞ্জের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত আইজিপি মীর শহীদুল ইসলাম ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলামকে।

এছাড়া চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন, সিলেট মেট্রোপলিটন, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও সিলেট রেঞ্জের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত আইজিপি শফিকুল ইসলাম ও পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি হাবিবুর রহমানকে।

পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রতি নির্বাচনের আগেই সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য পুলিশ সদর দফতর থেকে এমন একটি মনিটরিং কমিটি ও সেল গঠন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও করা হয়েছে।

তিনি বলেন, নির্বাচন ও নির্বাচনী পরিবেশকে সুষ্ঠু রাখতে গৃহিত সকল পদক্ষেপ এ কমিটি ও সেলের মাধ্যমে সার্বিকভাবে পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হবে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর