নওগাঁয় বার্গার-পিৎজা খেয়ে ৫০ শিশু হাসপাতালে

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ | 2023-08-25 23:43:30

নওগাঁয় শহরের আরামবাগ কনফেকশনারি নামের একটি বেকারি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত বার্গার ও পিৎজা খেয়ে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) রাবাবি জান্নাত (২৩) নামের এক শিক্ষার্থীসহ ৫০জন শিশু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

বুধবার (৪ মে) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নওগাঁ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আনছার আলী।

জানা যায়, ঈদের আগের দিন সন্ধ্যা ও মধ্য রাতের দিকে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়। নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুদের অভিভাবকরা জানান, নওগাঁ শহরের বাটার মোড়ে অবস্থিত আরামবাগ কনফেকশনারি নামক বেকারি থেকে পিৎজা ও বার্গার কিনে খাওয়ার পরপরই তাদের পেটে ব্যথা ও বমির সঙ্গে পাতলা পায়খানা শুরু হয়। পরে স্বজনরা তাদের নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করান।

হাতপাতালে ভর্তি হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থী রাবাবি জান্নাত বলেন, আমার বাসা শহরের এটিম মাঠের পাশে। চাঁদরাতে ১১টার দিকে দুটি বার্গার কিনে বাসায় এসে একটু গরম করে আমি ও আমার ছোট ভাই খাওয়ার এক ঘণ্টা পর বমি হতে শুরু করে। এরপর পেটে প্রচন্ড ব্যাথা হয়। তারপর আমার বাবা রাত সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। এখন পেট ব্যাথা কমলেও পাতালা পায়খানা হচ্ছে।

শহরের উকিল পাড়ার বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় আরামবাগ কনফেকশনারি থেকে দুইটি বার্গার ও দুইটি পিৎজা কিনে নিয়ে বাসায় গিয়ে আমার ১০ বছরের ছেলে শাফায়াত ও ১৪ বছরের ছেলে শাদাতকে খাওয়ানোর কিছুক্ষণ পর বমি ও পেট ব্যাথা শুরু হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করাই। ওই দোকানের খাবার খেয়েই আমার দুই সন্তান অসুস্থ হয়েছে। দোকান মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের গ্রামের মাহবুবু আলম বলেন, আমি দুটি বার্গার কিনে ৬ বছরের ছেলে সানিমকে খাওয়ানের পর পেট ব্যাথা ও বেশ কয়েকবার বমি হয়। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করায়। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ডাক্তার বলেছে ফুড পয়জনিং হওয়ার কারণে সন্তান অসুস্থ হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে আরামবাগ কনফেকশনারির মালিক কাজী খালেক বলেন, আমরা ৭-৮ বছর যাবৎ ব্যবসা করছি। এর আগে কখনো আমাদের উৎপাদিত খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়নি। আমরা চেষ্টা করি মানসম্মত খাবার তৈরি করতে। সেই সাথে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে খাবার তৈরি করে থাকি। হঠাৎ কেন এত মানুষ অসুস্থ হলো বার্গার ও পিৎজা খেয়ে সেটা আমিও বুঝতে পারছি না। যারা অসুস্থ হয়েছে তাদের পরিবার ও অসুস্থদের সাথে যোগাযোগ করছি। যদি আমার দোকানের খাবার খেয়ে অসুস্থ হয় তবে আমার পক্ষ থেকে যা যা করার দরকার আমি করবো।

নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মো. আনছার আলী জানান, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। অসুস্থ কয়েকজনকে ইতোমধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি বাকিদের সুস্থ হতে একটু সময় লাগবে। বর্তমানে ৪৮ জনের মত হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে হলে নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ঘটনাটি জানার পর আমরা হাসপাতালে গিয়েছিলাম। প্রায় ৫০ জনের মত ভর্তি আছে। রোগী ও স্বজনদের সাথে কথা বলেছি। তারা বলছেন যে, বার্গার ও পিৎজা খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ জানালে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যৌথভাবে।

নওগাঁ ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর নওগাঁর উপ-পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় আরামবাগ কনফেকশনারির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঈদের আগে অধিক মুনাফা লাভের আশায় দ্রুত মানহীন খাদ্যপণ্য তৈরি ও বিক্রয় করে থাকে অনেক ব্যবসায়ী। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আমরা সার্বিক বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান জানান, বিষয়টি জানার পর সদর উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) মির্জা ইমাম উদ্দিনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি আমরা অধিকতর তদন্ত করছি। রোগী ও অবিভাবকরা অভিযোগ করেছেন যে ওই কনফেকশনারির খাবার খেয়েই অসুস্থ হয়েছেন। আমরা সাবির্ক বিষয় তদন্ত করে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর