সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়ে জুড়ে বাঘের বিচরণ, আতঙ্কে মানুষ
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খেজুরবাড়ীয়া গ্রামে বৃহস্পতিবার রাতে পূর্ব সুন্দরবন থেকে ঢুকে পড়া বাঘটি লোকালয়ের ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিচরণ করছে।
শুক্রবার রাত ৮টার দিকে শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের বানিয়াখালী গ্রামে বাঘ দেখে গ্রামবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এরপর মাইকিং করে গ্রামবাসীকে সতর্ক করা হয়।
শনিবার সকালে বাঘটির পায়ের ছাপ দেখে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন বনবিভাগ ও এলাকাবাসী। গত দুই রাতে শরণখোলা উপজেলার ভিন্ন ভিন্ন গ্রামে বাঘের বিচরণ দেখে গোটা শরণখোলা উপজেলা জুড়ে মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
শরণখোর খোন্তাকাটা ইউপি মেম্বার ছিদ্দিক গাজী জানান, শুক্রবার রাত ৮টায় দিকে সুন্দরবন থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে শরণখোলার পশ্চিম বানিয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠ থেকে গরু আনতে যান স্থানীয় বাসিন্দা কামাল হোসেন হাওলাদার। এ সময় টর্চ লাইটের আলোতে তিনি গরুর পাশে সুন্দরবনের একটি বাঘ দেখতে পান। এ সময় তার ডাক-চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এসে লাঠি-সোটা নিয়ে তাড়া করলে বাঘটি পালিয়ে যায়। সকালে পায়ের ছাপ দেখে বাঘটিকে খোঁজা হচ্ছে বলে তিনি জানান। এনিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে চরম বাঘ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। লোকজন রাতে বাঘের ভয়ে ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। দিনেও বের হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না অনেকেই।
পূর্ব সুন্দরবনের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুস সবুর জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খেজুরবাড়ীয়া গ্রামের ইউপি সদস্য মো. আবুল হোসেন খাঁনের মাছের ঘেরে পাহারা দেয়ার সময় টর্চ লাইটের আলোতে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখতে পাওয়া যায়। পরে মাছের ঘেরের লোকজনের ডাক চিৎকারে বাঘটি পালিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে সুন্দরবন থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্বের দিকে শরণখোলার পশ্চিম বানিয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে গরু আনতে গিয়ে টর্চ লাইটের আলোতে একটি বাঘ দেখতে পায় কৃষক কামাল হোসেন হাওলাদার।
শনিবার সকালে এলাকাবাসীদের সাথে নিয়ে বনরক্ষীরা বাঘটির পায়ের ছাপ দেখে খুজে বের করার চেষ্টা করছেন। এর আগে ৩১ মার্চ রাজাপুর গ্রামের সোবাহান হাওলাদার বাড়ীতে ঢুকে একটি মহিষের উপর আক্রমন করে বাঘ। সুন্দরবনের ভোলা নদী ভরাট হওয়ার কারণে সুন্দরবন সংলগ্ন এই লোকালয়ে মাঝে মধ্যেই বাঘ ঢুকে পড়ছে। মাসাধিককাল ধরে প্রায়ই শরণখোলা উপজেলায় সুন্দরবন সংলগ্ন রাজাপুর, দাসেরভারানী, খেজুরবাড়ীয়া, টগড়াবাড়ী এলাকার লোকালয়ে বাঘ ঢুকে পড়ছে। এখন বাঘ লোকালয়ের ১০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। যা বন বিভাগকে চিন্তায় ফেলেছে। লোকালয়ে আসা বাঘ যাতে মানুষের হাতে মারা না পড়ে বা বাঘটি জানমালের কোন ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য বনকর্মীরা সব সময় সতর্ক রয়েছে। বাঘটি সুন্দরবনে ফিরিয়ে নেয়ায় জন্য বনরক্ষী ও গ্রামবাসী মিলে পাহারা দিচ্ছেন।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, লোকালয়ে সুন্দরবনের বাঘ ঢুকে পড়ার বিষয়ে কমিউনিটি পেট্রোলিং দল (সিপিজি) ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরটি) এর সহযোগিতায় গ্রামে গ্রামে মাইকিং করাসহ জনসাধারণকে সচেতন করা হচ্ছে। লোকালয়ের বাঘ সুন্দরবনে ফিরিয়ে আনতে বন রক্ষীদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়া শরণখোলা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইকরাম হোসেন বলেন, সুন্দরবন থেকে ১০ কিলোমিটার ভিতরের লোকালয়ে বাঘ ঢুকে পড়ার খবর পেয়ে ওই রাতেই পুলিশের একটি দল বানিয়াখালী গ্রাম পরিদর্শন করেছে। এরপর মাইকিং করে গ্রামবাসীকে সতর্ক করা হয়েছে।