ধান-সয়াবিন নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা, কেটে ফেলার আহ্বান কৃষি বিভাগের

, জাতীয়

মীর ফরহাদ হোসেন সুমন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর | 2023-08-27 22:02:58

প্রকৃতিক দুর্যোগ ও আবহাওয়া অনূকূলে না থাকার কারণে মাঠে থাকা বোরো ধান এবং সয়াবিনসহ বিভিন্ন রবি শস্য নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে লক্ষ্মীপুরের কৃষকরা। মাঠে এখনো যাদের কাঁচা ধান এবং সয়াবিন আছে তারা সেগুলো নিরাপদে ঘরে তোলা নিয়ে আতঙ্কে আছে।

অন্যদিকে, ঝড়ো বাতাসে কিছু কিছু ধান গাছ মাটিতে ভেঙে পড়ায় সেগুলো অনেকাংশে নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া সয়াবিন ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষি বিভাগ বলছে, মাঠের ধান ৮০ শতাংশ পাকলে কেটে ফেলার উপযুক্ত হয়। আর যে সকল ক্ষেতের সয়াবিন গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে সেগুলো তুলে ফেলা যায়।

তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মাঠের ফসল রক্ষার্থে দ্রুত কেটে ফেলার আহ্বান জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।


কৃষকরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হওয়ায় ক্ষেতে পানি জমে যাচ্ছে। ফলে ফসল কাটতে কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে।

এদিকে, বাড়ির উঠানে থাকা ধান নিয়ে ভোগান্তিতে রয়েছে গৃহস্তরা। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে ধান শুকানোর কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলাতে ৩৫ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে, আর সয়াবিনের আবাদ হয়েছে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে। ৯ মে পর্যন্ত মাঠ থেকে ধান কর্তন করা হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। আর সয়াবিন তোলা হয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। 

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের চরআলী হাসান গ্রামের কৃষক হারুনুর রশিদ বলেন, ৪০ শতাংশ জমিতে সয়াবিন এবং ৮০ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছি। সয়াবিনগুলো এখনো কাঁচা। ধান কিছুটা কাটা হয়েছে। তাই ক্ষেতের ফসল নিয়ে এখনো শঙ্কায় আছি। সয়াবিন ক্ষেতে পানি জমে আছে, সয়াবিনে পানি লাগলে সেগুলোর রং কালো হয় যায়।

একই এলাকার কৃষক নুর আলম বলেন, এক একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেছি। সেগুলো এখনো ক্ষেতে। বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষেতে পানি জমে আছে। পানি নামার কোন ব্যবস্থা নেই।


কৃষক রহিম ঢালী বলেন, বোরো ধানের ক্ষেতে পানি জমে আছে। ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তবে হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে ধান কাটার ব্যবস্থা থাকলেও ক্ষেতে পানি থাকার কারণে প্রতি একরে দুই হাজার টাকা বাড়তি দিয়ে কাটতে হচ্ছে। ক্ষেত শুকনো থাকলে সময় এবং টাকা কম লাগতো।

আরেক কৃষক সফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ক্ষেতে থাকা ধান এখনে ভালোভাবে পাকেনি। এরই মধ্যে ঝড়ো বাতাসে ধান গাছ ভেঙে জমিতে বিছিয়ে গেছে। এতে পানি এবং পোকা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।  কাঁচা থাকায় কাটতেও পারছি না।

কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ধান নিয়ে খুব বিপদে আছি। এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে মাঠের ধান শুকিয়ে ঘোলায় না তোলা পর্যন্ত আমাদের দুঃচিন্তা কাটবে না। ইতোমধ্যে যেগুলো কেটে ঘরে তুলেছি, সেগুলো শুকানো নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি এবং পর্যাপ্ত রোধ না থাকায় শুকনো ধান ঘোলায় তুলতে পারছি না।

লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, এবার ধান এবং সয়াবিনের ফলন ভালো হয়েছে। তবে ঘুর্ণিঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষেতে থাকা ফসল নিয়ে কৃষকরা দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে। তাই আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি- দ্রুত ফসল ঘরে তোলার। ক্ষেতের ধান ৮০ শতাংশ পাকলে কাটার উপযোগী হয়। আর সয়াবিন গাছের পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে সেগুলো তুলে ফেলার উপযুক্ত হয়৷

এ সম্পর্কিত আরও খবর