বিলে জলাবদ্ধতা, ফসল নিয়ে কৃষকদের দুঃশ্চিন্তা

, জাতীয়

কল্লোল রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম | 2023-08-31 23:40:31

টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার মাদাইডাঙ্গা বিল পানিতে টইটুম্বুর। হাজার হেক্টরেরও বেশি আয়তনের এ বিলে আবাদ করা বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। পানি নিষ্কাশনের সুবিধা না থাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় হাজারো কৃষক। বিলের পানি নিষ্কাশনে স্থায়ী ও টেকসই ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ও শৌলমারী ইউনিয়নের বিশাল এলাকা জুড়ে মাদাইডাঙ্গা বিল। বিলটি এক ফসলি। এ বিলে প্রায় দেড় হাজার কৃষকের এক হাজার হেক্টরেরও জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ হেক্টর জমিতে সারা বছর পানি থাকে। বাকি প্রায় ৭শ হেক্টরেরও বেশি আয়তনের জমিতে বোরো চাষ হয়। তবে নিষ্কাশনের সুবিধা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে ধান নষ্ট হয়ে যায়। বিলটি শৌলমারী ইউনিয়নের বড়াইকান্দির পুড়ারচর গ্রাম থেকে উত্তরে গোবরারগ্রাম পর্যন্ত চার কিলোমিটার দীর্ঘ এবং দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ঝগড়ারচর গ্রাম থেকে বংশীরচর গ্রাম পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার প্রশস্ত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাদাইডাঙ্গা বিলের কিছু অংশে মাছের ঘের। বেশিরভাগ জমিতে চাষ করা হয়েছে বোরা ধান। বৃষ্টির পানিতে বিলের অনেক জায়গায় বোরো ক্ষেত ডুবে গেছে। অনেকে বাধ্যৃ হয়ে ডুবন্ত ধান কেটে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। 

দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ঝগড়ারচর গ্রামের কৃষক আনিছুর রহমান জানান, বিলে তাদের ১০ বিঘা জমি রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে বোরো ধান ছাড়া অন্য ফসল চাষ করা যায় না। আবার বৃষ্টি হলে অনেক সময় ধান ঘরে তুলতে পারেন না, জমিতেই নষ্ট হয়ে যায়। এতে জমির ধান পানিতে তলিয়ে যায়। অনেক সময় ধান ঘরে তুলতে পারলেও পানিতে নষ্ট হওয়ায় ফলন কম হয়।

গবরার গ্রামের কৃষক আবুল হাশেম বলেন, ওই বিলে আমাদের সাত বিঘা জমি রয়েছে। প্রায় সারা বছর পানি জমে থাকে। ওই জমিতে কেবল বোরো আবাদ হয়। কিন্তু বৃষ্টির পানি জমে গিয়ে সে আবাদও নষ্ট হয়ে যায়।'

শৌলমারী ইউনিয়নের ঝগড়ারচর মাঝিপাড়া এলাকার কৃষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হানিফ জানান,বিলটিতে তার ৩ হেক্টর জমি বছরের বেশির ভাগ সময় জলাবদ্ধ থাকে। বিলের পানি নিষ্কাশন করতে পারলে শস্যািবর্তনের মাধ্যেমে বছরে ২-৩ বার ফসল চাষ করা সম্ভব। পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের উদ্যোগ কামনা করেন তিনি।

মাদাইডাঙ্গা বিলে জমি আছে কৃষক কারু মিয়া, ময়েনউদ্দিন, শহিদুল ইসলাম, শাহালম, দীন মোহাম্মদ, রহিজ উদ্দিনসহ আব্দুর রহিম ও জাহিদুল ইসলামসহ অনেকেন। তাদের দাবি, বিলে বোরো চাষ করে জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে বিপাকে পড়ছেন তারা। ধান কাটার আগ মহূর্তে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় তাদের ফসল তোলা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যিবস্থা নিলে ওই বিলে অন্তত দুইবার ধান আবাদ করা সম্ভব। এতে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন তেমনি ধানের উৎপাদনও বাড়বে।

বাসদ নেতা মহি উদ্দিন মহির বলেন,‘মাদাইডাঙ্গা বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্যন প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি ক্যানেল (খাল) তৈরি করা প্রয়োজন। এটি ঝগড়ারচর গ্রামের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে শুরু করে পুড়ারচর হয়ে টাপুরচর এলাকার সোনাভরী নদীতে গিয়ে পড়বে। তাহলে বিলের পুরো এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে। এতে করে ওই বিলে থাকা জমির কৃষকদের অভাবনীয় উপকার হবে।’

দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, ‘ পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় যুগ যুগ ধরে জলাবদ্ধতার কারণে অনাবাদি থেকে যাচ্ছে বিলের জমি। বিষয়টি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেছেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেবেন।’

কৃষকদের দাবির সাথে একমত পোষন করে রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ' বিলটি এক ফসলি। তাও জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রন্থ হয়। বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করতে পারলে বোরো  ও আমন দুই মৌসুমেই আবাদ করা সম্ভব হবে।'

পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, 'এ কাজ আমাদের দপ্তরের নয়, উপজেলা পরিষদের সেচ ও পুনর্বাসন কমিটি এসকল কাজ করে থাকে। তবে ওই বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যেবস্থার জন্যক বিশেষ প্রকল্প নিলে ভালো হয়। আগামী মাসিক সভায় বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের সামনে তুলে ধরা হবে।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর