বেনাপোল বন্দরের দুর্বল অবকাঠামোয় লোকসানে ব্যবসায়ীরা!

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর) | 2023-08-27 23:12:52

বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি চাহিদা বাড়লেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে না উঠায় বাণিজ্যের পরিমাণ কমে এসেছে অর্ধেকে। এতে চরম ভোগান্তি আর হয়রানির মধ্য দিয়ে বাণিজ্য করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। অবশেষে এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কর্মবিরতি মত কঠিন কর্মসূচির ডাক দিতে বাধ্য হয়েছে পণ্য পরিবহনকারী বাণিজ্যিক সংগঠন বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতি। ১৭ মে থেকে পণ্য উঠা-নামানো থেকে বিরত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন এ সংগঠনটি। তাদের এ কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছে বন্দরের অন্য ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারাও।

এদিকে বন্দর কর্মবিরতির কবলে পড়লে বড় ধরনের অচলাবস্থায় আমদানি কারকরা ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বন্দর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন আমদানিকারকরা।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার আজিজুর রহমান জানান, বন্দরে পণ্যগার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা চাহিদা মত পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। বেনাপোল বন্দরে ঢোকার অপেক্ষায় ওপারে এক থেকে দেড় মাস ধরে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকছে। এতে আমদানি কমায় রাজস্ব আয় দিন দিন মারাত্মক হারে কমে এসেছে।

ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, দেশে সরকার অনুমোদিত মোট ২৪টি স্থলবন্দর আছে। এর মধ্যে মাত্র ১২টি বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি হয়। অন্যান্য বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যের আগ্রহ না থাকায় এ পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু হয়নি। অযথা হাজার হাজার কোটি টাকা এসব বন্দরে খরচ করে অর্থ অপচয় করা হয়েছে। অথচ বেনাপোল বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যের আগ্রহ বেশি থাকলেও এ বন্দরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন হচ্ছে না।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর থেকে আমদানি পণ্য হতে সরকারকে ৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে নিরাপদভাবে বাণিজ্য সম্পাদনের পরিবেশ আজও বন্দর কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। বেনাপোল বন্দরের ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৪৫ হাজার মেট্রিক টন পণ্যের। বন্দরে বর্তমানে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন আমদানি পণ্য নিয়ে ভারতীয় ট্রাক খালাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। এসব ট্রাকে শিল্প কলকারখানার কাঁচামাল ও সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের নির্মাণধীন যন্ত্রপাতি রয়েছে। জায়গার অভাবে এসব পণ্য খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে প্রতিদিন ট্রাকপ্রতি ৩ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। পণ্য ছাড় করাতে না পারায় দেশের শিল্পকলকারখানার উৎপাদন ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত হচ্ছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৬শ ট্রাক পণ্য আমদানির চাহিদা থাকলেও বন্দরে জায়গা সংকটে ৩শ ট্রাকের বেশি পণ্য আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া রফতানি বাণিজ্যও বিঘ্নিত হচ্ছে। বন্দরে ভারি পণ্য উঠা-নামানোর কাজে ব্যবহৃত ক্রেন ও ফর্কক্লিপ বেশি ভাগ সময় অচল হয়ে পড়ে থাকায় পণ্য খালাসে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি ব্যবসায়ীদের। তবে বন্দরের নানান অব্যবস্থাপনায় লোকসানের কবলে পড়ে অনেক ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে বেনাপোল বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে গেছে। কর্মবিরতি পালনের আগে বন্দরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জাানান এ ব্যবসায়ী নেতা।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, ইতিমধ্যে বন্দরে জায়গা অধিগ্রহণ করে নতুন পণ্যগার তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। আরও জায়গা অধিগ্রহণের কাজ চলছে। তবে এসব কাজ শেষে হতে আরও আড়াই বছরের মত সময় লাগবে। তবে দ্রুত পণ্য খালাসে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষকে নতুন ক্রেন ও ফর্কক্লিপ কেনার জন্য বলা হয়েছে।

কর্মবিরতি যাতে প্রত্যাহার করা হয় তার জন্য ট্রান্সপোর্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর