নওগাঁয় কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমির আম

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ | 2023-08-31 16:24:20

নওগাঁয় শুক্রবার রাতে জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায় কালবৈশাখী ঝড়। এতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এতে জেলার প্রায় ৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমির কাঁচা আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন মৌসুমি ফল ও সবজির ক্ষেত। উড়ে গেছে শত শত ঘরের টিনের চালা। উপড়ে গেছে অনেক গাছ। গাছের ডাল পড়ে তার ছিঁড়ে অনেক স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।


শনিবার (২১ মে) সকালে জেলার সাপাহার, পোরশা ও পত্নীতলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাগানে-বাগানে মাটিতে পড়ে আছে ঝরে পড়া আম। কোনো কোনো বাগানে ঝরে যাওয়া আম কুড়িয়ে বাগানের এক জায়গায় স্তুপ করে রাখা হয়েছে। ঝরে পড়া এসব আমের অধিকাংশই ফেটে নষ্ট হয়েছে। কোনো কোনো বাগানে আমের গাছ উপড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়াও আমগুলোর সিংহভাগই অপরিপক্ব। ছোট ও মাঝারি সাইজের এসব অপরিপক্ব আম বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বস্তা টাকা দরে। অর্থাৎ এক বস্তায় প্রায় ৫০ কেজি আম ধরে বলে জানা যায়। গ্রামের নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরীর কুড়ানো এসব আম পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে আড়তে নিচ্ছেন। পরে আড়ত থেকে ট্রাকযোগে এসব আম যাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে ৬০ ভাগেরও বেশি আম উৎপাদন হয় পোরশা ও সাপাহার উপজেলায়। সকালে সাপাহার উপজেলার মানিকুড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঝড়ে আম কুড়ে এনে বাগানের একটি স্থানে স্তুপ রাখছেন আম চাষী আমিনুলসহ ছয়-সাত জন শ্রমিক।



আম চাষী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘৮০ বিঘা জমি জুড়ে তার দুটি বাগান রয়েছে। রাতের ঝড়ে তার দুই বাগানে প্রায় ১০০ মণ আম ঝরে পড়েছে। বাগানের চার ভাগের এক ভাগ আমই ঝরে গেছে। ঝরে পড়া এসব আম বাজারে দুই টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অথচ পরিপক্ক অবস্থায় এসব আম বাজারে বিক্রি করলে কমপক্ষে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো।’

পত্নীতলা উপজেলার রূপগ্রাম এলাকার বাসিন্দা আম চাষী সোহেল রানা বলেন, তার ১২০ বিঘার বাগানে ৮০ শতাংশের বেশি আম্রপালি জাতের গাছ রয়েছে। আম্রপালি গাছ ছোট হওয়ায় এসব গাছে ঝড়ে আম ঝরেছে। তবে আশ্বিনা, নাক ফজলী ও ল্যাংড়া জাতের গাছগুলো বড় হওয়ায় এসব গাছের প্রায় ২০ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে।

নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত নওগাঁয় ঝড়-বৃষ্টি হয়। এসময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার। বৃষ্টি হয়েছে ৪৩ মিলিমিটার।



জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ জানান-শুক্রবার রাতের জেলার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। এতে জেলায় ৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমির কাঁচা আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর, মান্দা ও ধামইরহাট। পত্নীতলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ২ হাজার ২৫০ হেক্টর, সাপাহারে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর, পোরশা ১ হাজার ৫০ হেক্টর, ধামইরহাটে ৪৭৫ হেক্টর ও নিয়ামতপুরে ৪৮০ হেক্টর জমির কাঁচা আম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফজলী, ল্যাংড়া, নাক ফজলী, গোপালভোগ জাতের গাছগুলো বড় হওয়ায় এসব গাছের আম বেশি ঝরে পড়েছে।

তিনি আরোও বলেন, এছাড়াও ৫০ হেক্টর জমির কলা ও ৫০ হেক্টরও জমির বিভিন্ন শাক-সবজি ক্ষতি হয়েছে। অন্যান্য ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে কৃষি বিভাগের লোকজন মাঠে গিয়ে কাজ করছেন।

উল্লেখ্য, জেলায় এ বছর ২৯ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। ৬ হাজার ৮০০ আম চাষির প্রায় সাড়ে ৯ হাজার বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১২ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। সে হিসেবে এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৮৪৫ মেট্রিক টন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর