নির্বাচনী ইশতেহারে রংপুরেই কর্মসংস্থান চান নারী ভোটাররা

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-21 11:18:33

ঢাকা থেকে রংপুর বহুদূর। কিলোমিটারে হিসেবে যা ৩৫০ কিলোমিটার। এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় গিয়ে কাজের সন্ধান করতে চাননা রংপুরের নারীরা। এর সমাধান হিসেবে রংপুরেই কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা চান তারা।

রংপুর বিভাগীয় শহর হলেও এখানে সে অর্থে  শিল্প-কলকারখানা গড়ে ওঠেনি। এর ফলে, প্রতি বছর এ বিভাগের নারীরা কাজের জন্য ছুটছেন ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়নগঞ্জসহ দেশের নানা প্রান্তে। রংপুরে নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হলে উন্নয়নের সাথে সাথে বদলে যাবে এখানকার অর্থনৈতিক চিত্র, এমটাই মনে করছে এ এলাকার নারী ভোটাররা।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নির্বাচনী ইশতেহারে রংপুর বিভাগের টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনাসহ নারীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রস্তাব সংযোজনের দাবি করেছেন এ অঞ্চলের নারী সংগঠকরা।

এবার রংপুর বিভাগে ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ১ কোটি ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ২৬৪ জনে। গতবারের চেয়ে ভোটার বেড়েছে পৌনে ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৬। এদের মধ্যে নারী ও তরুণ ভোটারই বেশি। পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার বেশি হলেও এই অঞ্চলে নারীদের জন্য নেই তেমন কোনো বড় কর্মসংস্থান।

রংপুর বিভাগে গ্যাস সংযোগ না থাকায় গড়ে ওঠেনি ভারী কোনো শিল্প-কলকারখানাসহ নারী-শ্রমিক বান্ধব বড় কোন প্রতিষ্ঠান। এ কারণে রংপুরে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা না পেয়ে এখানকার শ্রমজীবী নারীদের বড় একটি অংশ এখন ঢাকামুখী। এবার সব দলের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় প্রত্যাশার পাখা মেলেছে নারী ভোটারদের মাঝে। তাদের আশা নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, রংপুর পাবে শিল্পের ছোঁয়া, নারীরা পাবে কর্মসংস্থান।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের বাসিন্দা পোষাকশ্রমিক সুমি আক্তার এবার নতুন ভোটার হয়েছেন। থাকেন গাজীপুরের কোনাবাড়িতে। এই নারী ভোটারের সাথে কথা হয় পীরগাছার পাওটানা বাজারে। তিনি বার্তাকে বলেন, ‘যদি রংপুরে নারীদের জন্য কর্মসংস্থান থাকত, তাহলে কষ্ট করে গাজীপুরে যেতে হতো না। আমি চাই যে সরকারই ক্ষমতায় আসুন, অন্তত রংপুরের মানুষের কর্মসংস্থানের যাতে ব্যবস্থা করে’।

রংপুর মহানগরীর মুন্সিপাড়া এলাকার নারী সংগঠক শাহানারা রহমান। পেশায় তিনি আইনজীবী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার প্রত্যাশা নিয়ে বলেন, ‘রংপুরের নারীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মপ্রত্যয়ী। এই বিভাগে নারীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এখন সময়ের দাবি’।

তিস্তা নদী বেষ্টিত গঙ্গাচড়ার নোহালী ইউনিয়নের চর এলাকার জাহানারা বেগম, ইশমত আরা, খাদিজা বেওয়াসহ বেশ কয়েকজন নারী ভোটারের সাথে কথা হয় বার্তার। তারা বলেন, ‘চরাঞ্চলের কৃষি কাজে নারীদের অংশগ্রহণ সবচে বেশি। নদীকেন্দ্রিক এলাকাগুলোতে কৃষিভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার ব্যাপারে নির্বাচনী ইশতেহারে গুরুত্ব দেয়া উচিত।

রংপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাছিমা জামান ববি বলেন, ‘রংপুর বিভাগের নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য তেমন কোন বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠায় এবার আমরা রংপুর কেন্দ্রিক কর্মসংস্থান চাই। যেখানে নারীদের কাজের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকবে। নারীদের আর ঢাকামুখী হতে হবে না। অন্তত এই বিভাগের নারী পোষাকশ্রমিকরা যাতে রংপুরেই কাজের নিশ্চয়তা পায় সেজন্য নির্বাচনী ইশতেহারের এই বিষয়টি গুরুত্ব বহন করে’।

রংপুর জেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাকিয়া সুলতানা চৈতি বলেন, ‘সরকার নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করলে রংপুরে নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য ভাবতে হবে না’।

এ সম্পর্কিত আরও খবর