৩৭ দিন নিখোঁজের পর নারীর গলিত মরদেহ উদ্ধার, প্রেমিক গ্রেফতার

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া | 2023-08-26 04:22:54

অজ্ঞাত নারীর মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে গিয়ে ৩৭ দিন আগে নিখোঁজ হওয়া বিউটি বেগম (৩৫) নামের আরেক নারীর গলিত মরদেহ জয়পুরহাট জেলা থেকে উদ্ধার করেছে বগুড়ার ডিবি পুলিশ। সেই সাথে গ্রেফতার করা হয়েছে বিউটি বেগমের প্রেমিক উজ্জল হোসেনকে (২৩)।

শনিবার (২৮ মে) বিকেলে এতথ্য জানিয়েছে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ  সুপার  শরাফত ইসলাম।

এর আগে শুক্রবার( ২৭ মে) গভীর রাতে জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল থানার শিবপুর গ্রাম থেকে গ্রেফতারকৃত উজ্জলের বাড়ির টয়লেটের সেপটি ট্যাংকে মাটি চাপা দেয়া বিউটি বেগমের গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

বিউটি বেগম বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার পিরব ইউনিয়নের দামগাড়া গ্রামের মৃত বেলায়েত হোসেনের মেয়ে। গ্রেফতারকৃত  প্রেমিক উজ্জল হোসেন জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার শিবপুর গ্রামে ইরাক প্রবাসী শাহ আলমের ছেলে।

জানা গেছে, গত ১৪ মে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার গন্ডগ্রামের বাঁশ ঝাড় থেকে অজ্ঞাত এক নারীর গলায় ফাঁস দেয়া মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কোন পরিচয় না পাওয়ার পর মরদেহ আঞ্জুমান মফিদুলের মাধ্যমে দাফন করা হয়। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেখে শিবগঞ্জ উপজেলার  দামগাড়া গ্রামের মৃত বেলায়েত হোসেনের ছেলে বাবলু মিয়া থানায় এসে দাবি করেন উদ্ধারকৃত মরদেহ তার বোন বিউটি বেগমের।

বাবলু মিয়া পুলিশকে জানান, স্বামী পরিত্যক্ত বোন বিউটি বেগম তার ছেলে রবিউল ইসলামকে নিয়ে বগুড়া শহরের জহুরুল নগর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। ছেলে রবিউল বগুড়া শহরে হোটেলে কাজ করতো। গত ২১ এপ্রিল বিউটি বেগম বগুড়া শহরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর থেকে তার আর কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নাম্বারটিও বন্ধ।

এরপর বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলামের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি টিম বিউটি বেগমের মোবাইল নাম্বারের সুত্র ধরে তদন্ত শুরু করেন। একপর্যায় শুক্রবার (২৭ মে) ডিবি পুলিশের এসআই জুলহাস উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম আটক করে ক্ষেতলাল থেকে উজ্জল হোসেনকে। উজ্জল হোসেনকে বগুড়ায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম। উজ্জল হোসেন বিউটি বেগমকে হত্যার কথা স্বীকার করলেও মরদেহ বাঁশ ঝাড়ে ফেলে রাখার কথা অস্বীকার করেন।

উজ্জল পুলিশকে জানান, বিউটি বেগমের  মরদেহ তার বাড়িতেই পুতে রাখা আছে। পরে রাতেই বগুড়া জেলা পুলিশের দল উজ্জলকে সাথে নিয়ে অভিযান চালায় তার বাড়িতে। এ সময় উজ্জলের দেখানো মতে টয়লেটের সেপটি ট্যাংকে মাটি চাপা দিয়ে রাখা বিউটি বেগমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

উজ্জল হোসেন পুলিশকে  জানান, মোবাইল ফোনের সুত্র ধরে বিউটি বেগমের সাথে তার পরিচয়। কেউ কাউকে না দেখলেও তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ২১ এপ্রিল সন্ধ্যার পর উজ্জলের ডাকে সাড়া দিয়ে বিউটি বেগম তার বাড়িতে যান। বিউটি বেগম বয়সে অনেক বড় হওয়ার কারণে উজ্জল তাকে দেখার পর অপছন্দ করলেও বিষয়টি প্রকাশ করে না। বাড়ির সবার অগোচরে উজ্জল বিউটিকে তার ঘরে রাখে এবং রাতে ধর্ষণ করে। এ সময় বিউটি উজ্জলকে বিয়ে করতে চাপ দেন। কিন্তু উজ্জল পরে বিয়ে করবে জানিয়ে ভোর রাতে বিউটিকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে। কিন্তু বিয়ে না করলে বাড়ি থেকে যাবে বলে বিউটি তার প্রেমিককে জানিয়ে দেন। এ নিয়ে দু'জনের মধ্যে মনোমানিল্য দেখা দিলে উজ্জল গলা টিপে হত্যা করে বিউটি বেগমকে। পরে রাতেই বাড়ির টয়লেটের সেপটি ট্যাংকের মধ্যে মরদেহ লুকিয়ে রাখে। দুইদিন পর দুর্গন্ধ বের হলে দুই ভ্যান মাটি কিনে এনে সেপটি ট্যাংক ভরাট করে দেয়। এরপর থেকে উজ্জল গ্রামে স্বাভাবিক ভাবে ঘোরা ফেরা করছিলেন।

বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ  সুপার  শরাফত  ইসলাম বলেন, শাজাহানপুর থানার গন্ডগ্রামে বাঁশ ঝাড় থেকে উদ্ধারকৃত মরদেহে বিউটি বেগমের না। ওই মরদেহের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে। বিউটি বেগমের মরদেহ উদ্ধারের পর গ্রেফতারকৃত উজ্জলের নামে ক্ষেতলাল থানায় মামলা হয়েছে। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর