‘বৈধ না অবৈধ সেটা আমরা বুঝব, এটা পলিটিক্যাল সিট’

, জাতীয়

রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 05:59:20

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হলের ২৩৪ নাম্বার কক্ষের এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে তার বৈধ সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপুর বিরুদ্ধে।

শুক্রবার (২৭ মে) রাত সাড়ে ১০টায় অপু সেই কক্ষে গিয়ে ভুক্তভোগীকে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি এক অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে ভুক্তভোগীর সিটে তুলে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম তুষার চন্দ্র রায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এবং শহীদ হবিবুর রহমান হলের ২৩৪ নাম্বার কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। অপরদিকে হল শাখা সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক তুলে দেওয়া শিক্ষার্থীর নাম নাসির হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এবং ওই হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী।

জানতে চাইলে ভুক্তভোগী তুষার চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমি হলে ২০১৯ সালে আবাসিকতা পাই। কিন্তু হলে উঠতে না পারায় করোনা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় খুললে হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলি। প্রাধ্যক্ষ আমাকে হলের ২৩৪ নাম্বার কক্ষে সিট বরাদ্দ দেয় এবং উঠতে বলে। ঈদের আগে ওই সিটে অবস্থান করা বড়ভাই বাড়ি চলে যায়, তখন থেকে আমি সেখানে থাকা শুরু করি। এর মাঝে একদিন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপুর দুই ছেলে এসে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের নাসির নামের এক অনাবাসিক ছেলেকে আমার সিটে তুলে দেয়। তারপর থেকে নাসির আমার সিটে ডাবলিং করে থাকে।’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ‘এরপর শুক্রবার (২৭ মে) রাত সাড়ে ১০টায় অপুসহ কয়েকজন আমার কক্ষে আসে এবং আমায় সিট থেকে নেমে যেতে বলে নতুবা নিচে ফ্লোরিং করে থাকতে বলে। আমি ফ্লোরিং করে থাকতে না চাওয়াতে সেদিন রাত সাড়ে ১২টায় হল শাখা সাধারণ সম্পাদকের পাঠানো তিনজন ছেলে এসে আমাকে শাসায় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। শাসানোর একটি অডিও রেকর্ড আছে আমার কাছে। এমতাবস্থায় আমি আমার বৈধ সিট পেতে হল প্রশাসন ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

শাসানোর সেই অডিও রেকর্ডটি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। রেকর্ডটিতে সেই তিনজন ছেলে নিজেদের ছাত্রলীগ বলতে শোনা গেছে। ভুক্তভোগীর ভাষ্যমতে, এদের তিনজনের মধ্যে দুজনের নাম অনিম এবং অমিত। ভুক্তভোগী এর বেশি তাদের পরিচয় জানাতে পারেননি। আর খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের কমিটিতেও এসব নামে কেউ নেই। তবে অনেকের ভাষ্যমতে, তারা শাখা ছাত্রলীগের কর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।

রেকর্ডটিতে ভুক্তভোগী তুষারকে বলতে শোনা যায়, ‘এটা আমার বৈধ সিট, এখানে আমি থাকব। এটা কি ওর (নাসির) বৈধ সিট? এর জবাবে অপুর পাঠানো ছাত্রলীগ কর্মীরা বলেন, ‘বৈধ না অবৈধ সেটা আমরা বুঝব, এটা পলিটিক্যাল সিট, এটা অবশ্যই পলিটিক্যাল সিট।’ এসময় ভুক্তভোগী তাদের গলা নামিয়ে কথা বলতে বললে ছাত্রলীগ কর্মীরা বলেন, ‘আববার গলাবে নামাবে কে! একদম...।’

শনিবার দুপুরে সেই হলে গিয়ে কথা হয় সেই সিটের অনাবাসিক শিক্ষার্থী নাসির হোসেন এবং পূর্বে সেই সিটে থাকা শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামানের সঙ্গে।

আবাসিকতা না থাকা সত্ত্বেও সেই সিটে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে নাসির হোসেন বলেন, ‘এই সিটে আমাকে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অপু ভাই থাকতে বলেছেন। এটা আগে থেকেই পলিটিক্যাল সিট।’

তবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না বলে জানায় সেই সিটে পূর্বে থাকা শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এটা কোনো পলিটিক্যাল সিট না।’

সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকি এবং নিজের কর্মীদের দ্বারা শাসানোর কারণ জানতে হল শাখা সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপুর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তার মুঠোফোনে এসএমএস করা হলেও তিনি কোনো রিপ্লাই দেয়নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরীয়া বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এখন খোঁজ নিব। যদি এমনকিছু করে থাকে, তাহলে অপুকে সাংগঠনিকভাবে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।

শহীদ হবিবুর রহমান হল প্রাধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, আমরা বিকেলে বসব। সিট বরাদ্দ দিবে হল প্রশাসন। যাকে দিবে সেই ছেলেই উঠবে। এটিই স্বাভাবিক।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর বলেন, ‘হল প্রাধ্যক্ষ আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। আমরা বিকেলে বসব এবং বৈধ ছেলেটিকে ওই সিটে রাখার ব্যবস্থা করব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর