আর মাত্র ৮ দিন পর চালু হচ্ছে পদ্মা সেতু। উদ্বোধনের পরের দিন সকাল থেকেই চলাচল করবে যানবাহন। পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যেতে হলে গাবতলী থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুট ব্যবহার করা বাসগুলোকে নিতে হবে নতুন রুট পারমিট। আর বাস ছাড়ার জন্য ব্যবহার হবে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল। সায়েদাবাদে গাড়ির চাপ বাড়ার সঙ্গে বেড়ে যাবে রাজধানী ঢাকার ভেতরে গাড়ির জটও।
পদ্মা সেতু দিয়ে রাজধানী ছেড়ে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় যাবে যাত্রাবাহী বাস। যোগাযোগের নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন হবে। ইতিমধ্যে পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুট ব্যবহারকারী বাসগুলোর রুট পরিবর্তনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আবার অনেক পরিবহন মালিক রুট পারমিট নিয়ে নতুন করে গাড়ি নামাচ্ছেন বলে জানিয়েছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে ইতিমধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের মধ্যে উন্মোদনা শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে চাপ বেড়ে যাবে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের। কারণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা অনুসারে, সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রাজধানীর ভেতরে কোন দূরপাল্লার বাস চলাচল করার নিয়ম নেই। সেক্ষেত্রে এই সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যেতে হলে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল প্রথম ভরসা।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতের জন্য পদ্মা সেতু ব্যবহার করে যেসব গাড়ি চলবে সেগুলো এখন পর্যন্ত সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ব্যবহার করা হবে। বর্তমানে সায়েদাবাদ টার্মিনাল ব্যবহার করা হবে, পরবর্তীতে হয়ত কোন সিদ্ধান্ত হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, রুট পারমিটের জন্য পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে আবেদন করা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে নতুন বাস ও পুরনো গাড়ির রুট পরিবর্তনের আবেদন রয়েছে যতদূর জানি।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট ব্যবহার করে প্রতিদিন সাড়ে ৬০০ বাস যাতায়াত করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। সেই হিসাবে মাসে প্রায় ২০ হাজারের মতো বাস যায় এই রুটে। এর সঙ্গে যোগ হতে পারে নতুন নামানো বাস। এতে ভয়াবহ গাড়ির চাপ বাড়বে সায়েদাবাদ টার্মিনালে। যার ফলে বেড়ে যাবে রাজধানীর যানজট।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, গাবতলী থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী বাস রাজধানীর মধ্যে ঢুকতে দেবে না। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ব্যবহার করতে হবে। নতুন গাড়ি নামালে এবং রুট পরিবর্তন করে এই টার্মিনাল দিয়ে চললে অবশ্যই চাপ বাড়বে। তবে আপাতত এভাবেই চলতে হবে।
পদ্মা সেতুর এই রুট ব্যবহারের জন্য এনা পরিবহনসহ অনেক পরিবহন মালিক নতুন নতুন বাস নামাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
শ্যামলী এন আর ট্র্যাভেলসের জেনারেল ম্যানেজার জীবন চক্রবর্তী বার্তা২৪.কমকে বলেন, মালিকরা আলাদাভাবে রুট পারমিটের জন্য আবেদন করেননি। তবে পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কিছু গাড়ি এই রুটে চলাচল করবে, কিছু বাসের রুট পরিবর্তনের জন্য আবেদন করা হবে। শ্যামলী এন আর পরিবহন পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যেতে নতুন বাস নামানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
এদিকে পরিবহন সংশ্লিষ্ট ও নগরবিদরা জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, পল্টন ও হানিফ ফ্লাইওভারে ব্যাপক গাড়ির চাপ বাড়বে। সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে এই চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হবে। এর জন্য সমন্বয় করে কিভাবে যানজট ও গাড়ির চাপ কমানো যায় পরিকল্পনা করতে হবে। তা না হলে যানজেটে নগরবাসীর ভোগান্তি বহুগুণে বেড়ে যাবে।
বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু আগামী ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওইদিন সকাল ১০টায় পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন। এটি দেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে।
দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির উপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়কপথ এবং নিচের স্তরটিতে একটি একক রেলপথ। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় এ সেতু।