ফরিদপুর জেলাকে দেশের মূল ভূখণ্ডের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে প্রমত্তা পদ্মা নদী। দক্ষিণ বঙ্গের ১৬ জেলার মানুষ ফরিদপুর হয়ে দৌলতদিয়া ও কাঁঠালবাড়ী ঘাট দিয়ে পার হয়ে রাজধানীতে যেত। আর এই দুটি ঘাট পারাপারে নৌযান সংকটসহ প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় মানুষকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে পার হতে হতো নদী।
নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে সরকার পদ্মার বুকে গড়ে তুলেছে দক্ষিণ বঙ্গ তথা দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। যা জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে আগামী ২৫ জুন। ২৬ জুন থেকে টোল দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হবে। এমন খবরে বাঁধ ভাঙা আনন্দ, উচ্ছাসে উচ্ছ্বসিত তারা। আশায় বুক বাঁধছেন কৃষি প্রধান এ জেলার কৃষকরাও।
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, যোগাযোগের সমস্যার কারণে এতোদিন এ অঞ্চলে গড়ে ওঠেনি শিল্প কল কারখানা, তবে এবার সে দুয়ার উন্মোচিত হলো, যা ভূমিকা রাখবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে। সেই সাথে সার্বিক অবকাঠামোতেও।
জাতির বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থানের তকমা থাকায় আওয়ামী লীগ ব্যতিত অন্যান্য সরকারের সময়ে ফরিদপুর অনেকটা অবহেলিত ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর উন্নয়নের দৃশ্যমান ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে ফরিদপুরে। এবার পদ্মা সেতুতে ভর করে পুরোপুরি ঘুরে দাড়াবে প্রাচীন এ জেলা, এমনটাই দাবি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের।
ফরিদপুরের সফল কৃষি উদ্যোক্তা সাহিদা বেগম জানান, আমি প্রায় ৬০ একর জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে থাকি। এর মধ্যে পেঁয়াজ, পেঁয়াজের বীজ, গম, ধান ও আম বাগানও আছে। পদ্মা সেতু হওয়ায় আমিসহ সকল কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসল দ্রুত সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাতে পারবেন কোন ঝামেলা ছাড়াই। ঘাটে জ্যামের জন্য অনেক সময় দ্রুত পচনশীল পণ্য পচে যেত। এই সেতু হওয়াতে এই ভোগান্তি আর পোহাতে হবে না।
ফরিদপুর বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল আলম জানান, এই সেতুর মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হলো। এতে আমাদের জীবনযাপনের মান বৃদ্ধি পাবে এবং ভোগান্তি লাঘব হবে।
ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মো. মহসিন শরীফ জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে আমাদের ব্যবসায়ীদের ব্যবসার প্রসার, সেবা ও সুবিধা আরো বাড়বে। সেই সাথে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, কারখানা তৈরি হবে ফলে দূর হবে বেকারত্ব।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক জানান, অনেক বাধা বিপত্তি, দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র থাকা সত্ত্বেও স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে আমাদের দেশরত্ন ও জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু তৈরি হওয়াতে দক্ষিণাঞ্চলসহ ২১ জেলা উপকৃত হবে।
কানাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফকির মো. বেলায়েত হোসেন জানান, পদ্মা সেতুর তৈরি হওয়াতে আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষাখাতের অনেক উন্নয়ন হবে ।
আর প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, পদ্মা সেতু দেশের বৃহত উন্নয়নের মাইলফলক, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে গোটা দেশে। অলিম্পিক ভিলেজ ও শেখ হাসিনা তাঁত পল্লী নির্মিত হলে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী না হতেন তাহলে আজীবন দক্ষিণাঞ্চল অবহেলিত থাকতো।
বিশিষ্ট সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী এনটিকবিডি এর ম্যানেজিং পার্টনার মো মাহবুব আলম মনির জানান , পদ্মা সেতুর কল্যাণে ফরিদপুরের মানুষ স্বপ্ন দেখছে শিল্পসমৃদ্ধ এক জেলার। ফরিদপুরে ইতিমধ্যে এর দৃশ্যমান অনেক কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান জমি কিনে স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছে। ফেরিঘাটের দেরি হওয়াতে আগে সময় লাগতো ২/৩ দিন কিন্তু এখন তা সল্প সময়ে চলে আসবে। প্রাকৃতিক গ্যাসের সংযোগ সুবিধা পেলে জনগণ এর সুফল ভোগ করবে। এছাড়া কর্ম সংস্থানের সুযোগ বাড়বে। এতে সবাই ব্যবসায়ীক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। আর এসব বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, সেতুকে কেন্দ্র করে এ জেলায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উম্মোচন হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সেতুকে কেন্দ্র করে ফরিদপুর-মাদারীপুর সীমান্তবর্তী এলাকায় অলিম্পিক ভিলেজ, শেখ হাসিনা তাঁত পল্লী তৈরি হচ্ছে, ভাঙ্গায় বঙ্গবন্ধু মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। এ জেলার প্রতিটি এ জেলার প্রতিটি জায়গায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে।