বদলে যাবে কুষ্টিয়ার পান ও কলা চাষিদের ভাগ্য

, জাতীয়

এস এম জামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া | 2023-08-30 15:33:11

স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে বদলে দেবে কুষ্টিয়ার পান ও কলা চাষিদের ভাগ্য। সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুরে কলার হাটে কৃষক শেখ আবু তাহের মিয়া প্রতি কাঁদি কলা বিক্রি করছিলেন ৭০০ টাকা দরে। কলা চাষি আনারুল ইসলাম জানান, তিনি প্রায় ২০ বছর যাবৎ কলার আবাদ করেন। প্রতি বছরই তিনি ২০ থেকে ২২ বিঘা জমিতে চাপা কলার আবাদ করেন। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থায় দূরত্বের কারণে তার চাহিদা অনুযায়ী লাভ হয় না।

কুষ্টিয়া থেকে সহজে কলা নিয়ে পরিবহনে যাওয়ার মতো তার সাধ্য নেই। দূরত্ব অনেক, ঝুঁকিও রয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে তিনিসহ কুষ্টিয়ার কলা চাষিরা আগের দিন কলা কেটে পরদিন খুব ভোরে নিজেরাই ট্রাক ঠিক করে রাজধানী ঢাকা ও চট্রগ্রাম এলাকায় নিয়ে যেতে পারবেন এবং লাভও পাবেন অনেক বেশি।

ঠিক এমনি ভাবে কুষ্টিয়ার পান চাষিরা অপেক্ষায় রয়েছেন। কেননা “ষোল চাষে মুলা, তার অর্ধেক তুলা; তার অর্ধেক ধান, বিনা চাষে পান।” ভেঁড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ঠাকুর দৌলতপুর এলাকার পান চাষি আব্দুর রহমান জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরেই পান চাষ করি। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কুষ্টিয়ার মিরপুরে হাটে বসে পান পাইকারী দরে বিক্রি করতে হয়। এতে চাষ দিয়ে খুব একটা লাভ হয় না। পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রামে পান নিয়ে যেতে পারলে অনেক বেশি লাভ হতো কিন্তু রাজবাড়ী দৌলতদিয়া, যমুনা সেতু পার হয়ে পান নিয়ে ঢাকা ও চট্রগ্রামে পৌঁছে তা বিক্রি করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

তিনি এ বছর দুই বিঘা জমিতে “বাংলাপান” জাতের পানের চাষ করেছেন। দুই বিঘা জমিতে তার প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ হয়েছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকলে এ লাভের পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতো। কৃষক মহিবুল জানান, রাজধানী ঢাকাসহ অন্যখানে নিয়ে গেলে অন্তত ১০ থেকে ১২ টাকা হালি পাইকারি ভাবেই বিক্রি করা সম্ভব হবে।


কুষ্টিয়া কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বিষ্ণু পদ সাহা বলেন, মধুপুর কলার হাট থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন প্রচুর কলার আমদানি হয় তবে ফড়িয়াদের কারণে তারা ভালো দাম পায় না। যোগাযোগের কারণে নিজেরা কলা রাজধানীতে নিয়ে যেতে পারে না, ফলে হাটে বসেই কলা পাইকারীতে বিক্রি করতে হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে কুষ্টিয়ার কলা চাষিরা কুষ্টিয়ার কলা দেশের বাইরে রাজধানী-ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যেতে পারবে এবং লাভবানও হবেন বলে তিনি আশা বাদ ব্যক্ত করেন।

লাভ ছাড়াও ভেষজ গুণের কারণে পানের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এছাড়া বাংলার ঐতিহ্যে বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে ও পূজা-পার্বণেও রয়েছে পানের কদর।

কুষ্টিয়ার মাটি পান চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় এবং পানের বাজার দর ভালো থাকায় পান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষকরা। অন্যান্য ফসলের তুলনায় পানে লাভও বেশি হয়। কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলায় ২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পান চাষ হয়েছিল ভেঁড়ামারা উপজেলায়।

এ বছর ভেঁড়ামারা উপজেলায় ৭২০ হেক্টর, দৌলতপুর উপজেলায় ৫৩৬ হেক্টর, কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ৬২০ হেক্টর, মিরপুর উপজেলায় ১৬০ হেক্টর, খোকসা উপজেলায় ৮২ হেক্টর এবং কুমারখালী উপজেলায় ২২ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়।

বাংলা পান, মিঠা পান, দেশি পান, ঝালি পান, সাচি পান, কর্পূরী পান, গ্যাচ পান, মাঘি পান, উজানী পান, নাতিয়াবাসুত পান, বরিশাল পান, উচ্চ ফলনশীল ও বিভিন্ন গুণাবলী সম্পন্ন। স্বাদ ও সুগন্ধিযুক্ত এ জাতের পানের বাজারে রয়েছে বেশ চাহিদা।

ভেঁড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ঠাকুর দৌলতপুর এলাকার পান চাষি আব্দুর রহমান বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরেই পান চাষ করি। তবে সরাসরি ঢাকা-চট্রগাম ও সিলেটে নিয়ে যেতে পারি না বলে খুব একটা লাভ হতো না। পদ্মা সেতু চালু হলে আমি নিজেই পান ঢাকা, চট্রগ্রামে নিয়ে যেতে পারবো এবং লাভও পাব বলে আশা করি। আবার যদি ফড়িয়ারাও নেয় পদ্মা সেতুর কারণে এখনকার চেয়ে দাম বেশি দেবে তারা। এখন তাদের খরচ বেশি হয় ফলে আমাদের দাম দেয় কম তখন খরচ কম হবে আমরাও দাম পাবো বেশি।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, অর্থকারী ফসলের মধ্যে পান একটি লাভজনক ফসল। কুষ্টিয়ার পান সারা দেশের মধ্যে বিখ্যাত ছিল। তবে গত কয়েক বছর আগে পানের বিভিন্ন রোগের কারণে পান চাষিদের লোকসান হয়। অপরদিকে পরিবহন খাতে ব্যয় বেশি হওয়ায় তারা ভালো লাভ পায় না। পদ্মা সেতু চালু হলে এখান থেকে সরাসরি ঢাকা-চট্রগ্রামে চাষি ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা অল্প সময়ে কম খরচে পান নিয়ে যেতে পারবে এতে কৃষক ও পাইকারী ব্যবসায়ী সকলে লাভবান হবেন কুষ্টিয়ার কৃষি অর্থনীতিতে এর একটা সুফল পড়বে বলে তিনি জানান।

এমনি ভাবেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে কুষ্টিয়ার কলা, পান, সবজি, গরু, ছাগল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়ায় খরচ কমবে লাভ বেশি হবে। অর্থনীতিতে একটা সুফল পড়বে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর