একদিকে খরস্রোতা পদ্মা আগ্রাসী আচরণ। অন্যদিকে আত্মবিশ্বাসে চির ধরার মতো নানা সমালোচনা-কটুবাক্য, মিথ্যাচার। আর এসবের উপর দাঁড়িয়ে একটি আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠের দৃঢ় স্বর ‘নিজস্ব অর্থেই আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করব’। সেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় প্রমত্তা পদ্মায় লেখা হলো সাহসিকতা মহাকাব্য- নির্মাণ হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আর এই সাহসিকতা ধারক, স্বপ্নের বাহক তিনি একজনই- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কেউ বলেছিল প্রমত্তা পদ্মায় সেতু সম্ভব নয়। কারো চেষ্টা ছিল পদ্মা সেতু যেন আওয়ামী লীগের শাসনামলে না হয়। এরপর কত গুজব সৃষ্টি, ষড়যন্ত্র হলো। কিন্তু শেখ হাসিনার চ্যালেঞ্জ এবং সাহসী ঘোষণায় কোন কিছুই পদ্মা সেতু নির্মাণে বাধা হতে পারেনি। এখন শুধু সরকার বা কোন দল নয়- পুরো দেশ, গোটা জাতির গর্বের বিষয় পদ্মা সেতু।
আসলে সমালোচনাকারী ও ষড়যন্ত্রকারী বুঝতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মবিশ্বাস পাহাড় সমান। ঠুনকো সমালোচনা করে শেখ হাসিনাকে দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়। শত বাধা-বিপত্তি আর প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও দৃঢ় সাহসিকতার সাথে নিজেকে অটল রেখেছিলেন পদ্মা সেতু নির্মাণে। সব কিছু ভেদ করে এখন বিজয়ের হাতছানি দিচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বিশ্বকে জানান দেওয়া হচ্ছে বাঙলির সক্ষমতা ও সমার্থ্যের কথা। বাঙালি জাতি মাথা নত করার নয় সেটা আবারও পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে প্রমাণ করে দিলেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
দুর্নীতি চেষ্টার ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংকের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, রাজনৈতিক মতভেদ, গুজব, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে এখন মাথা উচুঁ করে সগৌরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে দেশের ইতিহাসের দীর্ঘতম সেতু। সক্ষমতার এই সেতু বলে দেয় শেখ হাসিনা যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা। পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার অসীম সাহসের সোনালী ফসল। আর বাঙালির আত্মসম্মান আর আত্মগৌরবের প্রতীক। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের হার না মানার গল্প। বাঙালির আত্মগৌরবের এই সেতু দিয়ে যান চলাচল করতে আর মাত্র দুই দিন।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করে শেখ হাসিনা তার সম্মান ও জনপ্রিয়তা বহুগুণে বাড়িয়েছেন। সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে এখন দেশে চলছে আনন্দের বন্যা। দেশ জুড়ে চলছে উৎসব। কারো সন্তান হলে নাম রাখছেন পদ্মা সেতু। এমনকি উদ্বোধনের উৎসবকে ঘিরে অনেকে বিয়েও সেরে নিচ্ছেন।
এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে খুবই জমকালো। সারা দেশের মানুষ যাতে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে পারেন সেজন্য দেশের প্রতিটি জেলায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
১২ জুন (রোববার) সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পদ্মা সেতু বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার অসীম সাহসের সোনালী ফসল। শেখ হাসিনা এই সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে জানিয়ে দিলেন বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ কখনো দুর্নীতি করে না। এই সেতু আমাদের সামর্থ্য ও সক্ষমতার সেতু। এই সেতু একদিকে সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক, অন্যদিকে আমাদের যে অপমান করা হয়েছে তার প্রতিশোধের সেতু।
পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে শেখ হাসিনা একটি গোষ্ঠীর শত্রুতে পরিণত হয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, এ সেতুর জন্য শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই নয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গোটা পরিবারকে টার্গেট করা হয়েছিল। কিন্তু শত্রুদের সেই টার্গেট বিফলে গিয়েছে। ওরা বুঝেছে বঙ্গবন্ধুর পরিবার কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করে না। আর দুর্নীতির তো কোন প্রশ্নই আসে না।
তবে পদ্মা সেতু নির্মাণে শেখ হাসিনা শুধু সমালোচনা সহ্য করতে হয়নি, লড়তে হয়েছে দেশের আর্থিক অবস্থা ও পদ্মার আগ্রাসী মনোভাবের সঙ্গেও। এটি নির্মাণে দু’টো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। প্রথম চ্যালেঞ্জ দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা। এ লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে সম্পদ বৃদ্ধির জন্য করারোপ এবং অনেক নতুন খাতকে ভ্যাটের আওতাভুক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে সরকারকে বিশেষভাবে বিবেচনা রাখতে হয়েছে যাতে শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত না হয়।
আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মহেন্দ্রক্ষণ। ওই দিন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মোচন করবেন। ৬.১৫ কিমির এই সেতুর মোট নির্মাণ ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩.৩৯ কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো নির্মাণ, নদীশাসন, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যয় অধিগ্রহণকৃত ৯১৮ হেক্টর ভূমির মূল্য পরিশোধ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। বাংলাদেশ সরকারের অর্থ বিভাগ- সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগকে বার্ষিক ১% সুদে ৩৫ বছরে পরিশোধের শর্তে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে গোটা পৃথিবীতে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে নিঃসন্দেহে। বাংলাদেশকে এখন আর অবহেলা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার সুযোগ নেই। তেমনি শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞা, দেশপ্রেম, সততা এবং সিদ্ধান্তগ্রহণ ও বাস্তবায়নে পারঙ্গমতার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছে বিশ্ববাসী। সেই সঙ্গে পদ্মা সেতু নির্মাণে দেশের উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হচ্ছে বলেও ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদরা।