সহসা কমছে না বিদ্যুতের লোডশেডিং!

, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 11:32:03

গরমে যখন দেশের মানুষের ত্রাহী অবস্থা তখন সারাদেশ থেকেই বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। অনেক জায়গায় দিনে ও রাতে দফায় দফায় লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। পাবনা থেকে একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন পনের দফায় লোডশেডিংয়ের কথা।

হঠাৎ করেই শুরু হওয়া লোডশেডিং কবে দূর হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কেউই কিছু বলতে পারছেন না। তবে লোডশেডিংকে শৃঙ্খলায় আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল’র মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসাইন।

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমাদের বুঝতে হবে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিকে ভুলে গেলে চলবে না। ইউক্রেন যুদ্ধের পর জ্বালানির বাজারের যে অবস্থা এখানে আমাদের কারও হাত নেই। যে এলএনজি ৫ ডলারে পাওয়া যেতে সেটুকু কিনতে হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ ডলারে। জার্মানি, ইতালির মতো উন্নত রাষ্ট্র লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে।

জার্মানিতে কি যখন তখন লোডশেডিং করা হয়? জবাবে বলেন, আমরা লোডশেডিংকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনার পরিকল্পনা নিয়েছি। যাতে গ্রাহকরা আগে থেকেই প্রস্তুতি রাখতে পারেন। দিনে পনের দফায় লোডশেডিং প্রসঙ্গে বলেন, দেখেন কোথাও টানা দুই ঘণ্টা লোডশেডিং করা কঠিন। ২ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হলে ফ্রিজের খাবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার একটানা ফ্যান ছাড়া থাকাও কষ্টের। তাই টানা ৩০ মিনিটের বেশি লোডশেডিং না করার বিষয় শৃঙ্খলায় আনার পরিকল্পনা চলেছে।

অতীতে তুলনামুলক রাতে কম লোডশেডিং হতো। এখন মধ্য রাতেও কেনো লোডশেডিং হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখন চাহিদার প্যাটানটা বদলে গেছে। পিক আওয়ারের (রাত ৯টা) কাছাকছিই থাকছে ভোররাতেও চাহিদা। ৪ জুলাই রাত ৯টায় উৎপাদন করা হয়েছে ১২ হাজার ২৩৬ মেগাওয়াট, ওই দিন ভোর ৪টায় ১১ হাজার ৫৯১ মেগাওয়াট। অতীতে দেখা যেতো ভোর রাতের দিকে ৬ থেকে ৭ হাজার মেগাওয়াটের নিচে চাহিদা নেমে আসত।

তিনি বলেন, ১৪’শ এমএমসিএফডির মতো গ্যাস সরবরাহ পেলে সমস্যা হতো না। কয়েকমাস আগেও ১ হাজারের উপর গ্যাস পাওয়া গেছে। এখন ৯’শ এমএমসিএফডির নিচে নেমে এসেছে। সে কারণে গ্যাস ভিত্তিক অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকছে। বাধ্য হয়ে ব্যয়বহুল জ্বালানি তেল ব্যবহার করেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। ৪ জুলাই রাত ৯ টায় ৪ হাজার ৮০৯ মেগাওয়াট গ্যাস দিয়ে, তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫ হাজার ৪৯৫ মেগাওয়াট, কয়লা থেকে ৭৯৭, হাইড্রো থেকে ১২২ মেগাওয়াট এবং আমদানি থেকে ১ হাজার ১৩ মেগাওয়াট। ওই সময়ে চাহিদার প্রাক্কলন ছিল ১৫ হাজার মেগাওয়াটের মতো।

ঠিক কবে নাগাদ এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি আসবে এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি। তিনি বলেছেন, আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে। বিশ্ববাজার এখন যে দাম বিরাজ করছে, তা স্বাভাবিক বলা যায় না। পরিস্থিতি যাই থাকুক একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে একটা সিস্টেম গড়ে উঠবে। তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে আমাদেকও।

অন্যদিক বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে দু’টি জটিলতা বাংলাদেশের সামনে। একটি হচ্ছে পণ্যের উচ্চমূল্য, আরেকটি হচ্ছে পণ্যের প্রাপ্যতা। অনেক উন্নত দেশ ডলার নিয়ে বসে আছে দাম যা হোক তাদের গ্যাস চাই। আমরা গ্যাস চাই আবার দামও কম চাই। বিষয়টি খুবই জটিল সে কারণে গ্রাহকদের মিতব্যায়ী হতে হবে। গ্যাসের ঘাটতি মোকাবেলা করা হতো তেল দিয়ে সেই তেলের দামও চড়া।

বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুতের উৎপাদন (আমদানিসহ) সক্ষমতা রয়েছে ২১ হাজার ৩৯৬ মেগাওয়াট। এরমধ্যে কয়লা ভিত্তিক ১ হাজার ৬৮৮ মেগাওয়াট, গ্যাস ভিত্তিক ১০ হাজার ৮৭৮, ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক ৫ হাজার ৯২৫, ডিজেল ভিত্তিক ১ হাজার ২৮৬, একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কাপ্তাইয়ে ২৩০, আমদানি ১ হাজার ১৬০ ও সৌর বিদ্যুৎ থেকে ২২৯ মেগাওয়াট। ৪ জুলাই রাতে গ্যাস দিয়ে অর্ধেকের ও কম অর্থাৎ ৪ হাজার ৮০৯ মেগাওয়াট উৎপাদন করা হয়েছে।

পেট্রোবাংলার তথ্যে দেখা গেছে ৪ জুলাই গ্যাস সরবরাহ করা হয় ২ হাজার ৭৩৫ এমএমসিএফডি। ওই দিন বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২ হাজার ২৫২এমএমসিএফডির বিপরীতে সরবরাহ করা হয় মাত্র ৮৭৯ এমএমসিএফডি, সার উৎপাদনে ৩১৬ এমএমসিএফডির বিপরীতে ১৩৪, ননগ্রিডে ৮৭.৪ এবং অন্যান্য খাতে ১ হাজার ৬৩৩ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হয়।

তবে গ্যাসের যে সংকটের কথা বলা হচ্ছে অনেকেই এরসঙ্গে দ্বিমত পোষন করেছেন। তারা বলেছেন, আমাদের সিস্টেমে কমবেশি ৩ হাজার এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এরমধ্যে ২৩’শ দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে গড়ে প্রায় ৮’শ এমএমসিএফডি গ্যাস আমদানি করা হতো।

আমদানিকৃত এলএনজির মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় ৭’শর মতো আর মাত্র ১’শ আমদানি করা হয় স্পর্ট মার্কেট থেকে। দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির গ্যাসের দাম বাড়েনি, দাম বেড়েছে শুধু স্পর্ট মার্কেটে। যে কারণে স্পর্ট মার্কেট থেকে গ্যাস না আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। মাত্র ১’শ গ্যাস আসছে না বলে এমন ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে এ কথা অনেকেই বিশ্বাস করতে চান না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর