উত্তরা লেকে হচ্ছে না দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ, ব‍্যয় কমছে ১৬০ কোটি টাকা

, জাতীয়

আরমান হেকিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 10:49:50

 

উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব‍্যয় সংকোচনের কারণে প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে হাতিরঝিলের আদলে তিনটি দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ নির্মাণের উদ‍্যোগ। এর ফলে প্রায় ১৬০ কোটি টাকা কমে প্রকল্পের সংশোধিত ব‍্যয় দাঁড়াচ্ছে ৯০ কোটি ৭৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকায়।

তিনটি ব্রিজ নির্মাণের উদ‍্যোগ বাদ দেওয়ায় ১৬০ কোটি টাকা ব‍্যয় কমলেও প্রথম সংশোধনীতে মূল প্রকল্পের ব‍্যয় বাড়ছে ৫৪ কোটি ৪০ লাখ ৯১ হাজার টাকা। প্রকল্পের মূল ব‍্যয় ছিল ৩৭ কোটি ৩২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন‍্য প্রকল্পটি উত্থাপন করা হবে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) উজ্জল মল্লিক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্পে হাতিরঝিলের আদলে তিনটি দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ নির্মাণের কথা ছিল। এছাড়া আরও কিছু ব্যয়বহুল উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফলে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২৫০ কোটি টাকা (প্রকল্পের মূল ব‍্যয় ছিল ৩৭ কোটি ৩২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা)। কিন্তু ব্রিজ তিনটি হচ্ছে না। ফলে প্রকল্পের ব্যয় কমে ৯০ কোটি টাকা হচ্ছে। এছাড়া ব্রিজসহ কিছু কাজ বাদ দেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তরা লেক দখল হওয়া থেকে রক্ষা করে লেকের চারপাশে হাঁটার সুবিধা এবং ডাইভারশন ড্রেনেজের মাধ্যমে দূষণ প্রতিরোধকরণ ও পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য উন্নয়ন করা সম্ভব হবে বলে পরিকল্পনা কমিশন মত দেয়।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মূল প্রকল্পটি জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০১৬ মেয়াদে বাস্তবায়নের কথা। এর পরে জুন ২০১৯ পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। তারপরও প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন না হওয়ায় জুন ২০২০ পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। জুন ২০২০ পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ২৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, বাস্তব অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য জুন ২০২৩ পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। ফলে ধাপে ধাপে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৭ বছর।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে- লেকের পানি পরিচ্ছন্নকরণ, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, মাটি ভরাট, তীর সংরক্ষণ, স্লাজ অপসারণ, অফিস ইক্যুইপমেন্ট, ইন্সপেকশন পিট নির্মাণ, পরিবেশগত সমীক্ষা, অফিস ব্যবস্থাপনা ব্যয়, পরামর্শক ব্যয়, ওয়াকওয়ে ও অন্যান্য স্থাপনা মেরামত ও সংরক্ষণ অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি করা হবে। রিটেইনিং ওয়াল, ক্যাচ পিট নির্মাণ এবং ওয়েস্ট বিন স্থাপন ইত্যাদি অঙ্গ নতুনভাবে সংযোজন। (সেতু নির্মাণ, বক্স কালভার্ট নির্মাণ, আরবরিকালচার, যানবাহন ক্রয়, বিদ্যমান কালভার্ট পুনর্বাসন ও ডিওয়াটারিং ইত্যাদি অঙ্গ বাদ দেওয়া এবং প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করা।

প্রকল্পের মূল ডিপিপি প্রণয়নকালে কোনো মাস্টারপ্লান বা স্টাডি রিপোর্ট ছিল না। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের পর প্ৰণীত মাস্টার প্ল্যান, জরিপ এবং বাস্তব প্রয়োজনের ফলে লেকের পানি পরিচ্ছন্নকরণ, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, মাটি ভরাট ও তীর সংরক্ষণ কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া স্লাজ অপসারণ, অফিস ইকুইপমেন্ট, ইন্সপেকশন পিট নির্মাণ, পরিবেশগত সমীক্ষা, অফিস ব্যবস্থাপনা ব্যয়, পরামর্শক ব্যয়, ওয়াকওয়ে ও নানা স্থাপনা মেরামত ও সংরক্ষণের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাস্তব প্রয়োজনের নিরিখে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ক্যাচ পিট নির্মাণ এবং ওয়েস্ট বিন স্থাপন কাজ যুক্ত হয়েছে।

বাস্তবতার নিরিখে সেতু নির্মাণ, বক্স কালভার্ট নির্মাণ, আরবরিকালচার, যানবাহন, বিদ্যমান কালভার্ট পুনর্বাসন এবং ডিওয়াটারিং বাদ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হলো ভূমি অধিগ্রহণ ও স্থাপনার ক্ষতিপূরণ ১ দশমিক ২০ একর; ওয়াকওয়ে নির্মাণ ৪ হাজার ১৭০ মিটার, মাটি ভরাট কাজ ৬২ হাজার ঘনমিটার; তীর সংরক্ষণ কাজ সাড়ে ২৮ হাজার মিটার। স্লাজ অপসারণ ২ লাখ ৫০ হাজার ঘনমিটার।

প্রকল্পের আওতায় ৯০০ মিটার আইসিসি পাইপ স্থাপন, ১২৭টি ইন্সপেকশন পিট নির্মাণ করা হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় গ্রাস টার্ফিং ক্যাচপিট, লেকের পানি পরিচ্ছন্ন, ওয়েস্ট বিন স্থাপন, ওয়াল ও বিদ্যুৎতায়নের কাজ করা হবে।

প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য— লেকগুলো বেদখল থেকে রক্ষা করা; লেকের পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ কাজ; প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে মহানগরীর নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা; লেকের চারপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে পথচারীদের হাঁটার সুযোগ তৈরি করা; ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সাধন করা; ডাইভারশন ড্রেনেজের মাধ্যমে লেকের দূষণ প্রতিরোধকরণ ও লেকের পানির গুণগত মানের উন্নতিকরণ এবং চিত্তবিনোদন সুবিধার উন্নয়ন করা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর