‘ভাইয়া তো মারা গেছে, সাইকেলও নিয়ে গেছে চোরে’

, জাতীয়

সীরাত মঞ্জুর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2023-08-31 22:21:41

ভাইয়া তো মারা গেছে, সাইকেলও নিয়ে গেছে চোরে। এখন কার সঙ্গে সাইকেলে চড়বো! এভাবে অশ্রু ভেজা চোখে কথাগুলো বলছেন মিরসরাই ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে আইসিউতে মারা যাওয়া আয়াতের ছোট্ট ভাই আমির হোসেন আলিফ।

শুক্রবার (৫ আগস্ট) বিকেলে দুর্ঘটনার সাতদিন পর নিহত আয়াতের বাড়িতে গেলে কথা হয় তার ছোট ভাই আলিফের সঙ্গে। আমির হোসেন আলিফ বলেন, আমার ভাইয়া অনেক ভাল ছিলো, সেদিন আমার সঙ্গে কথা বলে গেছে। আমাকে বলেছে- আলিফ বাহিরে কোথাও যেওনা ঘরে থাকিও।

কাঁপাকাঁপা ঠোঁটে আলিফ বলে উঠে, ভাইয়া এখন তো মরে গেছে। পরশু রাতে চোর এসে আমার ভাইয়ার সাইকেলটাও নিয়ে গেছে। এখন আমি কার সঙ্গে সাইকেলে চড়বো!

কোনরকম টিনশেডের একটি সেমিপাকা ঘরে থাকতেন আয়াত, তার বাবা-মা ও ভাই। আজ সেই ঘরে চলছে শোকের মাতম। আর বাহিরে উঠান ভর্তি প্রতিবেশী ও স্বজনদের আহাজারি। এক পাশে চলছে তার মরদেহের শেষ গোসল।

আলিফের বাবা আব্দুস শুক্কুর। ভাড়ায় সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে বড় করেছেন ছেলেকে। পড়াচ্ছেন স্কুলে। স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে ভাল কোন চাকরি করবে ছেলে। সেই স্বপ্নটিও নিভে গেলো।

এদিকে বুধবার (০৩ আগস্ট) রাতে সবাই যখন চট্টগ্রাম মেডিকেলে আয়াতকে নিয়ে পড়ে আছে। সেই সময় শূন্য ঘরে হানা দেয় চোরের দল। নিয়ে যায় আয়াতের স্কুলে যাওয়ার সাইকেল ও ঘরের মূল্যবান সম্পদ তার মায়ের তিন-সাড়ে তিন ভরি স্বর্ণালংকার।

এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আয়াতের বাবা বলেন, আমি এখন কি করবো! আমার তো সব শেষ। একদিকে ঘরে চুরি। তার একদিন পর ছেলেটাকে হারালাম।

এদিকে আয়াতের সহপাঠি সাকিব বলেন, সেদিন ওদেরকে আমি বিদায় দিয়েছিলাম। কে জানতো এটি শেষ বিদায় হবে। আমার কাজ থাকাতে আমি সেদিন ওদের সঙ্গে যাইনি। আজকে আয়াতকেও হারাতে হবে ভাবিনি। আয়াত আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের মতো ছিল। এসব বলতে বলতে এক সময় হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন সাকিব।

চট্টগ্রামে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত আয়াত

নিহত আয়াত হাটহাজারী উপজেলার চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড কবির লাইন ম্যানের বাড়ির আব্দুস শুক্কুরের ছেলে। তিনি স্থানীয় কে এস নজু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। ঘরে তিন ভাইয়ের মধ্যে আয়াত মেঝো। বড় ভাই ছয়মাস আগে বিদেশে পাড়ি জমান। যে কিনা গত পরশু রাতে ভাইকে দেখতে ছুটে এসেছেন দেশে।

আজ রাত দশটায় আয়াতের নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক করবস্থানে তাকে দাফন করার হবে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

আজ শুক্রবার (০৫ আগস্ট) দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যু হয় আয়াতুল ইসলামের। চট্টগ্রামে ট্রেন দুর্ঘটনায় এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ১২ জনে।

এর আগে, গত ২৯ জুলাই আর অ্যান্ড জে প্রাইভেট কেয়ার কোচিং সেন্টার থেকে মিরসরাই খইয়াছড়া ঝর্ণায় ঘুরতে গিয়ে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় পড়েন ওই কোচিং সেন্টারের ছাত্র-শিক্ষকরা। খইয়াছড়া এলাকায় রেলক্রসিংয়ে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসে ধাক্কা দিয়ে আধা কিলোমিটার নিয়ে যায় চট্টগ্রাম শহরগামী মহানগর প্রভাতি ট্রেন। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৪ শিক্ষক, ৬ শিক্ষার্থী ও মাইক্রোবাস চালক। দুর্ঘটনায় ১ জন অক্ষত ও ৬ আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর