ঠাকুরগাঁওয়ে স্বচ্ছলের ঘরে ১০ টাকা কেজির চাল, বাদ পড়ল অসহায়রা!

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঠাকুরগাঁও | 2023-08-31 03:36:07

ঠাকুরগাঁওয়ে অনেক স্বচ্ছল পরিবারের ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে সরকারের দেয়া ১০ টাকা কেজির চাল। আর এ সকল স্বচ্ছল পরিবারকে সুবিধা দিতে গিয়ে তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন অনেক অস্বচ্ছল ও অসহায় পরিবার।

মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, সরকারের খাদ্য কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি চালের আগের কার্ডধারী ২০০ জনের বেশি সুবিধাভোগীর নাম বাদ দিয়েছে চেয়ারম্যান।

এ অভিযোগ করেছেন ইউনিয়নের বাদ পড়া সুবিধাভোগীরা। যাদের মধ্যে রয়েছে, শ্রমিক, মজুর, প্রতিবন্ধী ও বিধবা নারীও।

সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন তালিকায় তপন নামক সুবিধাভোগীর বসবাস ছাদপিটা ফাউন্ডেশনের বাড়িতে। নিজের বড় ব্যবসা থাকার কথা নিজ মুখেই বেশ গর্বের সাথে স্বীকার করলেন তিনি।

এছাড়াও তালিকার অনেক সুবিধাভোগী নিয়ম বহির্ভূতভাবে সরকারের খাদ্য কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি চালের সুবিধা ভোগ করছে।

এই বিষয়ে শীবগঞ্জ বাজারে দলবদ্ধভাবে অভিযোগ করেছেন চাতাল শ্রমিক শহিদুল ইসলাম, মজুর শাহেদ আলী, মামুন, বাসুদেবসহ অনেকে। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে প্রতিবন্ধী সুমনের পরিবারেরও।

চাতাল শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বলেন, ৬ মাসের বেশি সময় ধরে ১০ টাকা কেজি চালের কার্ডের মাধ্যমে চাল কিনে থাকি। এবারে নতুন তালিকা করেছে আমার নাম বাদ দিয়েছে। বলেছে আর চাল দিবে না। কার্ডটাও নিয়ে রেখে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রোদে পুরে চাতালে কাজ করে ৪০০ টাকা পাই। আবার প্রতিদিন কাজ হয় না। আমাকে যদি বিত্তবান বলে চেয়ারম্যান তাহলে আমার কিছু করার নাই।

আল মামুন বলেন, আমরা কি অপরাধ করেছি। যদি গরিবের সংখ্যা বেশি হয় তবে বরাদ্দ বাড়িয়ে আনতে পারতেন চেয়ারম্যান। আমাদের বঞ্চিত করে তিনি যা করেছেন তা নিয়মের মধ্যে পড়ে কিনা আমার জানা নাই। আমি দাবি রাখছি যেন চেয়ারম্যান এই ২০০ বেশি গরিব মানুষের কার্ডগুলো ফিরিয়ে দেন।

প্রতিবন্ধী সুমনের পরিবারের লোকজন জানান, আমাদের কার্ড ছিলো। ১০ টাকা কেজি চাল সংগ্রহ করতাম। কিন্তু আমাদের প্রতিবন্ধী সুমনের কার্ডটাও রেখে দিয়ে নাম বাতিল করা হয়েছে। শুনেছি আমরা আর চাল পাবো না।

চেয়ারম্যানের এমন কর্মকাণ্ডে বিস্তর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। নাম না প্রকাশের শর্তে এক রাইসমিল ব্যবসায়ী বলেন, আমার চাতালে কাজ করেন গরীব মানুষরা। প্রতিদিন কাজও থাকেনা। তাদেরকে বিত্তবান বলে কার্ড বাতিল করে তার নির্বাচনী কর্মীদের তালিকাভুক্ত করেছেন তিনি। এছাড়াও দলীয় নেতাকর্মীদের কার্ড করে দিয়েছেন। এমন মন মানসিকতা একজন চেয়ারম্যান নিজেকে জনগণের সেবক দাবি করাটা অযৌক্তিক।

জামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ বলেন, নির্দেশনা মোতাবেক যারা অস্বচ্ছল, যারা ভিজিডি সুবিধা পায় এবং যারা মারা গেছেন তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। তবে ভুলকরে কিছু বিত্তবান এই তালিকায় আসতে পারে। এটা দ্রুতই সমাধান করতে হবে।

এ বিষয়ে ইউএনও আবু তাহের মোঃ শাসুজ্জামান বলেন,  আমরা চাই সরকারের সুবিধা অস্বচ্ছল ব্যক্তিরা যেন অগ্রাধিকার পান। ভোক্তাদের নতুন তালিকা হালনাগাদের সময় কোন অস্বচ্ছল ব্যক্তি বাদ পড়ে গেলে বা স্বচ্ছল পরিবারের নাম যোগ হলে তা সংশোধনের সুযোগ রয়েছে৷

এ সম্পর্কিত আরও খবর