হারিয়ে গেছে গরুর লাঙ্গল

খুলনা, জাতীয়

এস এম জামাল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 19:49:29

গরু দিয়ে মাঠে লাঙ্গল দেওয়া, মই দেওয়া, ধানসহ অন্যান্য ফসল মাড়াইয়ের প্রাকৃতিক চিত্রগুলো দিনে দিনে অনেকটাই হারিয়ে গেছে।

কালের বিবর্তনে পরিবর্তন এসেছে অনেক কিছুতেই। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষি প্রধান জেলার মধ্যে কুষ্টিয়া অন্যতম।

এখানকার মানুষদের কাক ডাকা ভোরে ঘুম ভাঙত লাঙ্গল-জোয়াল আর হালের গরুর মুখ দেখে। এক সময় গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে ছিল চাষের গরু, লাঙ্গল এবং মই। এছাড়া ছিল নানা ধরনের যন্ত্র যা সাধারণত কৃষি কাজে ব্যবহার করা হয়।

এখন প্রযুক্তির আধিপত্যে সেই জনপদের মানুষদের ঘুম ভাঙে হালচাষ যন্ত্র ‘ট্রাক্টরের’ শব্দে। বিশ্বে উন্নত প্রযুক্তি এখন আমাদের দোরগোড়ায়, তাই আগের সেই সব যেন ইতিহাস।

আগে জমিতে বীজ বপন অথবা চারা রোপণের জন্য গরু দিয়ে মাটিতে হাল চাষ করা হত। এরপর সেই মাটি সমান করার জন্য মই ব্যবহার করা হত। লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ করতে কমপক্ষে একজন লোক ও একজোড়া গরুর প্রয়োজন ছিল। এখন আমাদের এই কৃষি প্রধান বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লাঙ্গল জোয়াল, মই, গরু, মহিষ।

মিরপুর উপজেলার মশান গ্রামের প্রবীণ কৃষক মজিবর শাহ, মোহাম্মদ শাহ, আফজ্জেল মণ্ডল জানান, এককালে জমি চাষের জন্য কৃষকের অন্যতম প্রধান উপকরণই ছিল ‘হালচাষ’ পদ্ধতি। এটি ব্যবহার করে কৃষকরা তাদের জমি প্রস্তুত করতেন ফসল লাগানোর জন্য।

তারা আরও জানান, জমি প্রস্তুতের জন্য কাকডাকা ভোরে গরু বা মহিষসহ লাঙ্গল-জোয়াল কাঁধে নিয়ে কৃষকরা ছুটতেন নিজ নিজ জমিতে। আবার অনেকেই শ্রমের বিনিময়ে অন্যের জমিতে হালচাষ করে দিতেন। সেই আয় দিয়ে তাদের সংসার চলত।

কিন্তু এখন আর আগের সেই দিন নেই। গলা ফাটিয়ে গান গেয়ে জমিতে লাঙল চালিয়ে চাষাবাদের সেই দৃশ্যের দেখা পাওয়া আজ বড়ই দুষ্কর। হয়তো একদিন গ্রাম বাংলার এই হালচাষ পদ্ধতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্পের মতোই শোনাবে- যোগ করেন এসব প্রবীণ কৃষকরা।

এদিকে রোববার (২ ডিসেম্বর) হঠাৎ করেই মিরপুর উপজেলার মশান গ্রামে মান্নান শাহ নামে এক কৃষককে গরু দিয়ে জমি চাষ করতে দেখা গেছে।

এ সময় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘একজোড়া বলদ গরুই আমার সম্বল। নিজের কিছু জমি আছে, সেগুলো ছাড়াও অন্যের জমি চাষ ও মই দিয়েই আমি সংসার চালিয়ে থাকি। তবে আগে এই গ্রামে অনেক বলদ গরু ছিল। সেগুলো দিয়ে হালচাষ করা হতো। কিন্তু এখন তো পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টরের কারণে হালচাষ বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর দিয়ে কম সময়ে বেশি জমি চাষ করা সম্ভব।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেষ চন্দ্র ঘোষ বার্তা২৪.কমকে বলেন, আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন আগের সেই কৃষি উপকরণগুলো বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে গ্রামীণ এই ঐতিহ্য ধরে রাখা প্রায় দুরূহ। কারণ মানুষ এখন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর