শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দেওয়া আগুনে প্রাণ গেল রিতার

ঢাকা, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 22:35:34

বিয়ে হয়েছে তিন বছর হল, স্বামী কাতারপ্রবাসী। বিয়ের পর স্বামীর অনুপস্থিতিতে সংসারের দিকে মনোযোগী হন রিতা। সেজন্য এইচ এস সি পাশের পর লেখাপড়ার ইতি টানতে হয়েছে। কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা রাখছিলেন রিতা। ঠিক তখনই তার ওপর মৃত্যুর খড়গ নেমে আসে।

শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দেওয়া আগুনে পুড়ে গুরুতর দগ্ধ হন রিতা। অবশেষে চার দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে অকালে প্রাণ হারান এ গৃহবধূ। তার সাথে সাথে যবনিকাপাত ঘটে এক তরুণীর সংসার সাজানোর স্বপ্ন।

 রিতার কথা বলতে গিয়ে এভাবেই বর্ণনা দিচ্ছিলেন রিতার শ্বশুরবাড়ির পাশের বাসিন্দা ও রিতার আত্মীয়রা। গত বুধবার (২৮ নভেম্বর) রাতে শ্বশুরবাড়িতে বাথরুম থেকে ঘরে ফেরার পথে ভাসুর ও শাশুড়ি মারধর করে কেরোসিন ঢেলে রিতার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় রিতা প্রান বাঁচাতে চিৎকার করলেও শ্বশুরবাড়ির কেউ এগিয়ে আসেনি।

পরে আশপাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবশেষে রোববার (২ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান রিতা।

নিহত রিতা (২২) গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নতুন পটকা গ্রামের রুকন ফকিরের মেয়ে। তিন বছর আগে একই উপজেলার নারায়াণপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে কাতারপ্রবাসী আসাদুলের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে রিতা তার স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করছিল।

এ ঘটনায় ইতোমধ্যে রিতার বাবা রুকন ফকির বাদী হয়ে রিতার শাশুড়ি হাজেরা, ভাসুর বিপ্লব, এবাদুল্লাহ, এমজা ও ননদ জান্নাতের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তাদের দাবি শ্বশুর বাড়ির লোকজনই পরিকল্পিতভাবে রিতাকে হত্যা করেছেন।

রুকন ফকিরের ভাষ্য, বিয়ের পর রিতাকে তার শ্বশুরবাড়িতে রেখে তার স্বামী আসাদুল  কাতার চলে যান। সেখানে তিনি গাড়ির চালকের কাজ করেন। গত সাত মাস আগেও দেশে এসেছিলেন আসাদুল।

রিতার স্বামী দেশে না থাকার সুযোগে তার শাশুড়ি, ভাসুর ও ননদরা প্রায়ই তাকে নির্যাতন করতেন। নির্যাতনের কারণে গত পাঁচ মাস আগে থেকে রিতা শশুর বাড়িতেই আলাদা হয়ে একাকী বসবাস করতে থাকেন।

এদিকে রিতার একাকী বসবাসের খবরে সম্প্রতি তার স্বামী দেশে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। সেজন্য দেশে এসে গাড়ি চালাবেন বলে একটি গাড়ি কেনার জন্য আড়াই লাখ টাকা পাঠান।

পরে তিনি (রিতার বাবা) আরো নয় লাখ টাকা জোগাড় করে জামাইয়ের জন্য একটি গাড়ি কেনেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে রিতার শ্বশুর বাড়ির লোকজন।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় মামলা রুজু হয়েছে। ইতোমধ্যেই রিতার শাশুড়ি ও ননদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর