ব্রহ্মপুত্র নদে সেতু নির্মাণে চরাঞ্চল এখন উপ-শহর!

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, জামালপুর | 2023-09-01 06:08:57

জামালপুরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া সর্বনাশা ব্রহ্মপুত্র নদ জেলাটিকে দ্বি-খণ্ডিত করেছে। অনুন্নত একটি অংশ ছিল পূর্বচর। এক সময়ে এই অংশটি সকল উন্নয়নের ক্ষেত্রে-ই পিছিয়ে ছিলো। স্থানীয় এমপি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ নদে দুটি সেতু নির্মাণে চরাঞ্চল এখন উপ-শহরে পরিণত হয়েছে।পাল্টেছে মানুষের জীবন যাত্রার মান।

জানা যায়, ২০১৩ সালে ইসলামপুর উপজেলার পাইলিং ঘাট হতে গোয়ালেরচর রাস্তায় "বীর উত্তম শহীদ খালেদ মোশারফ সেতু”ও মেলান্দহের ডেফলা ঘাট হতে ইসলামপুরের ডিগ্রীরচর আমডাঙ্গা সড়ক পর্যন্ত "শহীদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল সেতু” নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেন আওয়ামী লীগ সরকার। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে প্রায় সোয়া ২০০ কোটি টাকার ব্যয়ে ৫৬০ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুদুটি ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। মাত্র ৫ বছরেই ইসলামপুরের চারটি ইউনিয়ন ও মেলান্দহের একটি ইউনিয়ন চরাঞ্চলের সারি থেকে উপ-শহরে পরিণত হয়েছে। বকশিগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী শেরপুর জেলার লোকজন সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াতে মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে।

সরেজমিনে গেলে, সেতু হওয়ার আগের অবস্থার বর্ণনা তুলে ধরে ডিগ্রীরচর সকাল বাজারের বণিক সমিতির সভাপতি আল-আমিন বাচ্চু মেম্বার বলেন, এক সময় খেয়া নৌকায় পার হতে খেয়াঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। যাত্রী বেশি উঠায় অনেক সময় নৌকা ডুবে আপনজন হারানোর কথা ভুলবার নয়। সেতু নির্মাণে আওয়ামী সরকার আমাদের জানমালের নিরাপত্তার মাধ্যম সৃষ্টি করাই, বর্তমান ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিএনপি থেকে আমি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছি।

গাইবান্ধা ইউনিয়নের সুবহান আলী,মিঠুন মিয়া,হারুন আলীসহ একাধিক কৃষকেরা বলেন, অনেক পরিশ্রম করে ফসল ফলিয়ে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারি নাই। সার কিটনাশক অনেক কষ্টে ঘাড়ে বহন করে আনতে হতো। এখন সার,কিটনাশক ও শস্য ঘাড়ে বহন করা লাগেনা, গাড়ি বাড়িতেই এসে পরে,দামেও ভালো বিক্রি করতে পারি। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নিকট আসলেই আমরা কৃতজ্ঞ।

চরপুটিমারী ইউনিয়নের পল্লী চিকিৎসক বর্তমানে ঢাকায় বসবাসকারী আলালউদ্দিন এলাকায় বেড়াতে এসে গ্রামগুলো প্রায় শহরে রূপায়িত হওয়াই আওয়ামী সরকারের প্রশংসা ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ভয়াল এক রাতের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, এক জনৈক ডেলিভারি রোগীর কল আসে আমি সেই বাড়িতে যায়। রোগীর অবস্থা আশংকাজনক দেখে, তাকে চৌকিতে তুলে কাঁধে করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে রওনা হই। খেয়া ঘাটে মাঝিদের না পেয়ে লোক পাঠাই মাঝিদের বাড়িতে, রোগীর অবস্থাও অবনতি ও অনেক সময় ব্যয় হওয়াই,খেয়া ঘাটেই সে মৃত সন্তান প্রসব করে। আর এখন কত উন্নত, সবকিছুই হাতের কাছেই!

শেরপুর জেলার কামারের চরের বাসিন্দা পথচারি মনিরুজ্জামান ও তার স্ত্রী বলেন, আগে ইসলামপুর আসতে জামালপুর হয়ে যেতে হতো। সেতু হওয়াতে এখন অল্প সময়ে সল্প খরচে ইসলামপুর যেতে পারি। এমপি সাহেব আসলেই এই এলাকাতে অনেক উন্নয়ন করেছেন। এক সময়ের চরাঞ্চল এখন তো আর চর মনে হয় না, যেন শহর!

পোড়ারচর টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আজাদ বারী বলেন, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য অনেক কষ্ট করে খেয়া নৌকায় পৌর শহরের স্কুল কলেজে যেতে হতো। সেতু নির্মাণের পরপরই অসংখ্য স্কুল কলেজ এ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা লাভ করাই লেখাপড়ার হার বৃদ্ধি হয়েছে।

দেখা যায়,সেতু নির্মানের পাশাপাশি হাট বাজার,রাস্তা ঘাট,বিদ্যুৎ,চিকিৎসা কেন্দ্রসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের মনে যেন শহরের ছোঁয়া লেগেছে। শিক্ষা, ব্যবসাসহ কৃষি ক্ষেত্রেও উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এ অঞ্চলের লোকজন। নিত্য নতুন কর্মক্ষেত্রের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আইন-শৃঙখলা রক্ষার জন্য স্থাপন করা হয়েছে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র। এতে কমছে অপরাধ, বদলেছে মানুষের জীবন প্রবাহ, চরাঞ্চল হয়েছে উপ-শহর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর