পানির গুণগতমান পরীক্ষা, প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ

, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 12:22:27

প্রকল্পে অনিয়মের কারণে আটকে আছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘ওয়াটার কোয়ালিটি টেস্ট ম্যানেজমেন্ট স্ট্রেনদেনিং প্রজেক্ট’ (পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ)। প্রকল্পে নানা অনিয়মের কারণে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

অনিয়মের বিষয়ে দরপত্র পুন:মূল্যায়ন এবং দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের আইনগত প্রতিকার দেয়াসহ ৫ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওয়াটার কোয়ালিটি টেস্ট ম্যানেজমেন্ট স্ট্রেনদেনিং প্রজেক্টের আওতায় টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান স্টার্লিং মাল্টি টেকনোলজিস লিমিটেড (টেন্ডার আইডি ৬৪৭২৮ এবং ৬৪৬৯২৪) ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তোলে। সর্বনিম্ন দরে ৫ম স্থানে থেকেও তাদেরকে বাদ দিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে ৭ম স্থানে প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এরইপ্রেক্ষিতে বিষটি তদন্তে গত ৬ জুলাই তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

তদন্ত কমিটির তিন সদস্য হলেন- স্থানীয় সরকার বিভাগের পানি সরবরাহ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. খাইরুল ইসলাম, একই অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব জসিম উদ্দিন এবং পরিকল্পনা-৩ শাখার উপ সচিব ড. বেলাল উদ্দিন। পরে সিনিয়র সহকারী সচিব (পাস-২) এ কে এম সাইফুল আলমকে কমিটিতে কো-অপ্ট করা হয়।

গত ২৭ জুলাই থেকে কাজ শুরু করে তদন্ত কমিটি। এ সময়ে ওই কমিটি অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠান, প্রকল্প পরিচালক, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন এবং তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে সম্প্রতি বিস্তারিত মতামত ও সুপারিশ সম্বলিত রিপোর্ট পেশ করেন। এতে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং এই অনিয়মের সঙ্গে প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক উভয়ই জড়িত বলে মতামত দেয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২৭ জুলাই তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগের বিষয়টি লিখিতভাবে জানায় ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠান স্টার্লিং মাল্টি টেকনোলজিস লিমিটেড।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান ও স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খায়রুল ইসলাম বরাবর দাখিল করা লিখিত অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির অপারেশন ম্যানেজার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা স্টার্লিং মাল্টি টেকনোলজিস লিমিটেড টেন্ডার আইডি ৬৪৭২৮ এবং ৬৪৬৯২৪ অংশগ্রহণ করি। টেন্ডার ওপেনিংয়ের সময় আমরা দেখতে পারি যে, আমরা সর্বনিম্ন দিক থেকে ৫ম অবস্থান করি। কিন্তু আমরা বিশ্বস্তসূত্রে জানতে পারি যে, সর্বনিম্ন দিক থেকে ৭ম অবস্থানকৃত টেকনোল্যাবকে মনোনীত করে রিপোর্ট প্রদান করা হয়। এজন্য আমরা টেন্ডার দুটি পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করি।

টেন্ডারে অ্যাপ ভ্যালু ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারি টেন্ডার বাজেট ২৮ কোটি ৮৪ লাখ ১৫ হাজার ৪০০ টাকা উল্লেখ করে টেকনোল্যাবকে মনোনীত করা হয়।

সূত্র জানায়, প্রকল্প পরিচালক এই টেন্ডার দুটির জন্য কোন টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেননি। একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার জন্য তাদের স্পেসিফিকেশন হুবহু টেন্ডার প্রকাশ করে।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্প পরিচালক বিভিন্ন মারফত আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদর্শন করেন এবং ব্যবসা করতে দেবে না যদি তার কথামত না চলি। অভিযোগ দেওয়ার পর তিনি আরও বেশি আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের জানমালের হুমকি দেয়।

অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শেষে যে রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছে, তাতেও অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

রিপোর্টে মতামত অংশে বলা হয়েছে-পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের পণ্য প্যাকেজ ৫ ও ৬ দুটিকে ভেঙ্গে চারটি প্যাকেজ করা হয়েছে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ১৭ (৪) ও ১৭ (৫) অনুযায়ী ডিপিপি তে অনুমোদিত কোন একক কাজকে একাধিক প্যাকেজে বিভক্তকরণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু বিধি মোতাবেক তা করা হয়নি যা গুরুতর অনিয়ম। প্রধান প্রকৌশলী এ বিষয়ে জেনেও টেন্ডার প্রক্রিয়ার বাকি কার্যক্রম চলমান রেখেছে, এমনকি পিডিকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির উদ্যোগ না নিয়ে এই অনিয়ম চলমান রেখেছে যা অনিয়মের সাথে তিনি জড়িত বলে প্রতীয়মান হয়। টেন্ডার দুটি মূল্যায়নের জন্য বিধি মোতাবেক কোন টেন্ডার ওপেনিং ককিটি (টিওসি) এবং টেন্ডার ইভ্যুয়ালেশন কমিটি (টিইসি) গঠন না করে প্রকল্প পরিচালক এ অনিয়মের সাথে সম্পৃক্ত বলে প্রতীয়মান হয়।

তদন্ত রিপোর্টে ৫ দফা সুপারিশের মধ্যে রয়েছে - পানির গণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশারীকরণ প্রকল্পের কার্যক্রমে অনিয়ম হওয়ায় আবেদনকারীসহ অন্যান্য দরপত্রে অংশগ্রহণকারী (টেন্ডারর) আইনগত প্রতিকার দেয়ার জন্য সুপারিশ করেন; জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের চলমান এ প্রকল্পসহ অন্যান্য সকল প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়া বিধি মোতাবেক প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা- কমিটির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে যাচাই করা যেতে পারে; সকল প্রকল্পে মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা যেতে পারে; সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) এর ২০/০৭/২০২২ তারিখের ৫১৮ নম্বর স্মারকের বরাতে প্রধান প্রকৌশলীসহ তার কার্যালয়ের অস্বচ্ছতা, খেয়ালীপনার কারণে পিপিএ-২০০৬ এবং পিপিআর ২০০৮ এর বিধিসমূহ লঙ্ঘন হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। সিপিটিইউ এর আদেশসমূহ পর্যালোচনা করা যেতে পারে;

পিপিআর-২০০৮ আলোকে টেন্ডার ওপেনিং কমিটি এবং টেন্ডার ইভ্যুয়ালেশন কমিটি গঠনপূর্বক আলোচ্য দরপত্র দুটি পুন:মূল্যায়ন করা যেতে পারে বলেও তদন্ত কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর