রংপুরে আ.লীগ প্রার্থীর ৩০ হাজার, বিদ্রোহীর আয় ১৮ কোটি টাকা

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-08-26 00:13:04

রংপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর নগদ টাকার পরিমাণ নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলছে। শুধু তাই নয়, তাদের বার্ষিক আয় ও শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামার তথ্য নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ।

হলফনামায় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ইলিয়াছ আহমেদের নগদ টাকা ৩০ হাজার এবং আওয়ামী লীগ থেকে সদ্য বহিষ্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থী মোছাদ্দেক হোসেন বাবলুর নগদ টাকা ১৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার ৫২৪ টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের দাখিল করা হলফনামা সূত্রে জানা গেছে, দুই প্রার্থীর মধ্যে ইলিয়াছ আহমেদের বার্ষিক আয় ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা আর মোছাদ্দেক হোসেনের আয় ২৪ লাখ ২৯ হাজার ১০১ টাকা। শিক্ষাগত যোগ্যতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী এলএলবি পাস ও পেশায় আইনজীবী। আর বিদ্রোহী প্রার্থী এসএসসি পাস ও পেশায় ব্যবসায়ী।

ইলিয়াছ আহমেদের কৃষি খাতে আয় দেখানো হয়েছে ১ লাখ টাকা, পেশা থেকে আয় ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে পোস্টাল সেভিংস রয়েছে ৫ লাখ টাকা, স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু রয়েছে ৬ ভরি, নিজের নামে ১০ বিঘা ও স্ত্রীর নামে ২০ বিঘা কৃষি জমি রয়েছে।

এ ছাড়া অকৃষি জমি ৩০ শতক, গ্রামে দোতলা বাড়ি এবং স্ত্রীর নামে টিনসেড বাড়ি রয়েছে। তার মুক্তিযোদ্ধা ঋণ রয়েছে ১০ লাখ টাকা।

হলফনামা অনুয়ায়ী মোছাদ্দেক হোসেন বাবলুর আত্মীয় স্বজনদের থেকে ধার অথবা কর্জ নেই। কৃষিখাতে তার রয়েছে ২৭ হাজার ২৯০ টাকার সম্পত্তি। বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকানসহ অন্য ভাড়া বাবদ আয় রয়েছে ৯ লাখ ৮৭ হাজার ৭৬০ টাকা। ব্যবসা বাবদ আয় রয়েছে ১৪ লাখ ১৪ হাজার ৫১ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, একচেঞ্জ ইত্যাদিতে রয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।

বাস, ট্রাক, ছোট গাড়ি ইত্যদি বাবদ দেখানো হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। স্বর্ণ অন্য মূল্যবান পাথর রয়েছে ৫৫ হাজার টাকার। ইলেক্টনিক্স সামগ্রী রয়েছে ১ লাখ টাকার। আসবাবপত্র ১৫ হাজার টাকা। কৃষি জমি রয়েছে ৫৮ লাখ ৩ হাজার ২৫০ টাকার। এছাড়া অকৃষি জমি রয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭০ টাকার। দালান, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে ১৫ কোটি ৮০ লাখ ২৩ হাজার ৪৯৬ টাকার। বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট ১ কোটি ৫৫ লাখ, ৪০ হাজার ৪৫০ টাকার। অন্য ১ লাখ ৩০ হাজার ৯৫৬ টাকা। অপরদিকে তার জামানতবিহীন ঋণ ৫০ লাখ এবং ব্যাংকে ঋণ রয়েছে ১৯ কোটি ২৩ লাখ ৫১ হাজার ১৯৩ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছ আহমেদ ১৯৭১ সালের স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা ছিলেন। স্বাধীনতার আগে তিনি রংপুর সদর (মহকুমা) জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সস্পাদক, রংপুর সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন।

তিনি ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ ডিসি অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাওয়ের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। স্বাধীনতার পর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি, জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য এবং সহ-যুব সম্পাদক ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রবীণ এ নেতা ২০ বছর রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। এই নির্বাচনকে ঘিরে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ১২ বছর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের জেলার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু । এ ছাড়া তিনি রংপুর চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ছিলেন।

প্রসঙ্গত, আগামী ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ইলিয়াস আহমেদ আনারস প্রতীকে এবং বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মোটরসাইকেল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রংপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইতিমধ্যে তাকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ আ.লীগের সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ নির্বাচনে জেলার ১০৯৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর