আজ ২১শে পদক প্রাপ্ত চারণ কবি বিজয় সরকারের প্রয়াণ দিবস

খুলনা, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 17:55:46

একুশে পদক প্রাপ্ত চারণ কবি আল বিজয় সরকারের ৩৩ তম প্রয়াণ দিবস আজ মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর)। ১৯৮৫ সালের এই দিনে ভারতের বেলুটিয় কন্যা বুলবুলির বাড়ি বিধান পল্লীতে মৃত্যুবরণ করেন। কবির মৃত্যু বার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষে চারণ কবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে দুইদিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মঙ্গলবার বিজয়গীতি প্রতিযোগিতা, কবিতায় বিজয় সরকার(স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর), কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন, কবির আত্মার শান্তি কামনা, নীরবতা পালন, বিষয় ভিত্তিক আলোচনা সভা, প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ ও বিজয় গীতির আসর।

৫ ডিসেম্বর সেমিনার, উন্মুক্ত বিজয়গীতি পরিবেশনা, সম্মাননা প্রদান, চারণ কবি স্বর্ণপদক প্রদান ও কবি গানের আসর রয়েছে।

এবছর স্বর্ণপদকের জন্য মনোনিত হয়েছেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার শ্যামল সরকার। এছাড়া সম্মাননা প্রদান করা হবে ৭ জনকে। তারা হলেন, বিজয় গবেষক সম্মাননায় নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কলাবাড়িয়ার কবি মোহসিন হোসেন, বিজয় নান্দীকর সম্মাননায় নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়ার শিল্পী বলদেব অধিকারী, বিজয়গীতি সম্মাননায় নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়ার শিল্পী কানাই লাল কুণ্ডু। বিজয় সাথী সম্মাননা সদর উপজেলার বেতভিটার বিএম ফসিয়ার রহমান, মুলিয়ার রবীন্দ্রনাথ অধিকারী, বালিয়া ডাঙ্গার আসাদুজ্জামান ও ফেদির ওয়াহিদুর রহমান মুকুল।

জানা গেছে, বিরল ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভা সম্পন্ন আধ্যাতিক পুরুষ কবি আল বিজয় সরকার ১৯০২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার ডুমদি গ্রামে পিতা নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মাতা  হিমালয় অধিকারীর সংসারে জন্ম গ্রহণ করেন। দশ ভাইবোনের মধ্যে বিজয় ছিলেন সবার ছোট।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাল্যকাল থেকে তিনি ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির। মাধ্যমিক শিক্ষার গণ্ডি পেরোতে না পারলেও স্কুল জীবন থেকেই তিনি গান রচনা ও সুর করে নিজে গাইতেন। শিশুকাল থেকে তার প্রতিভা বিমোহিত হয়ে তৎকালীন সময়ে বিখ্যাত লোককবি মনোহর সরকার মুগ্ধ হন। ১৯২৯ সালে বিজয় সরকার নিজেই কবি গানের দল গঠন করেন।

১৯৩৫ সালে কলকাতার এ্যালবার্ট হলে কবি গানের এক আসর বসে। ওই আসরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসিম উদ্দিন ,কবি গোলাম মোস্তফা, কণ্ঠ শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বিজয় সরকারের গান শুনে মুগ্ধ হয় এবং আশীর্বাদ করেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ‘ভারতীয় ভাষা পরিষদ’ তাকে সংবর্ধনা দেয়। এ অনুষ্ঠানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ডক্টর আশুতোষ ভট্টাচার্য, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর দেবীপদ ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন। তিনি একাধিকবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, ডক্টর মোঃ শহিদুল্লাহ, দার্শনিক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, বিশ্ব নন্দিত চারু শিল্পী এস.এম, সুলতান সহ অসংখ্য গুণীজনের সান্নিধ্য লাভ করেন।

‘এ পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে’ - বিখ্যাত এরকম হাজারো মরমী গানের স্রস্টা কবিয়াল বিজয় সরকার। বাংলাদেশের কবি গানের উৎকর্ষ সৃষ্টিতে কবিয়াল বিজয় সরকারের অবদান অসামান্য। গ্রামবাংলার মানুষের হৃদয়ের আকুতিকে তিনি চমৎকার সুর ব্যঞ্জনায় তুলে ধরে সাধারণ মানুষের অন্তরে ঠাঁই নিয়েছেন। প্রচার বিমুখ ও নিভৃতচারী এই সংগীত সাধক আসরের প্রয়োজনে মঞ্চে বসেই গান রচনা করে তাৎক্ষনিক ভাবে সুর করে তা পরিবেশন করেছেন। বিজয় সরকারের ভাবধারা ও সংগীত প্রসঙ্গে পল্লী কবি জসীম উদ্দিন বলেছিলেন, ‘মাঝে মাঝে দেশীয় গ্রাম্য গায়কদের মুখে বিজয়ের রচিত বিচ্ছেদ গান শুনিয়া পাগল হই। এমন সুন্দর সুর বুঝি কেহই রচনা করিতে পারে না’।

দীর্ঘ সংগীত সাধনার জীবনে তিনি প্রায় দুই হাজার গান লিখেছেন। যার মধ্যে রয়েছে বিচ্ছেদিগান, শোকগান, ইসলামীগান, আধ্যাতিক গান, দেশের গান, কীর্তন, ধর্ম ভক্তি, মরমী গান, বাউল, কৃঞ্চপ্রেম, শ্রেনী সংগ্রাম ইত্যাদি। ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর