'রাজনৈতিক অর্থনীতির জনবান্ধব চর্চা জরুরি'

, জাতীয়

মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 10:09:20

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার পরিচালনা পরিষদের অভিজ্ঞতায় মনে করেন, "সব সময় রাজনৈতিক কথাবার্তা বলার চেয়ে রাজনৈতিক অর্থনীতির জনবান্ধব চর্চা করা জরুরি।" চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিনিয়র প্রফেসর ও শিক্ষাবিদ মনে করেন, "আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে অনেক স্বল্পোন্নত দেশেরই স্বাধীনতা ও অর্থনীতি বিপন্ন। ফলে বাস্তবতার নিরিখে নীতিনির্ধারকদের সঠিক ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।"

বার্তা২৪.কম'র সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রফেসর পারভেজ বলেন, "সারা পৃথিবীই এখন একটি 'অর্থনৈতিক মন্দার ব্ল্যাক হোল'-এর দিকে যাচ্ছে বা ঢুকে গেছে। এ বিষয়ে কারো কোনও সন্দেহ নেই। বাংলাদেশও এক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন। ধারণা করা হচ্ছে যে, ২০২৩ সালের এপ্রিলের দিকে খাদ্যাভাব এবং নানাবিধ আর্থিক সঙ্কট দেখা দেবে। মূলত চলমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সারা পৃথিবীতে খাদ্য সাপ্লাই চেইন বাধাগ্রস্থ হবে। অনেক দেশ তার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে খাদ্য জমা করবে। আবার অনেক দেশ খাদ্য রফতানি করবে না। এমতাবস্থায় অনেকে 'প্যানিক বায়িং' করবে। আবার অনেকে খাদ্য মজুদ করবে। এসবের কারণেও খাদ্যের অভাব বিশ্বের দেশে দেশে বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।"

প্রফেসর সৈয়দো আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, "এই সময় সকলে বলছে মিতব্যয়ী হতে। অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, আঠার মাস এ অবস্থা থাকতে পারে। তাই এ সময় কেনাকাটা কিছু কম করতে হবে। আর যা নগদ আছে তা খরচ না করার বা কেনা কমিয়ে দেওয়ার দিকেও নজর দিতে হবে। তবে সঙ্কুল পরিস্থিতিতে ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিতেও ধস নামতে পারে। ফলে অনেক লোক বেকার হয়ে যাবে। অনেক লোক পেশা বদলাতে বাধ্য হবে।"

আর্থিক সমস্যার কবল থেকে বাঁচার জন্য তখন অনেকেই তাদের আদি পেশায় ফেরার কথা ভাববেন বলে তাঁর অভিমত। তিনি বলেন, "পরিস্থিতি হবে কবিতার 'এবার ফেরাও মোরে' উক্তির মতো। মানুষ আবার কৃষির দিকে চলে আসবে। পৃথিবীও নতুন করে কৃষি পণ্য উৎপাদন, কৃষি পণ্যের বিকাশের দিকে ফিরে যাবে। এর ফলে কৃষি পণ্য নির্ভর শিল্পের বিকাশ হবে। এতে করে যারা অনেক হাইটেক জিনিস, অনেক বিলাশবহুল, দামি ডিভাইস, দামি ঘড়ি, দামি গাড়ি কেনে, তারা সেই দিকের ব্যয় সঙ্কোচন করতে বাধ্য হবে। তবে, বিশ্বের একটি অংশের মানুষ দুর্ভিক্ষের মধ্যে পতিত হওয়ার ঝুঁকি থাকছে। বাড়বে বেকারত্ব, দারিদ্র ও ক্ষুধা।"

তিনি বলেন, "আমি মোটা দাগে মনে করি, আসন্ন মন্দায় বিশ্বে খারাপের পাশাপাশি ভালোও হবে। আমি বলছি না খারাপের চেয়ে ভালো বেশি হবে। তবে খারাপ প্রভাবের মতো ভালো প্রভাবও থাকবে।"

প্রফেসর পারভেজ বলেন, "আমেরিকার অধিকাংশ সম্পদ ১% লোকের হাতে, বাংলাদেশর অধিকাংশ সম্পদ ৩-৪% লোকের হাতে। এটাই হচ্ছে পৃথিবীর চিত্র। এই একশ বা একহাজার বিলিয়নিয়ার বা ১০০ ট্রিলিয়নিয়ারের হাতেই পৃথিবীর প্রায় সব সম্পদ পুঞ্জিভূত। পরিস্থিতির অভিঘাতে এই বিন্যাসেও পরিবর্তন হবে। অর্থাৎ নতুন করে পালাবদল হবে আর্থিক স্তর বিন্যাসে। বড় বড় বিলিয়নিয়াররা গবীর হয়ে যাবে। কেউ কেউ সুইসাইড করবে। আবার এর মধ্যে কেউ কেউ বুদ্ধি খাটিয়ে টাকা আয় করবে। এখানে শুধু ব্যক্তির কথা বলছি না। আমি বিভিন্ন দেশ ও জাতির কথা বলছি। যেমন: আমেরিকানরা লন্ডভন্ড অর্থনীতির দুর্দশা ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকেও এসব মাড়িয়ে চলে যাবে। ক্ষতিগ্রস্থ হবে তারা, যারা যতটা সম্পদশালী ছিল, তার থেকে বেশি বেশি দেখিয়েছে। তারা এই ক্রান্তিকাল ঠেকাতে পারবে না। কারণ, এই বাড়তি ব্যয়ের জন্য তারা প্রস্তুত ছিল না। ফলে আমাদের নীতিনির্ধারকদের আগাম অপচয় রোধ, ব্যয় সঙ্কোচন ও কৃচ্ছ্বতার প্রতি বিশেষ মনোযোগী হয়ে সম্ভাব্য আর্থিক বিপদ উত্তরণে এখন থেকেই নীতি ও কর্মসূচিগত সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে।"

এ সম্পর্কিত আরও খবর