কথিত বাংলাদেশি ‘বিলিওনিয়ার’ডাবলু চৌধুরীর আসল পরিচয় পাওয়া গেছে!

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 09:49:38

ইতালির ভেনিসে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে ভাইরাল হওয়া ‘কথিত’ বিলিওনিয়ার ডাবলু চৌধুরীর আসল পরিচয় পাওয়া গেছে! কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমে ‘কে এই বাংলাদেশি বিলিওনিয়ার’ বলে ডাবলু চৌধুরীর যে পরিচয় দেয়া হচ্ছে, বার্তা২৪.কমের অনুসন্ধানে তার পুরো সত্যতা মেলেনি। ভেনিসে ইলেকট্রিক মোটর গাড়ি কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়ে হৈ চৈ ফেলে দেয়া ডাবলু চৌধুরী আসলে বাংলাদেশের একজন সাধারণ ব্যবসায়ী! যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক বছর থাকলেও তিনি বাংলাদেশের বাসিন্দা, তাঁর বিদেশি নাগরিকত্বের কোন প্রমাণ মেলেনি। এমনকি তার বাড়ি সিলেটে নয়, কুষ্টিয়ায়। কুষ্টিয়া, পাবনা ও সুইজারল্যান্ডে লেখাপড়া করা ডাবলু চৌধুরী প্রবাসী ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সংগ্রহের আওতায় সবুজ জ্বালানির গাড়ি কারখানার বিনিয়োগ সম্ভাবনা যাচাই করে বিদেশে ঘুরে ফিরছিলেন। এরই মধ্যে তথাকথিত বিলিওনিয়ার হওয়ার খবর বেরিয়েছে!

খবরে প্রকাশ, ইতালির ভেনিসে এপসিলন মোটরস ইনৃকপ্রায় এক বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দেয় সম্প্রতি।এই কোম্পানির চেয়ারম্যান ডাবলু চৌধুরী। এতে এই বাংলাদেশি বিলিওনারের কে এবং তার অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। জমি ও ইউটিলিটির সুযোগ পাওয়া গেলে গাড়ি কারখানার পাশাপাশি লিথিনিয়াম ব্যাটারি কারখানাও স্থাপন করা হবে বলে এসপিলনের প্রস্তাবে রয়েছে। এতে প্রবাসী বাংলাদেশীসহ এক হাজার মানুষের চাকরির ব্যবস্থা হবে। এই প্রস্তাবের আলোকে মিলানে অবস্থিত বাংলাদেশ কনসাল অফিসের সহায়তা নেয়া হয়। এই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে প্রকাশিত ডাবলু চৌধুরীকে বিলিওনিয়ার হিসাবে উল্লেখ করে মিডিয়ায় খবর চাউর হয়।গণমাধ্যমে নানা রকম খবর প্রকাশিত থাকার প্রেক্ষিতে বার্তা২৪.কম প্রকৃত তথ্য জানতে নিবিড় অনুসন্ধান করে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডাবলু চৌধুরীর জন্ম কুষ্টিয়া শহরে। তার বাবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী অবসর গ্রহণ করেন। তিনি কয়েক বছর আগে মারা যান। দু্ই বোনের পর ডাবলু চৌধুরী পিতার একমাত্র পুত্র। কুষ্টিয়া শহরের জেলখানা মোড়েতাদের দুটি ত্রিতল দালান রয়েছে। পঞ্চাশোর্ধ বয়সের ডাবলু দীর্ঘদিন ঢাকায় থাকেন। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করার পর প্রবাসী হওয়ার লক্ষ্যে  সুইজারল্যান্ডে পাড়ি জমান এবং সেখানে লেখাপড়া ও চাকরি করেন। পরে আবার দেশে ফিরে এটিএন বাংলা ও চ্যানেল আইয়ের সঙ্গে যুক্ত হন। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নানা পর্যায়ে ওঠ বসের সুবাদে ডাবলু চৌধুরী নানা রকম ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেন। এর আগে তিনি এভিয়েশন, নির্মাণ, বিদ্যুৎ ইত্যাদি খাতে অংশীদারি ব্যবসার চেষ্টা করেন। ২০০৭ সালের দিকে ডাবলু চৌধুরী স্লোভাকিয়ান এয়ারলাইন্সের জিএসএ নিয়ে এসে এভিয়েশন ব্যবসারও চেষ্টা করেছিলেন।

জানা গেছে, ডাবলু চৌধুরী ডরোথি চৌধুরীকে বিয়ে করে কিছুদিন ঢাকায় বসবাস করেন। পরে স্ত্রীর উচ্চতর পড়াশুনার জন্য ২০০৮ সালে লন্ডনে পাড়ি জমান। ২০০৯ সালে লন্ডনে তাঁদের একমাত্র পুত্রের জন্ম হয়। কয়েক বছর পর  লন্ডন থেকে দেশে ফিরে তিনি ঢাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যের চেষ্টা চালান।স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের উদ্দেশে ২০১৫ সালে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমান তিনি। ক্যালিফোর্নিয়ায় বাড়িভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন বলে একটি সূত্র জানায়। ও্ই সূত্রমতে, স্ত্রীর ইচ্ছে অনুযায়ী ২০২১ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাসের জন্য আসেন এবং লন্ডনের ইলফোর্ড এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। তাঁর স্ত্রী ও সন্তান বর্তমানে যুক্তরাজ্যেই বসবাস করছে।

জানা গেছে, ডাবলু চৌধুরী ২০২২ সালে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানির প্রবাসী ও বিদেশি নাগরিকদের একত্রিত করে এপসিলন মোটর কোম্পানি গঠন করে এই কোম্পানির চেয়ারম্যান হন। যুক্তরাষ্ট্রের দিলওয়ারে রাজ্য থেকে এর রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ করা হয়।কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৌরভ মোহাম্মদ প্রবাসী বাংলাদেশি ও  বিশ্বখ্যাত মোটর কোম্পানিতে কাজ করার অভিজ্ঞ সম্পন্ন। এপসিলনের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, এর পরিচালনা পর্ষদে মিসেস ঝ্যাং ইয়ানমেই, ট্রিসিয়া ব্রাউন প্লাঞ্জ ও আফজাল আনসারী প্রমুখ দেশি বিদেশি উদ্যোক্তরা রয়েছেন। তবে এখনও একটি ঝকঝকে ওয়েবসাইট, কোম্পানির প্যাড এবং বিদেশি ও প্রবাসী কিছু অভিজ্ঞ ব্যক্তিই এই কোম্পানির পুঁজি করে ধারণা করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই কোম্পানির পক্ষে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে ডাবলু চৌধুরী এ বছরের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদার রেনো, লাসভেগাস, দুবাই, ক্যালফোর্নিয়ার লসএঞ্জেলেস, ইথিওপিয়ার আদিসআবাবা, জার্মানি, পর্তুগাল, হাঙ্গেরি ভ্রমণ করেন। একই প্রস্তাব নেভাদার রেনো ও লাসভেগাসেও দেয়া হয়। মাস দুয়েক আগে ঢাকা থেকে জনাব চৌধুরী আফ্রিকা হয়ে ইতালিতে যান বলে জানা যায়।

এ নিয়ে ডাবলু চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে বার্তা ২৪.কম। তিনি ইতালির বের্গামো শহরে আছেন বলে জানা যায়। অনলাইনে ডাবলু চৌধুরী এ প্রতিবেদককে জানান, এপসিলন মোটর্স ইনক এর আওতায় কারখানা স্থাপনে বিভিন্ন দেশে জায়গা খোঁজার খবর ঠিক। এতে আমাদের এক টাকাও বিনিয়োগ নেই, আমাদের এতো বিপুল অর্থও নেই। কোম্পানির প্রাথমিক অর্থের যোগান দিচ্ছে মোটরগাড়ি তৈরিতে আগ্রহী ও অভিজ্ঞ প্রবাসী এবং বিদেশি উদ্যোক্তাগণ। প্রকল্প প্রস্তাবের বিনিয়োগ আসার কথা ভেঞ্চার ক্যাপিটালের আওতায় নতুন ও উদ্ভাবনী শিল্পে মূলধন লগ্নীকারীদের কাছ থেকে। বিশ্ব জুড়ে ব্যবসা বাণিজ্যে এভাবেই বিনিয়োগের যোগান হয়। তিনি বলেন, আমাদের কোম্পানির স্লোগান হচ্ছে, এপসিলন শুধু কোম্পানি নয়, লাগসই জ্বালানিতে সবুজ পৃথিবীর স্বপ্ন। বাংলাদেশি হিসাবে আমার  মেধা, নানা দেশের অভিজ্ঞতা বিনিয়োগ করেছি মাত্র! আমাদের প্রস্তাবটি গ্রীন হাউজ গ্যাসের বিপরীতে টেকসই পৃথিবীর জন্য ইতিবাচক বলে মনে করি। এর বিপরীতে গণমাধ্যমে অনাকাঙ্খিত ও আজগুবি তথ্য ভেসে বেড়াচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর