একটি সেতু বদলে দিতে পারে হাজারো কৃষকের ভাগ্য

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী | 2023-08-26 21:45:17

একটি সেতু বদলে দিতে পারে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির দুটি ইউনিয়নের হাজারো কৃষকের ভাগ্য। সেতু না থাকার কারণে অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বলিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ও বহরপুর ইউনিয়নের এ সকল কৃষক। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়রা বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দফতরে একটি সেতুর দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট দফতর।

কয়েক বছর ধরে স্থানীয়দের অর্থায়নে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে উৎপাদিত কৃষিপণ্য,গবাদিপশু ও পাওয়ার ট্রাক্টর পারাপার করে আসছেন তারা। বর্তমানে বাঁশের সেই সাঁকোটিও ভেঙে যাবার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন দুই ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক।

সরেজমিন বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের খামারমাগুরা-হাতিমোহন খালে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক বছর আগে স্থানীয়দের তৈরি বাঁশ দিয়ে নির্মিত সেই সাঁকোটি ভেঙে গিয়েছে। খালের দুই কিলোমিটার এলাকার কৃষকদের কৃষিপণ্য পারাপারের একমাত্র ভরসা বাঁশের এই সাঁকোটি।

জামালপুর-কোলারহাট সড়ক থেকে নটাপাড়া বাজারের ইটের রাস্তা ধরে করিম শেখের বাড়ি। সেখান থেকেই শুরু বিস্তর মাঠ। সেখান থেকে সরু রাস্তা দিয়ে যেতে হয় হাতিমোন-খামারমাগুরা খালে। খালের পূর্ব পাশে জামালপুর ইউনিয়ন। খাল পার হয়ে পশ্চিমপাশে বহরপুর ইউনিয়ন।

২০১৯ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড এই খাল খনন করে। সারা বছরই খালে পানি থাকে। দুই ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষকের জমি রয়েছে খালটির উভয় পাশে। ফলে কৃষিপণ্য ও কৃষিযন্ত্র পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। সেতুর অভাবে জামালপুর ইউনিয়নের কৃষক তাদের পাওয়ার ট্রাক্টর নিয়ে বহরপুর ইউনিয়নে নিজ জমিতে যেতে পারছেন না। আবার খাল পাড়ি দিয়ে উৎপাদিত ফসল আনা-নেওয়া করতে চরম বিপাকের মধ্যে রয়েছে।

নটাপাড়া গ্রামের কৃষক মধু হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, খালের ওপাড়ে আমার অনেক জমি রয়েছে। সেতু না থাকার কারণে আমাদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাঁশের যে সাঁকোটি আমরা দিয়েছিলাম সেটিও পচে ভেঙে গিয়েছে। যার কারণে এখন আমার মতো অনেক কৃষক রয়েছেন চরম দুঃচিন্তায়। খালটি অনেক গভীর বলেও তিনি জানান।

আরেক কৃষক জাকির হোসেন বলেন, আমাদের ব্লক ছিল খালের ওপার। কত কষ্ট করে খাল পার হতে হয় শুধু আমরাই জানি। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল খালের মাঝে গলাপানি দিয়ে এপার-ওপার করেন। এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার কৃষকের ভাগ্য বদলে যাবে।

বহরপুর ইউনিয়নের কৃষক যতিশ মন্ডল বলেন, আমাদের একটিই সমস্যা। আর তা হলো সেতু। আসলে এখানে একটি সেতুর অনেক দরকার। কৃষকদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে একটি সেতুর খুব প্রয়োজন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্ষার সময় এখানে ফসল হয় না। শুস্ক মৌসুমে পেঁয়াজ, রসুন, গমসহ বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন করা হয়। কৃষকদের খাল পার হতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করতে হয়। সবাইকে খালের পানিতে ভিজে এপার-ওপার করতে হয়। এরপর ভেজা পোশাকে সরু পথ ধরে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসল গন্তব্যে নিয়ে যায়।

দায়িত্বরত উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. আকরাম হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমি এই ইউনিয়নের কৃষকদের নিয়ে কাজ করি। বাংলাদেশে কৃষকদের জন্য যদি একটি সেতুর প্রয়োজন হয়, সেটি হবে খামারমাগুরা-হাতিমোহন খালের সেতু। যত দ্রুত এখানে সেতু নির্মাণ করা হবে তত উপকৃত হবেন এখানকার কৃষকেরা।

এ ব্যাপারে বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, বিষয়টি আমি অবগত আছি। কয়েক বছর আগে আমি সেখানে নিজেই গিয়েছিলাম। চেষ্টা করছি ওখানে একটি সেতু নির্মাণ করার। আশা করছি খুব দ্রুতই বাস্তবায়ন করতে পারব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর