আমন ধানের চেয়ে উৎপাদন ও পুষ্টিগুণ বেশি ‘বেগুনি’ ধানে

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর | 2023-08-25 06:25:08

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর আলী হাসান গ্রামের কৃষক সিরাজ উদ্দিন ৪০ শতাংশ জমিতে চলতি আমন মৌসুমে বেগুনি রংয়ের ধান চাষ করেছেন। এ ধান অপরিচিত। তবে অন্যান্য ধানের চেয়ে উৎপাদন বেশি হয়েছে।

ফলে এ ধানের সুনাম আশপাশের কৃষকেদর মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। বেগুনি ধান চাষাবাদে অনেক কৃষকই আগ্রহ প্রকাশ করেছে। 

সম্প্রতি কৃষক সিরাজ তার জমির ধান কেটেছেন। কাটা ধান মাড়াই করে বেশিরভাগ অংশই বীজ হিসেবে রাখবেন। বাকীটা নিজেই চাল করে ভাত রান্না করে খাবেন। তার ইচ্ছে- পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ব্যতিক্রমী এ ধানের বীজ সবখানে ছড়িয়ে দিতে। 

কৃষক সিরাজ উদ্দিন বলেন, বেগুনি রংয়ের ধান চাষে অন্যান্য আমন জাতের ধানের মতই খরচ হচ্ছে। তবে এ ধানের উৎপাদন অন্য ধানের চেয়ে বেশি হয়েছে। তাই আগামীতেও এ ধানের চাষ করবো। আশপাশের অনেক কৃষক আমার কাছ থেকে ধানের বীজ চেয়েছে। বীজ সংগ্রহ করে সেগুলো অন্য কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করব। 

তিনি বলেন, শখের বশে এ ধানের চাষ করা। ধানের গুণাগুণ নিয়ে আগে তেমন কিছু জানতাম না। এখন শুনি এ ধানে নাকি অনেক পুষ্টি রয়েছে। একদিকে পুষ্টি, অন্যদিকে উৎপাদনও ভাল হয়েছে। তবে সম্প্রতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় চিত্রাংয়ের কবলে পড়ে ধানের ফলনে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। ঝড়ো বাতাসের কারণে কিছু ধান চিটা হয়ে গেছে। তা-না হলে ফলন আরও বেশি হতো। 

কৃষক সিরাজ বলেন, তার জামাতা ধানগুলো সংগ্রহ করেছে তার জমিতে লাগানোর জন্য। কিন্তু পানির অভাবে তিনি সেগুলো লাগাতে পারেননি। তাই সেগুলোর চাষ আমি নিজেই করেছি। 

চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলা শ্রাবণ মাসে বীজতলায় বীজ বপন করি। একমাস পর চারা রোপন করি। প্রতি গোছায় দুটি-তিনটি চারা লাগিয়েছি। এখন দেখি একেকটি গোছায় ১২-১৪ টি ধান গাছ হয়েছে। এ ধানের শীষ অনেক লম্বা। ধানগুলো মাঝামাঝি আকারের। ধানের পাতা সবুজ রংয়ের হলেও ধানগুলো বেগুনি রংয়ের। চালও বেগুনি। অন্যান্য আমন জাতের ধানের মতোই সার ওষুধ ব্যবহার করেছি। শ্রমও কম লেগেছে। এতে বাড়তি কোন খরচ করতে হয়নি। 

তিনি আশা করছেন, প্রতি শতাংশে একমন করে ধানের উৎপাদন হবে। কিন্তু অন্যান্য জাতের আমন ধান আরও কম উৎপাদন হয়। 

সিরাজ উদ্দিনের জামাতা কৃষক আজাদ হোসেন বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে এ ধানের সন্ধান পাই। এক বন্ধুর সাহায্যে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকা থেকে ৭০০ টাকা কেজি ধরে তিনকেজি ধান আনিয়েছি। সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নিজের জমি ধান চাষের উপযোগী না হওয়ায় আমার শ্বশুরকে দিয়েছি। তিনি ধানগুলোর চাষ করেছেন। ফলন ভাল হয়েছে। এ ধানের চাষাবাদ আমাদের এলাকার জমির জন্য উপযুক্ত বলে মনে হচ্ছে। 

তিনি জানান, চীন থেকে এ ধানের বীজ বাংলাদেশে আসে। এগুলো পুষ্টিকর ধান হিসেবেই জানেন। তাদের এলাকায় অন্যকোন কৃষক এ ধানের চাষাবাদ করেনি। তবে আগামীতে চাষাবাদের জন্য অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

চর চরুহিতা এলাকায় কৃষক জয়নাল আবেদীন বলেন, ধানগুলো দেখতে সুন্দর। ফলনও ভালো হয়েছে। আগামীতে আমিও পরীক্ষামূলকভাবে এ ধানের চাষ করব। সেজন্য কৃষক সিরাজের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করব। 

লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. জাকির হোসেন বলেন, বেগুনি রংয়ের ধান চাষ সম্পর্কে আমাদের কাছে তেমন কোন তথ্য নেই। বিক্ষিপ্তভাবে কোন কোন কৃষক হয়তো চাষাবাদ করতে পারে। 

এদিকে বেগুনি রংয়ের ধান সম্পর্কে তথ্য নিলে,  জার্নাল অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড কেমিস্ট্রির একটি গবেষণার বরাত দিয়ে মার্কিন স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম মেডিকেল নিউজটুডে জানিয়েছে, বেগুনি রঙের চালের ভাতে হৃদরোগ, ক্যান্সার ঝুঁকি কমাতে পারে এবং মানুষের লিভার সতেজ রাখে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর