৩৭ বছর বয়সে গোলাপীর দাখিল পাস

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-26 17:11:15

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার গোলাপী বেগম এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ৩৭ বছর বয়সে দাখিল পাশ করেন। তিনি এবার কুড়িগ্রাম কামিল আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.৯৩ পেয়েছেন। সোমবার দুপুরে দাখিল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে গোলাপী বেগমের বাড়ি ও তাঁর কর্মস্থলে হইচই পরে যায়।

গোলাপী বেগমের বাড়ি কুড়িগ্রাম সদরের তালতলা গ্রামে। তিনি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের একজন ভাতাপ্রাপ্ত কর্মচারী। পরীক্ষার ফলাফল শিট ও জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর জন্ম তারিখ ৩ মার্চ ১৯৮৫ সাল। তাঁর বর্তমান বয়স ৩৭ বছর। ২০০২ সালে তিনি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর বাড়িতে গিয়ে আর পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি গোলাপী। তার স্বামীর নাম লুতফর রহমান। তিনিও কুড়িগ্রাম পৌরসভার একজন ভাতাপ্রাপ্ত কর্মচারী।

সংসারের অভাবের কারণে ২০১৬ সালে গোলাপী বেগম  কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে ভাতাপ্রাপ্ত কর্মচারী হিসাবে কাজ শুরু করেন। কলেজে কাজ শুরু করার পর তিনি শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারেন। তিনি দেখেন তার থেকে কম বয়সের অনেক কর্মচারী লেখাপড়ার জোড়ে তার থেকে ভাল জায়গায় কাজ করছে। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা মো. নাসির উদ্দিনের অনুপ্রেরণায় তিনি আবার পড়ালেখা শুরু করেন। তারপর ২০২০ সালে তিনি কুড়িগ্রাম কামিল আলিয়া মাদ্রাসায় ভোকেশনাল কোর্সে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ২০২২ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি দাখিল পাশ করেন।

পরীক্ষায় পাশের অনুভুতি কেমন জানতে চাইলে গোলাপী বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ফলাফলের দিন সকাল থেকে মনটা ছটফট করতেছিল। আমি কলেজে ছিলাম, কলেজের ইংরেজি বিভাগের কম্পিউটার এ আমার রোল দিয়ে জানতে পারি আমি পাশ করেছি। এই বয়সে এসেও যে আমি পাশ করতে পারবো ভাবতে পারি নাই। আমার খুব ভাল লাগছে। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ স্যারের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব হতো না। ভবিষ্যতে আরো পড়তে চান কিনা এমন প্রশ্নে তিনি জানান, কলেজ থেকে যদি চাকুরীতে কোন বাধা না আসে তবে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও মাস্টার্স সম্পন্ন করার তার।

গোলাপী বেগম জানান, আমার পাশ করায় স্বামী খুব খুশি। আমার ছেলে ঢাকায় থাকে আমার জন্য একটা জ্যাকেট(শীতের পোষাক) কিনে কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠিয়েছেন।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে জানান, গোলাপী বেগম এই কলেজের ভাতাপ্রাপ্ত কর্মচারী। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় তার বিয়ে হয়ে যায় শুনেছি। কিন্তু তার পড়ালেখার প্রতি আগ্রহের কথা জানতে পেরে আমি তাকে উম্মুক্ত কোর্সে ভর্তি হয়ে আবার পড়ালেখা করবার পরামর্শ দেই। ২০২২ সালের দাখিল পরীক্ষায় সে ৪.৯৩ পেয়ে পাশ করেছে। গতকাল তার পাশের সুখবর শুনে কলেজের পক্ষ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা দিয়েছি। সে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে কলেজ তার পাশে থাকবে।

কুড়িগ্রাম কামিল আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. নুর বখত জানান, ৪০ বছর বয়সের যে কোন শিক্ষার্থী ভোকেশনাল শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেন। এ বছর কুড়িগ্রাম কামিল আলিয়া মাদ্রাসায় ভোকেশনাল কোর্সে ৪৭ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩১ জন পাশ করেছে। গোলাপী বেগম তাদের একজন। তার রেজাল্ট ভোকেশনাল কোর্সে সবার থেকে ভাল। সে আগামী দিনে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে সফল হোক, আমরা সেই দোয়া করি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর