গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। পাশাপাশি গ্যাসের দাম একবারে না বাড়িয়ে ক্রমান্বয়ে বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। একই সঙ্গে সংগঠনটি শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তাও চেয়েছে।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের কাছে পৃথক চিঠিতে এমন শঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন তৈরি পোশাক খাতের রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান।
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়াই শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হবে উল্লেখ করে বিজিএমইএর চিঠিতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অত্যধিক বৃদ্ধিতে শ্রমিকেরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়বে এবং শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হবে। এতে করে সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার শঙ্কা রয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে দাবি করা হয়, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক ঋণের সুদের হারও বেড়ে গেছে এবং সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে। এই অবস্থায় তৈরি পোশাকশিল্পকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়াই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, তৈরি পোশাকশিল্প বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে তৈরি পোশাক রফতানির মাধ্যমে দেশের মোট রফতানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশ অর্জিত হচ্ছে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের প্রায় ৪ কোটি মানুষ এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া টেরিটাওয়েল, বস্ত্রশিল্প, অন্যান্য খাতসহ অর্জিত হয় প্রায় ৮৮ শতাংশ।
আরও বলেছে, অনিয়মিত বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের কারণে পোশাক কারখানাগুলোতে উৎপাদন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তার মধ্যেও সরকার ১২ জানুয়ারি গ্যাসের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর কিছুদিন পূর্বে বিদ্যুতের খুচরা মূল্যও বৃদ্ধি করা হয়। এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে ইতিমধ্যেই কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে এবং একই সাথে পোশাক উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
আগামী এক বছরের জন্য আমদানি করা জ্বালানি পণ্যে কাস্টমস ট্যাক্স ও ভ্যাট প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে বিজিএমইএর চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে একসাথে এত মূল্যবৃদ্ধি না করে ক্রমান্বয়ে সহনীয় পর্যায়ে বৃদ্ধি করা হলে পোশাক উৎপাদন খরচ ও মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেতে পারে।