দেশের সামুদ্রিক সীমানায় বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য আহরণ, মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা, পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারিতে ছোট আট হাজার ২০০ ফিশিং বোটে যুক্ত করা হয়েছে ভেসেল ট্রাকিং সিস্টেম। এছাড়াও বড় জাহাজের জন্য ১৫০০টি ট্রাকিং সিস্টেম আমদানি করা হয়েছে। যা ছাড় করণের অনুমতি চেয়ে বিটিআরসির কাছে আবেদন করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে নিবন্ধিত ১০ হাজার নৌযানে ট্রাকিং সিস্টেম যুক্ত করে পরীক্ষামূলক পরিচালনা করা হবে। ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় কাজ শেষ হয়েছে। সফটওয়্যার ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এখন আমরা সমুদ্রে ট্রাকিং সিস্টেম যুক্ত জাহাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। অচিরেই এ প্রক্রিয়াটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচলক খ মাহবুবুল হক।
তিনি বার্ত২৪.কম-কে বলেন, ভেসেল ট্রাকিং সিস্টেম যুক্ত করার জন্য ইতিমধ্যে সকল কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। তবে অন্য মাছ ধরা জাহাজগুলোতেও ট্রাকিং সিস্টেম যুক্ত করতে বাধ্য করা হবে। ফলে এক জায়গা থেকে সকল বোট মনিটরিং বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
খ মাহবুবুল হক বলেন, আমরা চাই দেশের সকল মাছ ধরা ট্রলার ও বোটগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকুক, যাতে করে চোরাই শিকারি আমাদের জলসীমায় ঢুকতে না পারে। পাশাপাশি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমাদের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্রগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত এলাকায় নিজেদের তদারকির মাধ্যমে মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে কাজ চলছে।
তিনি বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভেসেল ট্রাকিং সিস্টেম যুক্ত করার পাশাপাশি এগুলো পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।
সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক মনিষ কুমার মন্ডল বার্তা২৪.কম-কে বলেন, জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত প্রকল্পে সামুদ্রিক একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলে মৎস্য জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে চিংড়ি, তলদেশীয় এবং ভাসমান প্রজাতির মৎস্যের মজুদ নিরূপণ কর্মসূচি জোরদারকরণ; সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং গবেষণা সংস্থার সামর্থ্য বৃদ্ধিপূর্বক বিজ্ঞানভিত্তিক টেকসই মৎস্য মজুদ, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন; বাণিজ্যিক ও ক্ষুদ্রায়তন মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নে অধিকতর কার্যকর পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি (এমসিএস) পদ্ধতির বাস্তবায়ন; উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, সার্ভিস সেন্টার, মৎস্য বাজর উন্নয়ন, আহরিত ও উৎপাদিত মৎস্যের ভ্যালু চেইন তৈরি, গুণগতমান উন্নয়ন, অপচয় হ্রাস, উপকূলীয় জেলা সমূহে ক্লাস্টার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির সম্প্রসারণ ঘটিয়ে বাগদা চিংড়ির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও চিংড়ি রফতানি বৃদ্ধি করা; দরিদ্র মৎস্যজীবী জনগোষ্ঠির নেতৃত্বে উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই সহ-ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা এবং বিকল্প জীবিকায়নে সহায়তা করা; উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই আহরণ ব্যবস্থাপনায় ‘সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করা হবে।
উপ প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, জুন মাসে ছোট ফিশিং বোটের (১ থেকে ১৩ গ্রস টন) ৮৫০০টিকে গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশন (জিএসএম) যুক্ত করার অংশ হিসেবে ৮২০০টিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। মিডিয়াম ও বড় বোটের (৪০ থেকে তদুর্ধ্ব গ্রস টন) ১৫০০টিকে অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেমে (এআইএস) যুক্ত করা হবে। যা বিটিআরসির অনুমোদন শেষে যুক্ত করা হবে। এগুলো প্রকল্পে মাধ্যমে বিনামূল্যে দেয়া হবে।
এছাড়া বাকি সমুদ্রগামী মাছ ধরা নৌযানে নিজ খরচে ভেসেল ট্রাকিং সিস্টেম যুক্ত করতে হবে। প্রতিটি জিএসএম এর জন্য ব্যয় হবে প্রায় ২০ হাজার টাকা এবং এআইএস এর জন্য ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ হবে।