লাল-সবুজ পতাকার ঢেউ আছড়ে পড়েছিল সেদিন

ময়মনসিংহ, জাতীয়

উবায়দুল হক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 14:57:12

পর্যুদস্ত হয়েছিল পাক হানাদাররা। ভোরের আলো ফোটার আগেই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছিল শত্রু সেনার দল। অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা হটিয়ে দিয়েছিল ওদের।

এখানকার মুক্তি পাগল দামাল ছেলেরা ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে আসতে শুরু করল। শুরু হল মুক্তিকামী জনতার বিজয় মিছিল। সবার অনিবার্য ঠিকানা হয়ে উঠল ময়মনসিংহ শহরের সার্কিট হাউজ মাঠ।

সবার কণ্ঠে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান। অতঃপর মুক্ত হল ময়মনসিংহ। অনেক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল-সবুজ পতাকার ঢেউ চারদিকে আছড়ে পড়েছিল সেদিন।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বরের দৃশ্যপট ছিল এমনই। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে এইদিন পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাত থেকে ময়মনসিংহকে মুক্ত করে যৌথভাবে মুক্তি বাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী সদস্যরা।

শত্রুমুক্ত হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা ময়মনসিংহ শহরে প্রবেশ করে সার্কিট হাউস মাঠে পতাকা উত্তোলন করে স্বাধীন বাংলাদেশের। এরপরই শুরু হয় বিজয় মিছিল। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন ভারতীয় মিত্র বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সান সিং বাবাজি ও তৎকালীন যুবশিবিরের প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। তিনি সদ্য অব্যাহতি পাওয়া ধর্মমন্ত্রী।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ১১ নম্বর সেক্টরের এফ. জে মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ১৩ রাজপুত রেজিমেন্ট ও ৯৫ ব্রিগেডের ৫৭ মাউন্ট ডিভিশন যৌথভাবে ময়মনসিংহ অঞ্চলে অবস্থানরত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনা করে।

পরে মুক্তিবাহিনী সীমান্তঘেষা উপজেলা হালুয়াঘাট দিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে দিশেহারা পাক বাহিনীর সদস্যরা টিকতে না পেরে পিছু হটে। ৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানিরা প্রথমে ফুলপুর ও পরবর্তীতে তারাকান্দা, শম্ভুগঞ্জ ও ময়মনসিংহ শহর ছেড়ে টাঙ্গাইল জেলার ভেতর দিয়ে ঢাকায় পালিয়ে যেতে শুরু করে।

তবে পাক সেনারা পালিয়ে যাওয়ার আগে স্থানীয় রাজাকার ও আল বদরদের সহায়তায় অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে তারা। এছাড়াও ময়মনসিংহ-ভৈরব হয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে রেল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম শম্ভুগঞ্জ ব্রিজটি ধ্বংস করে দিয়ে যায়।

এই অবস্থায় ওইদিন সন্ধ্যা থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা একে একে ব্রহ্মপুত্রের অপর পাড় শম্ভুগঞ্জে এসে জড়ো হতে থাকে। এই খবর পেয়ে ময়মনসিংহ শহরের আনাচে কানাচে থাকা অবশিষ্ট পাকহানাদার বাহিনী ১০ ডিসেম্বর ভোর রাতের মধ্যে তাদের সর্বস্ব নিয়ে পালিয়ে যায়। এতে করে পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হয় ময়মনসিংহ।

ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে এ খবর গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়লে মুক্তিকামী ময়মনসিংহবাসীর মধ্যে বইতে শুরু করে আনন্দের বন্যা। পরে সার্কিট হাউজ মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ময়মনসিংহকে আনুষ্ঠানিকভাবে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয়।

মুক্ত দিবসের স্মরণীয় এ দিনটি আনন্দঘন পরিবেশে পালন করতে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যৌথভাবে সাত দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর নগরীর ছোটবাজার মুক্ত মঞ্চে নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় এবারো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর